ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

আম খেতে জানে না চাঁপাইয়ের মানুষ!

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৩ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৮
আম খেতে জানে না চাঁপাইয়ের মানুষ! আম খেতে জানে না চাঁপাইয়ের মানুষ! ছবি: বাংলানিউজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে: শিরোনাম পড়ে কেউ হয়তো বলবেন ‘মায়ের সঙ্গে মাসির গল্প করছেন’। সমালোচকরা হয়তো বলবেন ‘ঘরের খবর পরে জানবে কীভাবে’। পশ্চিমবঙ্গের আমরাজ্য মালদাহঘেঁষা এ অঞ্চলের মানুষ নিয়ে এ মন্তব্য হতেই পারে। কিন্তু খোদ যদি ম্যাঙ্গো সিটি চাঁপাইয়ের মানুষ একথা বলেন তাহলে অন্যরা চোখ ছানাবড়া করে তাকানো ছাড়া আর কী করবেন! ঘটনা এমনই বৈকি!

গত দু’দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, শিবগঞ্জ, সোনা মসজিদ, চাঁপাই সদর প্রর্ভতি এলাকা ঘরে সব শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে কথা বলে যে কথা অনেকখানি সত্য বলে মানতে হয়, সেটা চাঁপাইয়ের মানুষ আম খেতে জানে না। বিরুদ্ধমত নেই যে তা নয়, তবে যুক্তির কাছে সেটা টেকা মুশকিল।

আর খেতে জানে না মানে চাঁপাইবাসীকে ছোট করা নয়, তারা কেন আমের অনেক পদ তৈরি ও খাওয়ার কথা ভাববে সেটা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট যুক্তি। আম খেতে জানে না চাঁপাইয়ের মানুষ! ছবি: বাংলানিউজচাঁপাইনবাবগঞ্জের সিংহভাগ মানুষের বছর কেমন যাবে তা নির্ধারণ করে দেয় আশ্বিন থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস। এ সময়ে আম ধরা থেকে শুরু করে পাকা শুরু হয়। ফলন কেমন হলো, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর কেমন আম টিকলো, দাম পাওয়ার সম্ভাবনা কেমন সবই নির্ধারণ হয়ে যায় এসময়। আর আম বিক্রি থেকে কি পরিমাণ অর্থ উপার্জন হলো তা থেকে নির্ভর করে গোটা বছর কেমন চলবে।

তাই আম শুধু খাওয়ার জন্য পছন্দের একটি ফল নয়, এখানে আম মানে জীবন-জীবিকা। যার সঙ্গে জীবন-জীবিকা জড়িত হয়ে যায় তাকে মানুষ শ্রদ্ধা করে ভালোবাসে দেবদূতের মতো। চাঁপাইবাসীর কাছেও তাই। আম চাষ ও ব্যবসাটা এ অঞ্চলের মানুষের কাছে রুটি-রুজির প্রধান উৎস। অবহেলার সুযোগ নেই তাই। বছরের অন্য সময়ে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ-লালিত্যে যত্ন-আত্তি করেন তারা।
আমরা জানি, শুধু কাঁচা আম দিয়েই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হরেক পদের খাবার তৈরি হয় কিংবা কাঁচা আম বিভিন্ন প্রসেসে খাওয়া হয়। কাঁচা আমের শরবত, ভর্তা, কুচিয়ে মাখিয়ে খাওয়া, ডাল কিংবা তরকারিতে দিয়ে খাওয়া, মোরব্বাসহ বিভিন্ন পদ বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু চাঁপাইবাসী আম খাওয়া মানেই মনে করে পাকা আম। আমের বাত্তি না হলে গাছ থেকে সচরাচার কেউ আম পাড়ে না। সে যতো ছোট শিশুই হোক। এর প্রমাণ মেলে রাস্তার উপর একেবারে শিশু-দূরত্বে টিকে থাকা বড় বড় আম।

দ্বিতীয় কথা আমগাছ ও বাগানের পরিচর্যার জন্য প্রচুর সময় ব্যয় হয়। তাই বিভিন্ন পদ বানানোর সময়ও কম। বাড়িতে কেউ কেউ নিজেদের খাবারের জন্য কিছু পদ করলেও সেটা যেহেতু বাণিজ্যিকভাবে করার সুযোগ কিংবা লাভ কম তাই চাঁপাইবাসী এ থেকে বিমুখ। আম খেতে জানে না চাঁপাইয়ের মানুষ! ছবি: বাংলানিউজআমচাষি রবিউল আউয়াল, বারী, শামীম প্রমুখের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাঁচা আম কিংবা কাঁচা আম থেকে তৈরি বিভ্ন্নি খাবারের বাজার নেই। আবার উৎপাদনের জন্য যে পরিশ্রম হয় সেটার মূল্যও পাওয়া যায় না। আর সারাবছর এতো বেশি আমের মধ্যে থাকেন এ অঞ্চলের মানুষ যে আমের প্রতি বাইরের মানুষের যে আগ্রহ থাকে সেটা তাদের থাকে কম। তাদের কাছে দিনশেষে ব্যবসা ও রোজগারটাই বড়।

স্থানীয় বাসিন্দা, হামিদুল রশিদ প্রমুখের বক্তব্য একইরকম। তারা আম মানে পাকা আম খেতে পছন্দ করে, পাকা বিক্রি বোঝে। কাঁচা আম কখনও পেড়ে খান না বললেই চলে। ঝড়ে যে আম পড়ে সেটা দিয়ে আমচুর ছাড়া অন্য কিছু তৈরি করেন না। আর তৈরি করলেও উপযুক্ত দাম মেলে না পরিশ্রম অনুযায়ী। এজন্য কাঁচা দুটোতে এক কেজি হবে এমন আমও বাজারে মেলে মাত্র ৪- ৫ টাকা কেজিতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৮
এএ

সুন্দর আম মানেই ফ্রুটব্যাগিং, কার্বাইডে পাকানো নয়​

...

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।