তবে কিছু অসাধু লোক সড়কটির ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে। কেউ কেউ আবার ফুটপাতের ওপর ময়লা-আবর্জনা ফেলে সড়কের সৌন্দর্য নষ্ট করছে।
ভৈরব ও দড়াটানার ভাঙন থেকে বাগেরহাট শহরকে রক্ষা করতে নির্মিত এই বাঁধ দড়াটানা সেতুর টোলপ্লাজার মোড় থেকে শুরু হয়ে মুনিগঞ্জ সেতুর নিচে গিয়ে শেষ হয়েছে। প্রায় চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট চওড়া বাঁধ বা সড়কের এক পাশে রয়েছে বাগেরহাট শহর। অন্য পাশে ভৈরব ও দড়াটানা নদী। নদী ও সড়কের মাঝে রয়েছে পার্কিং টাইলসে পাঁচ ফুট চওড়া ফুটপাত। ফুটপাতের পাশে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছ। এছাড়া সাধারণ মানুষের বসার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে রেখে তৈরি করা হয়েছে পাকা বেঞ্চ।
এই সড়কের পাশেই রয়েছে নির্মাণাধীন রুপা চৌধুরী পৌর পার্ক। যেটি ইতোমধ্যে বাগেরহাট শহরের মানুষের অবসর কাটানোর অন্যতম স্থান হিসেবে রূপ নিয়েছে। আরও আছে সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, বধ্যভূমি, ঈদগাহ, মুক্তিযোদ্ধাদের কবর স্থানসহ অনেক কিছু। একইসঙ্গে সড়কটিকে আরও আকর্ষণীয় করেছে দক্ষিণের দড়াটানা সেতু এবং উত্তরের মুনিগঞ্জ সেতু।
সেতু দুটোর ওপর দাঁড়িয়ে সড়কটিকে দেখতে আরও সুন্দর লাগে। সঙ্গে আছে নদীর চরে বেড়ে ওঠা গোলপাতা ও ছইলা গাছের সমারোহ। তাইতো অবসর সময় কাটাতে শহরের বেশিরভাগ লোকই এখন বেছে নেয় শহররক্ষা সড়কটি।
প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে অসংখ্য লোক হাটে এই সড়ক দিয়ে। অনেকে সকালের শরীর চর্চাও সেরে নেয় এখানে। দিনের শুরু থেকেই ব্যস্ত হয়ে ওঠা সড়কটির পাশে সারাদিনই মোটামুটি ভিড় থাকে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল শুরু হলেই ভিড় বাড়তে থাকে সড়কের পাশে। শিশু, কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধ সব ধরনের মানুষ আসে একটু নির্মল বায়ুতে নিশ্বাস নিতে। তবে এখানে বাধা হয়ে আছে কিছু অসাধু মানুষের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ময়লার স্তূপ। ফলে ফুটপাতের অনেক জায়গায়ই সাধারণ মানুষ বসতে পারে না।
শহররক্ষা বাঁধ ঘুরতে আসা অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আলী নওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, বাগেরহাট শহররক্ষা বাঁধের দু’পাশের ফুটপাত নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু কিছু মানুষের অত্যাচারে ফুটপাত এখন আর ব্যবহার উপযোগী নেই। কেউ কাঠ শুকাচ্ছে, কেউ ময়লা ফেলছে, কেউ আবার ডেকোরেটরের মালামাল রাখছে প্রশস্ত এ ফুটপাতে। এক কথায় ফুটপাত নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এখনই আমলে না নিলে একসময় সাধারণ মানুষ এ জায়গা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে দাবি করেন তিনি।
বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুশদি বাংলানিউজকে বলেন, আগে সড়কটি খুব ভাঙা ছিল। এখন সড়কটি অনেক বড় ও সুন্দর হয়েছে। পাশে রয়েছে নদী। আমার খুব ভালো লাগে। প্রায়ই আসি এখানে।
স্থানীয় ঠিকাদার এলাহী আলম বাংলানিউজকে বলেন, বাগেরহাট শহরের মধ্যে তেমন কোনো বিনোদন বা অবসর সময় কাটানোর জায়গা নেই। শহররক্ষা বাঁধের পাশে প্রশস্ত ফুটপাত হওয়ায় আমরা এখানে এসে সময় কাটাতে পারছি। তবে কিছু বেপরোয়া কিশোর ও যুবক মাঝে মাঝে ফুটপাতের ওপর ধরে মোটরসাইকেল চালায়। আবার ফুটপাতের ওপরে চওড়া করে মোটরসাইকেল রাখে। এ জন্য সাধারণ মানুষের খুব সমস্যা হয়।
শহররক্ষা বাঁধের পাশের ভ্রাম্যমাণ ফুচকা ও চটপটি বিক্রেতা ফজলুল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন চার শতাধিক মানুষের কাছে ফুচকা ও চটপটি বিক্রি করি। এখানে প্রতিদিন অনেক লোক আসে। ভালোই লাগে নতুন নতুন লোকদের দেখে।
বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাগেরহাট শহররক্ষা বাঁধ আমার প্রাণের। এ সড়কে গেলে আমার প্রাণ জুড়িয়ে যায়। তবে কিছু মানুষ সড়কের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। বর্তমানে ডেঙ্গু ও কোরবানি নিয়ে একটু ব্যস্ত আছি। কোরবানির পর সড়কের পাশের সব অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে। সড়কের পাশে থাকা ফুটপাত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নয়নাভিরাম রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৯
টিএ