সপ্তাহের শুক্র-শনিসহ সরকারি বন্ধের দিনগুলোতে পর্যটকদের ভিড় আরো বেশি। শুধু কক্সবাজার নয়, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী সি ট্রাকগুলোতে পড়েছে বাড়তি চাপ।
কক্সবাজার রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল ঝাউবনের স্বত্বাধিকারী মো. আলী বাংলানিউজকে জানান, অনেক আগেই এবারের পর্যটন মৌসুম শুরু হলেও নির্বাচনের আগে ও পরে প্রায় একমাস কক্সবাজারে আশানুরূপ পর্যটক সমাগম হয়নি। সেই খরা কাটিয়ে এখন কক্সবাজারে আবার পর্যটক আসা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনগুলোতে লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হচ্ছে। যে কারণে রেস্টুরেন্ট, হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউজগুলোতেও বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে।
তিনি জানান, কক্সবাজারের চার শতাধিক আবাসিক হোটেল ও রেস্টহাউসে সোয়া লাখের বেশি মানুষের রাতযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। তাই উন্নত থাকার ব্যবস্থা তো আছেই, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো থাকায় লোকজন এখন নির্বিঘ্নে কক্সবাজার ভ্রমণে আসছেন, আর স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, সারা বছরই কক্সবাজারে পর্যটকের আনাগোনা থাকে। তবে পর্যটন মৌসুমে কিংবা শীতকালে পর্যটকের সমাগম বাড়ে। এবার নির্বাচনের কারণে কিছুদিন খারাপ অবস্থা গেলেও জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পর্যটকদের আগমন অনেকটা বেড়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, কর্পোরেট হাউস ও বিনোদনপ্রিয় মানুষ শিক্ষাসফর-পিকনিক-কনফারেন্সসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আড়ালে সপরিবারে কক্সবাজারে বেড়াতে আসছেন। আবার কিছু পর্যটক ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ হয়ে সেন্টমার্টিন চলে যাচ্ছেন। তবে বেশিরভাগ পর্যটকই ঘুরছেন শহরের আশেপাশের পর্যটন স্পটগুলোতে।
জানা যায়, বিশেষ করে ইনানী, হিমছড়ি ও টেকনাফসহ সমুদ্র তীরবর্তী মেরিন ড্রাইভে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। অন্যদিকে চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মেদাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্ক, রামু বৌদ্ধ মন্দির, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরসহ শহরের বাইরের অন্যান্য পর্যটনগুলোতে এখন পর্যটকের ভিড় চোখেপড়ার মতো।
ঢাকার মালিবাগ থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা সৌমিক রহমান বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের যে বিশালতা, এখানে হাজার বার আসা হলেও সমুদ্র দেখার তৃপ্তি মিটবেনা। সবমিলে দারুণ পরিবেশ, আমরা খুব এনজয় করছি।
সমুদ্র তো সমুদ্রই। এর মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত আমার কাছে মনে হয় অনন্য সুন্দর। তাই সুযোগ পেলেই বাবা-মাকে কক্সবাজার আসার জন্য বিরক্ত করি। এভাবেই বললেন ঢাকা সিটি কলেজের ছাত্রী মারুফা আকতার।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক বাংলাদেশ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনের আগে ও পরে মানুষ একটু আতঙ্কে ছিলো। ফলে প্রায় একমাস কক্সবাজারে আশানুরূপ পর্যটক ছিলো না। কিন্তু এখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত। তাই চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে কক্সবাজারে ধীরে ধীরে পর্যটক বাড়তে শুরু করে। পর্যটকদের আসা যাওয়ার এ চাপ আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে আশা করেন তিনি।
তিনি জানান, পর্যটকদের চাপে গত কয়েকদিন ধরে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী ৫টি জাহাজে কোনো সিট খালি নেই।
হোটেল কক্স-টুডের পরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে কক্সবাজারে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। আমরাও পর্যটকদের ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্ঠা করছি। বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে বিভিন্ন অফারের প্যাকেজও চালু করেছে। আশা করছি ভালো স্মৃতি নিয়েই পর্যটকরা কক্সবাজার থেকে ফিরে যাচ্ছেন।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার ফখরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, কক্সবাজার শহরের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট যেখানে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি সেসব স্পটগুলোতে চব্বিশ ঘণ্টা পুলিশি নজরদারি রয়েছে। এছাড়া মেরিন ড্রাইভসহ আশপাশের পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এমনকি সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদেরও নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সেবা দিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮,২০১৯
এসবি/জেডএস