ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

কক্সবাজারে সপ্তাহজুড়ে বিচ কার্নিভাল

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
কক্সবাজারে সপ্তাহজুড়ে বিচ কার্নিভাল

কক্সবাজার: কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টে শুরু হচ্ছে সাত দিনব্যাপী মেলা ও বিচ কার্নিভাল।  

‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ এ প্রতিপাদ্যে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এ কার্নিভালকে ঘিরে চলবে নানা আয়োজন।

ইতোমধ্যে মেলাকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের কক্সবাজারমুখী করতে থাকা খাওয়া, কেনাকাটা, যাতায়াত, বিনোদন ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট সেবাগুলোতে বিশেষ ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে তৈরি করা হচ্ছে মেলার মঞ্চ ও দুই শতাধিক স্টল।  

জেলা প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির উদ্যোগে গত বছর থেকে সৈকতে পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালের আয়োজন করা হচ্ছে।  

মেলার প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলামসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ও এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের প্রসারে আয়োজন।

তিনি বলেন, এ মেলায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট সেবা এবং কক্সবাজারের পর্যটনস্পটগুলো তুলে ধরা হবে।

পর্যটন মেলার আহ্বায়ক ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, মেলাকে ঘিরে হোটেল-মোটেল মালিক ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট  ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি জানান, মেলা উপলক্ষে হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় থাকবে। রেস্তোরাঁগুলোতে ১৫ শতাংশ, সব বাস ভাড়া ২০ শতাংশ, সাগরে ভাসানো টায়ার টিউব ভাড়া ৩০ শতাংশ, কিট কট (ছাতা-চেয়ার) ভাড়া ৩৩ শতাংশ, ফটোগ্রাফারদের মাধ্যমে ছবি তোলা প্রতি কপি দুই টাকা, প্যারাসাইলিং রাইড ৩০ শতাংশ, জেটস্কি ও বিচ বাইক ৩৩ শতাংশ, লকার ভাড়া ৫০ শতাংশ, গাড়ি পার্কি ৫০ শতাংশ, ফান গেমে ৫০ শতাংশসহ নানা ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে।  

এছাড়া বিনামূল্যে সার্কাস শো দেখার ব্যবস্থা আছে বলেও জানান তিনি।

জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠান সূচিতে জানানো হয়েছে, মেলার আগে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিনই সকাল ১০টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী চলবে সৈকত এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। এর মধ্যে ২৫ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা।

২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হবে। শোভাযাত্রাটি সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে পুনরায় লাবণী পয়েন্টে শেষ করা হবে।

এরপর সাড়ে ৯টায় উদ্বোধন হবে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল। সকাল পৌনে ১০টায় থাকছে বৃক্ষরোপণ ও আলোচনা সভা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট হতে মহেশখালী জেটি পর্যন্ত চলবে নৌ-র‌্যালি।
 
এছাড়াও প্রতিদিন সার্কাস প্রদর্শনী, বিচ বাইক র‍্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে শো, আতশবাজি, রোড শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, বিচ ম্যারাথন, বিচ ভলিবল, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান এবং কনসার্ট। মেলায় পর্যটক ও দর্শনার্থীদের বিনোদনে রাখা হয়েছে বিনামূল্যে সার্কাস প্রদর্শনী।
 
সংগীত অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীর পাশাপাশি দেশের জনপ্রিয় শিল্পীরা গান গাইবেন। এবার যোগ দেবেন কুষ্টিয়া লালন একাডেমি ও সিলেট আঞ্চলিক ভাষার শিল্পীরা।  

এছাড়াও সুনামগঞ্জ থেকে আগত শিল্পীরা পরিবেশন করবেন হাসন রাজার গানসহ আঞ্চলিক ভাষায় নানা গান। ময়মনসিংহ থেকে মহুয়া পালা, কুড়িগ্রাম থেকে ভাওইয়া গানের শিল্পীরা আসবেন।  

বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি থেকে আসবেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পীরা। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক গানের খ্যাতিমান শিল্পী ও জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা প্রতিদিন বিকেলে দর্শকদের পছন্দের গান শোনাবেন।  
 
চলতি মাসের শুরু থেকে কক্সবাজারে পর্যটকের আনাগোনা বেড়েছে। টানা তিন দিনের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটক সমাগম হবে।

হোটেল মালিকরা বলছেন, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অফসিজন ধরা হয়। অক্টোবর থেকে বৃষ্টি ও গরম কমে সাগরও শান্ত হয়ে আসে তখন পর্যটক সমাগম বাড়ে।  
কক্সবাজার শহরে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলে দেড় লাখের ওপরে পর্যটক রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।  

বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে হোটেল মোটেল, কটেজ ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতি পর্যটকদের আকর্ষণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।  
  
কক্সবাজার হোটেল- মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, পর্যটন দিবস উপলক্ষে হোটেল কক্ষে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। পর্যটন মেলা চলাকালীন সময় পর্যন্ত এছাড় চলবে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘টানা ছুটি ও পর্যটন মেলা উপলক্ষে পর্যটক সমাগম বাড়বে। এজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বাড়ানো হবে। ট্যুরিস্ট পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে থাকবেন সাদা পোশাকধারী পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে কক্সবাজার ভ্রমণ ও পর্যটন মেলা উপভোগ করতে পারেন তার জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতও মাঠে কাজ করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
এসবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।