পলাশীর প্রান্তরে মীর জাফরের বেঈমানিতে পরাজয় বরণের পর নানা ঘটনার পরিক্রমায় হত্যা করা হয় নবাব সিরাজউদ্দৌলাকেও। পরে তাকে সমাহিত করা হয় মুর্শিদাবাদের ভাগীরথী নদীর ওপারে খোশবাগে, নানা আলী বর্দি খাঁর সমাধির পাশে।
নবাব আলী বর্দি খাঁ’ই নিজ সমাধির জন্য জীবদ্দশায় খোশবাগ প্রস্তুত করেছিলেন।
খোশ শব্দের অর্থ আনন্দ ও বাগ শব্দের অর্থ বাগান। অর্থাৎ খোশবাগের অর্থ আনন্দ বাগান। এর সুরক্ষার জন্য চতুর্দিকে উঁচু প্রাচীর বেষ্টিত করা হয় এবং নানা ধরনের মনোরম পুষ্পবৃক্ষাদি রোপণ করা হয়। খোশবাগে উঁচু পাথর বাঁধানো কবরে শুয়ে আছেন নবাব আলী বর্দি খাঁ। তার বাম পাশে রয়েছে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সমাধি।
অনেকগুলো সমাধির মধ্যে কেবল নবাব আলী বর্দি খাঁর কবর সবচেয়ে বড় ও উঁচু এবং নবাব সিরাজ উদ্দৌলার কবরের পাশে পাথরে খোদাই করে নাম লিখে আলাদা করা আছে।
সিরাজ উদ্দৌলার পাশেই তার ভাই মির্জা মেহেদী, সিরাজ উদ্দৌলার পায়ের দিকে তার স্ত্রী বেগম লুৎফা ও সঙ্গী আলেয়ার সমাধি রয়েছে।
একই সঙ্গে খোশবাগে শুয়ে রয়েছেন নবাব আলী বর্দি খার কন্যারা, নবাব সিরাজ উদ্দৌলার পরিবারের সদস্যরা, নবাব সিরাজ উদ্দৌলাকে হত্যাকারী মোহাম্মাদী বেগ, ইতিহাস খ্যাত গোলাম হোসেন, সিরাজ উদ্দৌলাকে ধরিয়ে দেওয়া মাঝি ও তার পরিবারবর্গও।
রয়েছে পরবর্তীতে ঢাকা, পাটনা ও অন্যান্য জায়গায় অবস্থানরত সিরাজ উদ্দৌলার আত্মীয়-স্বজন, যাদের দাওয়া দিয়ে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের কবরও।
খোশবাগে রয়েছে একটি মসজিদ। খোশবাগে অবস্থানকালে এই মসজিদে আলী বর্দি খাঁ নামাজ আদায় করতেন। চমৎকার নির্মাণ শৈলীতে গড়ে তোলা খোশবাগে মূল গেটসহ সাতটি ফটক রয়েছে।
কথিত রয়েছে, আলী বর্দি খাঁ খোশবাগে অবস্থানকালে এখানে বসেই ভাগীরথীর ওপারে মতিঝিলে বড় মেয়ে ঘষেটি বেগমের বাড়ি দেখতেন। এজন্য ফটকগুলো মতিঝিলের সোজাসুজি করে নির্মাণ করা হয়েছিল।
বলা হয়ে থাকে, সিরাজের মৃত্যুর পর তার প্রিয়তমা পত্মী লুৎফা বহুদিন ঢাকার জিনজিরা প্রাসাদে নির্বাসিত ছিলেন। পরে মুর্শিদাবাদে ফিরে এলে খোশবাগের দায়িত্ব তার অপর অর্পিত হয়।
তিনি ব্রিটিশ সরকার থেকে পাওয়া তার মাসিক বৃত্তির এক হাজার টাকা এবং নবাবগঞ্জের রাজস্বের ৩৫০ টাকা খোশবাগে ব্যয় করতেন। পরে লুৎফার মৃত্যুর পর তাকেও সেখানে সিরাজের পায়ের পাশে সমাহিত করা হয়।
এরপর ইতিহাস বিজড়িত খোশবাগ রক্ষণাবেক্ষণে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
মুর্শিদাবাদের স্থানীয় লেখক সুপ্রভা চক্রবর্তী তার মুর্শিদাবাদ পরিচিতি বইয়ে স্পষ্টভাবেই লিখেছেন, বর্তমানে অর্থাভাবে খোশবাগের শ্রী বিলুপ্ত হতে চলেছে। ঠিক একই বক্তব্য খোশবাগে ভ্রমণে যাওয়া দেশি-বিদেশি পর্যটকদেরও।
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া পর্যটক আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, নবাব সিরাজ উদ্দৌলা বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার অধিপতি ছিলেন। কিন্তু তার সমাধি রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা সৌন্দর্যবর্ধণে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। সমগ্র মুর্শিদাবাদের অন্যান্য স্থাপনাগুলো যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, খোশবাগকে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এটা দুঃখজনক। এতে হতাশ হতেই হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৯
এমএ/