যশোর: বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে ‘আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, এক জঘন্য অপরাধ ও মহাপাপ’-এ স্লোগানকে সামনে রেখে যশোরের মনিরামপুরে জনসচেতনতামূলক সমাবেশ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) মনিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বসুন্ধরা শুভসংঘের বন্ধুরা সমাবেশ ও শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
মনিরামপুর উপজেলা বসুন্ধরা শুভসংঘের উপজেলা সভাপতি এসএম হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান আকাশের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন- প্রভাষক কামরুজ্জামান, আল মাহমুদ, মো. রিপন আলী, মো. রাশেদুল ইসলাম, মো. ইসরাফিল হোসেন, মো. টিটন হোসেন, দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি মোহাম্মদ বাবুল আকতার, শিক্ষার্থী মালিহা মেহনাজ বিভাসহ অনেকে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আত্মহত্যা মানবসমাজের জন্য এক ভয়াবহ ব্যাধি, যা কেবল ব্যক্তির জীবনকেই কেড়ে নেয় না বরং পরিবার ও সমাজে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। এটি কোনো সমস্যার সমাধান নয়, বরং এক জঘন্য অপরাধ এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একটি মহাপাপ।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, তখন সে মনে করে এটি তার সব সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান তো নয়ই, বরং এটি নতুন সমস্যার জন্ম দেয়। একজন আত্মহননকারী ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেলেও তার পরিবার এবং প্রিয়জনদের জন্য রেখে যায় আজীবনের এক অসহনীয় কষ্ট ও শোক। আর্থিক, মানসিক, সামাজিক—সব দিক থেকেই তারা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে।
বক্তারা বলেন, প্রায় সব ধর্মেই আত্মহত্যাকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে আত্মহত্যাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা, আয়াত ২৯)।
বক্তারা আরও বলেন, জীবন স্রষ্টার দান এবং এটি কেড়ে নেওয়ার অধিকার মানুষের নেই। আত্মহত্যার পেছনে হতাশা, বাইপোলার ডিজঅর্ডার-এ ধরনের মানসিক রোগ অন্যতম প্রধান কারণ। পারিবারিক কলহ, বিচ্ছেদ, নির্যাতন, অথবা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্নতা ব্যক্তিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। বেকারত্ব, ঋণের বোঝা, ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে ব্যর্থতা অনেক সময় মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। পরীক্ষায় খারাপ ফল, পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপ অথবা উচ্চাশার চাপ অনেক শিক্ষার্থীকে হতাশায় ভোগায়। প্রেমে ব্যর্থতা, প্রতারণা অথবা বিচ্ছেদ তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ায়। সাইবার বুলিং, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, সমাজের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়া বা অপমানের শিকার হওয়াও আত্মহত্যার কারণ হতে পারে। দুরারোগ্য ব্যাধি বা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক যন্ত্রণাও অনেক সময় ব্যক্তিকে হতাশ করে তোলে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব, পারিবারিক সহায়তা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা গেলে অনেক ব্যক্তি হতাশা থেকে মুক্তি পেতে পারে।
আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, এটি একটি জঘন্য অপরাধ এবং মহাপাপ। জীবন সৃষ্টিকর্তার এক অমূল্য উপহার, আমাদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গ বাঁচতে শিখিয়েছে। আসুন, আমরা সবাই মিলে আত্মহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই এবং হতাশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই। প্রতিটি জীবন মূল্যবান, এবং তা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার, বলেন বক্তারা।
এসআই