ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

নড়াইলে যুবককে বিদেশে পাঠিয়ে প্রতারণার অভিযোগ, মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৪৬, অক্টোবর ২, ২০২৫
নড়াইলে যুবককে বিদেশে পাঠিয়ে প্রতারণার অভিযোগ, মামলা শিমুল ও তার পরিবার

নড়াইল: মাছ চাষ আর কৃষি কাজ করে মোটামুটি ভালোই চলছিল শিমুলের সংসার। তবে বছর তিনেক আগে পানিতে মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন তিনি।

ডুবতে থাকেন দেনার দায়ে। সংসার চালানোর জন্য অন্যের মাছ মোটরসাইকেলে করে নড়াইল, নোয়াপাড়া, যশোরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা শুরু করেন। তাতেও যেন কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না।  

নিজে ভালো থাকতে এবং পরিবারকে ভালো রাখতে সুদে টাকা নিয়ে, জমি বন্ধক রেখে ও মোটরসাইকেল বিক্রি করে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। তবে ভাগ্য সহায় না হওয়ায় পাননি কাঙ্ক্ষিত চাকরি। বর্তমানে অবৈধ হয়ে মরুভূমিতে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।  

ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে সুন্দর জীবনযাপনের আশা করেছিল পরিবার। কিন্তু সেই আশা আজ গলার কাঁটা হয়ে আছে সবার কাছে। বিদেশে কাঁদছেন শিমুল আর বাড়িতে কাঁদছেন তার বাবা-মা ও স্ত্রী। এ বিষয়ে দালালদের সঙ্গে বার বার কথা বলেও কোনো লাভ হয়নি। গ্রাম্য সালিশও হয়েছে একাধিকবার। তবু সমাধান না হওয়ায় শিমুলের মা পারভীন বেগম বাদী হয়ে দালাল খাইরুল ও শরিফুলকে আসামি করে নড়াইল মানবপাচার ও প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। ট্রাইব্যুনাল আগামী ২২ অক্টোবর পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীরা আইনের আওতায় আসুক- এটাই ভুক্তভোগী পরিবারের প্রত্যাশা।

বুধবার (১ অক্টোবর) বিকেলে নড়াইল সদর থানার বিছালী গ্রামে শিমুলদের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, জাফর শেখের ছেলে শিমুল শেখ (৩৫) চলতি বছরের মে মাসের ২৪ তারিখ ভাগ্য বদলের স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমায়। এর আগে ঘেরের জমি বন্ধক রেখে নিজের মোটরসাইকেল বিক্রি করে সুদে টাকা নিয়ে পাঁচ লাখ টাকা একই গ্রামের খোরশেদ মোল্লার ছেলে খাইরুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলামের হাতে তুলে দেন। সরকারি স্ট্যাম্পে চুক্তি হয় আকামা করে নির্দিষ্ট কোম্পানিতে ১৮০০ সৌদি রিয়াল বেতনে ড্রাইভার পদে কাজ দেওয়া হবে। অন্যথায় ক্ষতিপূরণসহ সমস্ত টাকা ফেরত দেবে। তবে শিমুলের পরিবারের অভিযোগ, চুক্তি অনুযায়ী কাজ দেওয়া হয়নি। এমনকি খেতেও দেওয়া হয়নি। আকামা (কাজের অনুমতি) করতে দালালদের দিতে হবে অতিরিক্ত টাকা।  

শিমুলের মা পারভীন বেগম কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছেলে খাইরুল ও শরিফুলের প্রলোভনে পড়ে সব খুইয়ে বিদেশে গেছে। কিন্ত কথা মতো কাজ দেয়নি। আকামা করে দেয়নি, এমনকি খাইতেও দেইনি। আমরা গত চার মাসে ৭০ হাজার টাকা পাঠাইছি। বারবার তাদের বলেও কোনো প্রতিকার পাইনি। উল্টো ৫০ হাজার টাকা দাবি করছে আকামা করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের দেওয়ার আর কিছু নেই। আমারা দিতে পারিনি বলে আমার ছেলেকে নির্যাতন করেছে। বাধ্য হয়ে মামলা করেছি। এখন মামলা করার জন্য আবার তারা আমাদের হুমকি দিচ্ছে।  অন্যতম অভিযুক্ত খাইরুল

শিমুলের বাবা জাফর শেখ বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশে পাঠায় আমার ছেলের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তারা। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার গ্রামে সালিশ হয়েছে। সেখানে খাইরুল ও শরিফুল কাজ দেওয়ার জন্য ১০ দিন করে সময় নেয়। বারবার এ রকম করেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তারা কারোর কথা মানে না। দুই মাস ধরে পরিবার নিয়ে শুধু আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছি।

শিমুলের স্ত্রী রানী বেগম বাংলানিউজকে বলেন, দালালদের চাহিদা মতো ৫০ হাজার টাকা দিতে পারিনি বলে আমার স্বামীকে নির্যাতন করেছে। তিনদিন একটা পাঁচতলা ভবনের ছাদে ময়লার মধ্যে রেখেছে। বাধ্য হয়ে পরে একজনের সহযোগিতায় ১০/১২ দিন আগে সেখান থেকে পালিয়ে বর্তমানে মরুভূমিতে অবস্থান করছে আমার স্বামী। সে সেখানে কাঁদে আমরা বাড়িতে কাঁদি। জানি না কপালে কি আছে। এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।  

শিমুলের প্রতিবেশীরা জানান, এ ঘটনায় কয়েকবার গ্রাম্য  সালিশ ও থানায় অভিযোগ দিলেও তারা মানেনি। এ নিয়ে দুই পক্ষেরই অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ রয়েছে। তবে আমরা শিমুল বিদেশে যেন ভালো থাকে, সেটা চাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত খাইরুলের সঙ্গে কথা হয় মোবাইল ফোনে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তাদের (শিমুলের পরিবার) কোনো অভিযোগই সঠিক নয়। চুক্তি অনুযায়ী তাকে কাজ দেওয়া হয়েছে এবং আকামার ম্যাসেজ ও শিমুলের ফোনে আসছে। তাকে ড্রাইভার হিসেবে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে গাড়ি চালাতে পারেনি। সেজন্য ওই কাজ সে পায়নি। এটা কি আমাদের দোষ? পরে অন্য একটা কোম্পানিতে কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই কাজে তার কষ্ট হয়, তাই ওখান থেকে পালিয়ে গেছে। বর্তমানে যেখানে আছে, সেটাও আমার এক আত্মীয়র কাছে। ভালোই কাজ করছে। প্রতিদিন ১১০ রিয়াল করে পাচ্ছে।  

এরপর তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোম্পানি থেকে কেউ পালিয়ে গেলে কি তার আকামা ওই কোম্পানি করে দেয়? আসল কথা হলো সে ভয়ে গাড়ি চালাতে পারেনি বলে পালিয়েছে। এখন দোষ দিচ্ছে আমাদের। এখন আমাদের গ্রামের এক দালাল ওদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আমার নামে বিভিন্ন নিউজ করাচ্ছে। ওই দালাল আমার কাছে টাকা চায়। দেইনি বলে এসব করছে। উল্টো বলছে, আমরা নাকি টাকা চেয়েছি। এসব মিথ্যা কথা।  

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যশোর পিবিআইয়ের উপ পরিদর্শক (এসআই) মহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গুরুত্ব দিয়েই মামলার তদন্ত কাজ চলছে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত বলতে পারব।

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।