ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

ঈদে সবুজে ঘেরা জয়নুল উদ্যানে ঘুরে বেড়ানোর রেওয়াজ!

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৪ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৯
ঈদে সবুজে ঘেরা জয়নুল উদ্যানে ঘুরে বেড়ানোর রেওয়াজ! শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান।

ময়মনসিংহ: ঈদের ছুটিতে চাই চিত্তবিনোদন। আজকাল অনেকেই অবকাশ যাপনে ছুটেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে। ময়মনসিংহেও এমন ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, যারা ঈদের ছুটি কাটাতে বেছে নেন বিভিন্ন গন্তব্য। এর মধ্যে জেলার জয়নুল উদ্যানকেই গন্তব্য হিসেবে বেছে নেন অনেকেই।
 

ময়মনসিংহ মহানগরে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে লোকারণ্য থাকে জয়নুল উদ্যান। নগরীর সার্কিট হাউজ ময়দান সংলগ্ন সাহেব কোয়ার্টার পার্কের নতুন নাম জয়নুল উদ্যান।

ব্রক্ষপুত্র নদীর পাড়ে এটিই মানুষের চিত্তবিনোদন কেন্দ্র।

ঈদের দিন সেখানে দিনভর থাকে হাজারো মানুষের পদচারণা। উৎসবে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এ পার্কে আসা স্থানীয়দের রেওয়াজ। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনের পাশে ব্রক্ষপুত্র পাড়ে সবুজ প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা জয়নুল উদ্যানটি কাচারিঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত। যার পাশেই রয়েছে সার্কিট হাউজ মাঠ।

নিরিবিলি, শান্ত ও মনোরম পরিবেশ, সারি সারি ছায়া দেওয়া বৃক্ষ আর নদীকে সামনে রেখে প্রিয়জনের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে এখানে আসেন সবাই। নগরবাসীর জীবনযাত্রার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে এ পার্কটি।  

ঐতিহ্যবাহী বিপিন পার্ক। স্বাস্থ্যসম্মত মানুষের কাছে যেমন সবুজে ঘেরা জয়নুল উদ্যানের আবেদন রয়েছে, তেমনি জীবন সংস্কৃতিতেও রয়েছে এর প্রভাব। ময়মনসিংহ পৌরসভা গঠনের আগেই ইংরেজ সাহেবদের আবাসিক এলাকার নিবিড় নিসর্গে গড়ে তোলা হয় এ পার্কটি।

প্রাচীন ইতিহাসেও সাহেব কোয়ার্টার পার্ক ও বিপিন পার্ক নগরীর ঐতিহ্য হিসেবেই পরিগণিত হয়েছে। যা এখনও নাগরিকদের ভীষণভাবে টানে।  

শুধু নগরবাসী নয়, আশপাশ বা দূর-দূরান্ত থেকে ময়মনসিংহে আসা লোকজনও সময় পেলেই একবার কিছু সময়ের জন্য জয়নুল উদ্যানে আসেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন, সরকারি ছুটির দিন বা কোনো উৎসবে প্রাণের টানে মানুষ এসে ভিড় জমায় এই পার্কে।  

পার্কের বেঞ্চে বসে কিংবা ব্রক্ষপুত্র পেরিয়ে ওপারের নির্জনতায় সময় কাটানোর মধ্য দিয়েই চলে নগরবাসীর ঈদ বিনোদন।

অন্যান্য ছুটির দিনের সঙ্গে ঈদের দিনের উৎসবের বেশ পার্থক্য রয়েছে। ঈদে সাজগোজ করা নারী-শিশুদের ফ্যাশন বৈচিত্র্যের নয়নাভিরাম প্রদর্শনী বিকেলের রঙকে করে দেয় বর্ণাঢ্য। জয়নুল উদ্যানের নামকরণের সঙ্গে সঙ্গে শতাব্দী প্রাচীন সাহেব কোয়ার্টার পার্কেরও আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে।  

