ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

জরাজীর্ণ বাংলাদেশের বাস্কেটবল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৬
জরাজীর্ণ বাংলাদেশের বাস্কেটবল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: একটি খেলার কি অবস্থা অর্থাৎ খেলাটি কতটুকু ভালোভাবে চলছে বা কতটুকু যত্নে আছে সেটা বোঝার উপায় হলো সেই খেলাটির মাঠ, কোর্ট বা টার্ফ। আপনি সেখানে গিয়ে দাঁড়ালে খুব সহজেই বুঝে যাবেন কতটুকু ভালো হালে আছে ক্রীড়াটি।

সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ বাস্কেটবল ফেডারেশন দেখতে গিয়েছিল বাংলানিউজ এর ক্রীড়া বিভাগ। কিন্তু সেখানে গিয়ে স্বচক্ষে যা দেখা গেলো, তাতে অবাক হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। আমি নিশ্চিত আপনি জানলেও অবাক হবেন।
 
রাজধানীর আবাহনী ক্লাবের ঠিক পেছনে একই সীমানার মধ্যে অবস্থিত বাংলাদেশ বাস্কেটবল ফেডারেশন। ফেডারেশনের জায়গাটি আবাহনী ক্লাবের বলে জনশ্রুতি আছে। যাই হোক, সেখানে প্রবেশ করে প্রথমেই ধাক্কা খেতে হলো বাস্কেটবলের কোর্ট দেখে। বেশ পুরোণো, জীর্ণ-শীর্ণ কাঠের কোর্টটির জায়গায় জায়গায় ভেঙে গেছে। যেন ‍নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে আছে।  

আর কোর্টের উজ্জ্বলতা? সেটা আবার কি? হ্যাঁ, আপনিও আমার মতো একই প্রশ্ন তুলবেন যদি ভুল করেও কোর্টে গিয়ে একবার দাঁড়ান।
 
বাস্কেটবলে আদর্শ কোর্টের যে ধারণা এখানে তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। বল ড্রিবলিং করাতে যে মসৃণ ও চকচকে কোর্টের প্রয়োজন সেটা এখানে নেই। আর সেটা না থাকলে স্বাভাবিকতা হারায় বাস্কেটবল।

প্লেয়ার যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে থ্রি শট গুলো নিয়ে থাকেন, কোর্টের পূর্ব দিকের সেই জায়গাটিও ভেঙে গেছে।
 
তবে আশার কথা হলো দীর্ঘ আট বছরের এই ভঙ্গুর অবস্থা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সুনজরে এসেছে। তারা কোর্ট মেরামতের জন্য টেন্ডার দিয়েছেন এবং অনতিবিলম্বেই কাজ শুরু হবে বলে জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফেডারেশন কর্মী।
 
এতো গেল কোর্ট। কোর্ট থেকে কিছুটা পশ্চিম দিকে যেতেই চোখে পড়লো একটি কক্ষের দিকে। জিজ্ঞেস করতেই সেই কর্মী জানালেন এটি মিডিয়া কক্ষ।
 
আর মিডিয়া কক্ষে গিয়ে মনে হলো সুদীর্ঘকাল এখানে কারও পায়ের ছাপ পড়েনি। অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে থাকা কক্ষটি থেকে কেমন ভেজা ভেজা একটি গন্ধ নাকে এসে লাগছিল।

কক্ষের ভেতরে একটি স্টিলের আলমারির উপর মিডিয়াকর্মীদের আপ্যায়নের জন্য গাদিগাদি কাগজের মধ্যে রাখা কাপ ও চিনির পাত্র দেখে মনে হলো নূন্যতম পরিচ্ছন্নতাবোধ এখানে অনুপস্থিত।
   
মিডিয়া কক্ষ থেকে ঘুরে কোর্টের একেবারে পূর্বে গিয়ে দেখা গেল একটি রশি টানিয়ে কেউ জামা-কাপড় শুকাতে দিয়েছেন। আর সেখানে দেয়ালের গায়ে কিছু বাঁশ রেখে দিয়েছেন। এই বাঁশগুলো এখানে কেন? এমন প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তরই পাওয়া গেল না।
বাঁশ থেকে সরে উত্তরে ঘুরতেই দেখা গেল বহুদিনের অযত্নে থাকা কাঁচের দরজায় আটকানো একটি কক্ষ। ভেতরে উঁকি দিতেই বুঝতে বাকি থাকলো না এটি জিমনেশিয়াম। নামেই জিমনেশিয়াম, কাজে হলো স্টোর রুম।
 
নতুন ও পুরোণো ভাঙা কাঠের স্তুপের দৌরাত্বে জিমনেশিয়ামের কিছুই বাকি নেই। রানিং ও ওয়েটলিফ্টিংয়ের জন্য কেনা যন্ত্রপাতিগুলো সেই কাঠের ভিড়ে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। আর জিমনেশিয়ামের গ্লাসগুলো শোভা পাচ্ছে খোলা অবস্থায় মেঝের উপরে।  

ভাবতে কিছুটা কষ্টই হলো ক্রীড়ান্নয়নের এই যুগে ক্রীড়া দিয়েই যেখানে এক একটি দেশ বয়ে আনছে বিরল সম্মান সেখানে এদেশের বাস্কেটবলের এমন জরাজীর্ণ দশা! কি করে চলবে লাল-সবুজের বাস্কেটবল? কোনোভাবেই কি এই সংকট উত্তরণ সম্ভব নয়?

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬
এইচএল/এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।