ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

পর্যটন

নির্মল পরিবেশে নজরকাড়া সৌন্দর্যের বিপিন পার্ক

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৮ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৯
নির্মল পরিবেশে নজরকাড়া সৌন্দর্যের বিপিন পার্ক পার্কের প্রবেশ পথ। ছবি: বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: ছায়াশীতল ছিমছাম এক পরিবেশ। স্টিলের পাইপের সীমানা প্রাচীর, পাকা স্ল্যাবের হাঁটার পথ। ছোট এ পার্কে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর ছোঁয়া। পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। ছবির মতোই নজরকাড়া সৌন্দর্যের এ বিনোদন কেন্দ্রটির নাম বিপিন পার্ক।

সময়ের স্রোতধারায় ঈদ বিনোদনে সব বয়সী মানুষের কাছে পার্কটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ঈদ আনন্দ যেন এখানে উপচে পড়ে।

পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে নির্ভার আনন্দে মেতে উঠতে ঈদের দিন থেকে শুরু করে ছুটির দিনগুলোতেও এ বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় করেন নানা বয়সীর মানুষ।

ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল উদ্যানের অদূরেই ৮নং ওয়ার্ডের জুবলী ঘাটেই এ বিপিন পার্কের অবস্থান। এক সময় এ পার্কটি পড়ে ছিল অযত্নে-অবহেলায়। পার্কটিতে প্রবেশ করে অস্বস্তিতে পড়তেন নগরের বাসিন্দারা।

পার্কটিতে কয়েকটি ছোট-বড় গাছ ও দুই-চারটি পাকা বেঞ্চ ছাড়া বসার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনাতেও ছিল পরিপূর্ণ। এছাড়া রাতে মাদকসেবীদের নিরাপদ অভয়ারণ্যও হয়ে উঠে ছিল পার্কটি।

গত সাত বছর আগে ময়মনসিংহ পৌরসভার ওই সময়কার মেয়র ও বর্তমান সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু পার্কটিকে আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে পার্কটিকে নয়নাভিরাম হিসেবে গড়ে তোলেন।

ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী নুরুল আমিন কালাম বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় বিপিন পার্কটি ছিল নামে মাত্র একটি পার্ক। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে পার্কটি সংস্কারের দাবি উঠে। নগরবাসীর এ দাবি পূরণের মাধ্যমে পার্কটিকে আধুনিক ও মনোরম পরিবেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

ময়মনসিংহ নগরে ঐতিহ্যবাহী এ পার্কটিতে স্বাধীনতার আগে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের জন্য ব্যবহার করা হতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা ভাসানীসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সমাবেশে বিপিন পার্ক জনাকীর্ণ হতো। জয়নুল উদ্যানের মতোই নগরের শহর রক্ষা বাঁধের মাধ্যমে এ পার্কটিকে সুরক্ষিত করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ নগরের কমার্স কলেজের প্রিন্সিপাল এখলাছ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় ময়মনসিংহে বিনোদনের কোনো জায়গা ছিল না। ঈদে ঘুরে বেড়ানোর মতো পরিবেশ ছিল না বিপিন পার্কে। নগরবাসীর জন্য এ পার্কটিকে নতুনভাবে সাজিয়েছেন পৌর মেয়র।

নগরের বিপিন পার্কে প্রতি ঈদেই স্বজনদের নিয়ে ঘুরে বেড়ান স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আব্দুল জব্বার।  

তিনি বলেন, এ পার্কে এলে ব্রহ্মপুত্র নদও দেখা হয়। পাশাপাশি নদের বুকে ভেসে বেড়ানো পালতোলা নৌকা কিংবা নদের ওপারের চরের মানুষের জীবন-জীবিকার চিত্র চোখে পড়ে।

পার্কের ভেতরের ঝর্ণা চত্বর।  ছবি: বাংলানিউজ

নগরের কংগ্রেস জুবলী রোডের এ পার্কে শুরুর দিকে মাঝখানের জায়গায় ঝর্ণায় নয় ফুট উঁচু তিনটি কোরাল মাছ আকর্ষণ বাড়িয়েছিল বহুগুণ। এখন ফাইবারের তৈরি এ দৃষ্টিনন্দন মাছ উজ্জলতা হারিয়েছে।  

নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধ্যার পর জয়নুল উদ্যানে অবস্থান করার সুযোগ না থাকলেও এ পার্ক নিয়ে তেমন বিধি নিষেধ নেই। ফলে ঈদের দিনে সন্ধ্যার পরও এখানে স্বপরিবারে ঘুরতে আসেন অনেকেই।  

নগরের বাসিন্দারা জানান, ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে ছোট আকারের এ পার্কটি। নগরবাসীদের ঘুরতে যাওয়ার অন্যতম এ স্থানে সবাই মেতে উঠেন ঈদ আনন্দের উচ্ছ্বাসে।  

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ভিশন ২০২৫ এর আলোকে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র একটি সুন্দর ও তিলোত্তমা শহর গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জয়নুল উদ্যানের মতোই এ পার্কটি সংস্কার, উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে।  

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (এমসিসি) মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ আনন্দকে স্মরণীয় করে রাখতে ছুটির এ সময়টাতে বিপিন পার্কে সব বয়সী মানুষের মিলন মেলা হয়। বছরের অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতেও ভ্রমণ  পিয়াসুদের ভিড়ে মুখর থাকে পার্কটি। এবারের ঈদেও নগরবাসীকে পরিপূর্ণ আনন্দ দিতে পার্কে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৮ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৯ 
এমএএএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।