ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

বাগেরহাটে বিনোদনের নতুন মাত্রা ‘ডিসি ইকো পার্ক’

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৯
বাগেরহাটে বিনোদনের নতুন মাত্রা ‘ডিসি ইকো পার্ক’ বাগেরহাটে নির্মিত হচ্ছে ডিসি ইকো পার্ক। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: অবসর সময় কাটানো, নির্মল বিনোদন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষণীয় বিষয় ও প্রকৃতির কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে বাগেরহাটে নির্মিত হচ্ছে ‘ডিসি ইকো পার্ক’।

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের লাউপালা গ্রামে পার্কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন সময়েই এলাকায় উৎসাহ ও আনন্দ বিরাজ করছে।

পার্কটি সদর উপজেলার যাত্রাপুর বাজার থেকে ২’শত মিটার দক্ষিণে রনবিজয়পুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস (যাত্রাপুর ও ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন) সংলগ্ন লাউপালা গ্রামে ভৈরব নদের দুই পাড়ে মোট ৯.৮০ একর সরকারি খাস জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে। অবস্থানগত দিক দিয়ে পার্কটি অনেক গুরুত্ব বহন করে। পার্কটি সদর উপজেলার যাত্রাপুর, বিষ্ণপুর ও বারুইপাড়া তিনটি ইউনিয়নের সীমানা ছুঁয়ে গেছে। পার্কের খুব কাছেই রয়েছে ঐতিহাসিক অযোদ্ধার মঠ। ৫ বা ৬ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদসহ খানজাহান আমলের কয়েকটি স্থাপনা। এর মধ্যেই রয়েছে জমিদারি আমলের পুরোনো একটি বাড়ি যা পার্কটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে দর্শনার্থীদের কাছে।

পার্কের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ওই জমিদার বাড়ি সংরক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাগেরহাটের বুক চিরে বয়ে চলা ভৈরব নদীর দু’পাড়ের এ পার্কে সকাল-বিকেল ভিড় জমান অনেকেই।
পার্কের ভেতরে আছে জমিদারি আমলের পুরোনো একটি বাড়ি।  ছবি: বাংলানিউজ
২০১৬ সালে জেলা প্রশাসনের পক্ষে সদর উপজেলা প্রশাসন ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা প্রাথমিক ব্যয় ধরে মূল কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে কিছু অংশের ভূমি উন্নয়ন, সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া, সুসজ্জিত গেট, পার্কের মধ্যে স্টেইনলেস স্টিলের হাতল ওয়ালা কংক্রিটের ওয়াক ওয়ে, রাস্তা ও পানির ফোয়ারার স্থাপনাও তৈরি করা হয়েছে।

নিয়মিত পার্কে হাঁটতে আসা যাত্রাপুর আদর্শ ক্যাডেট মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন সকাল বেলা পার্কে হাঁটি। নদীর পানি ও বিশুদ্ধ বাতাসে প্রাণ জুড়ে যায়। চারদিকে দূষণ আর কোলাহলে অসুস্থ মস্তিস্ক নিয়ে মানুষ এখানে এসে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারে।

পার্কে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী রোবায়েদ ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, স্কুল থেকে এসে আগে বাড়িতে বা দোকানের সামনে বসে সময় কাটাতাম। পার্কটি হওয়ার পরে এখানে এসে নদীর পাড়ে বসি। হাঁটাহাঁটি করি, খুব ভালো লাগে। পার্কটিকে আরও সুসজ্জিত করলে অনেক মানুষ আসতে পারতো এখানে।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শেখ আলিফ বাংলানিউজকে জানায়, এখানে আসলে তার খুব ভালো লাগে। রেলিং দেওয়া রাস্তায় দৌঁড়ানো ও বন্ধুদের সঙ্গে ইচ্ছামতো খেলাধুলা করা যায়। তাই স্কুল ছুটির পর এখানে চলে আসে সে।

রূপসা থেকে ঘুরতে আসা দম্পতি সাবরিনা ও রাজ্জাক বলেন, ছুটি পেলেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাই। বর্তমান সময়ে এ ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশ পাওয়া যায় না। পার্কটি আরও সুসজ্জিত করা প্রয়োজন।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোল্লা আব্দুল মতিন বাংলানিউজকে বলেন, পার্কটি যাত্রাপুর বাজার সংলগ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। পার্কের তেমন কোনো কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তারপরও এখানে প্রতিনিয়ত মানুষ ঘুরতে আসে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব পার্কটিকে পূর্ণাঙ্গরূপ দেওয়া হোক। পার্কটির দুই পাশকে যুক্ত করার জন্য নদীর উপর একটি ঝুলন্ত সেতু তৈরি করা প্রয়োজন। এটি করলে পার্কটি যেমন মনোমুগ্ধকর হবে তেমনি নদীর ওপারে পার্কের বাকি অংশে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারবে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তানজিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পার্কটির উন্নয়ন কাজ চলমান। ভূমি উন্নয়নসহ সার্বিক কাজের পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব কাজ সম্পূর্ণ করা হবে।

পার্কটিতে যেভাবে যাবেন- বাগেরহাট ট্রাফিক মোড় থেকে অটো, মাহিন্দ্র, রিকশা বা অন্য কোনো যানবাহনে যাত্রাপুর বাজার মোড়ে নামতে হবে। তারপর সোজা দক্ষিণ দিকে পিচঢালা সড়কে মাত্র তিন মিনিট হাঁটলেই দেখতে পাবেন ডিসি ইকো পার্কের গেট। সবার জন্য উন্মুক্ত গেট দিয়ে ঢুকে উপভোগ করতে পারবেন মনোমুগ্ধকর এ পার্কের সৌন্দর্য।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৯
এনটি/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।