টানা সাড়ে নয় বছর ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র থাকাকালে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু শহরে বিউটিফিকেশনের যেসব উদ্যাগ নেয়, জয়নুল উদ্যান সেগুলোর মধ্যে বিশেষ দ্রষ্টব্য।

মূলত তিনিই এ উদ্যানটিকে নয়নাভিরাম রূপ দিয়েছেন। এখানে রয়েছে বৈচিত্র্যময় নানা বিনোদনে মেতে উঠার সুযোগ। এ উদ্যোনের ভেতরেই রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা ও বৈশাখী মঞ্চ।

চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানে রয়েছে ফোয়ারা ও ব্যায়ামাগার। স্টিলের পাইপের সীমানা প্রাচীর, পাকা স্ল্যাবের হাঁটার পথ আর ফুলের বাগান- সব মিলিয়ে অন্যরকম সুন্দর এ উদ্যান। এখানে তিনটি রেস্টুরেন্টসহ আছে ভাষা শহীদ মোস্তফা মতিন পাঠাগারও।  

বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরতে আসা শিশু-কিশোরদের জন্যও এ উদ্যান বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করে। তাদের জন্য রয়েছে- ম্যাজিক নৌকা, দোলনা, ট্রেনসহ স্পেশাল সব রাইড। আবার ঈদের সময়ে উদ্যানের প্রবেশ পথেই বসে চরকি ও নাগরদোলাসহ কত কী! ঘুরে বেড়ানো যায় ঘোড়ার গাড়ি টমটমে চড়েও।  

অবশ্য এসব রাইডের জন্য টিকিটের দামও সাধ্যের মধ্যেই। মাত্র ৩০ থেকে ৫০ টাকা গুণতে হবে টিকিটের জন্য। এ উদ্যানে একটি চিড়িয়াখানাও আছে। বৈশাখী মঞ্চের পাশে স্থাপিত এ চিড়িয়াখানাটিও টানছে সব বয়সী দর্শনার্থীদের। ঈদে এটি হয়ে উঠে লোকারণ্য।

সজারু, খরগোশ, ময়ূর, উটপাখি, ভালুক, বানর, হরিণ ও অজগর সাপসহ নানা প্রজাতির পশু-পাখি রয়েছে চিড়িয়াখানাটির অতিথির তালিকায়। এখানকার টিকিটের দামও মাত্র ৩০ টাকা।  

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বাংলানিউজকে বলেন, নগরবাসীর প্রত্যাশা ও জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জয়নুল উদ্যানকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়েছে। এ উদ্যান নগরবাসীর চিত্তবিনোদনের সুযোগ মেটাচ্ছে।

নগরীতে আরও আছে- টাউন হল মোড়, পাবলিক লাইব্রেরি, র‌্যাব-১৪’র অফিস, ঐতিহ্যবাহী টিটি কলেজ, জেলা প্রশাসকের বাসভবন আর সার্কিট হাউজ সংলগ্ন পার্ক ও এর পাশে রয়েছে ক্রীড়া পল্লী। আছে সাহিত্য সংসদ ভবনও। নগরবাসীর দাবি সেখানে সংস্কৃতি পল্লীও হবে।  

ব্রক্ষপুত্র নদীর ওপারেও ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া নদী রক্ষা বাঁধের মাধ্যমে পার্কটিও সুরক্ষিত রাখা হয়েছে। রয়েছে নিরাপত্তা বলয়ও। তবে সন্ধ্যার পর দশনার্থীদের পার্কে অবস্থান না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে প্রশাসনের।  

ঈদের দিন বা অন্যান্য দিনগুলোতেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষজন পার্ক থেকে বেরিয়ে আসেন। সব মিলিয়ে ময়মনসিংহের সংস্কৃতিতে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে জয়নুল উদ্যানের।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৯ 
এমএএএম/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।