অনেকেই যাচ্ছে; চাইলে নাগরিক জীবনের ফরমায়েশি দৈন্যতা ছেড়ে আপনিও এই জলের গ্রাম ঘুরতে পারেন। সে জন্য যেতে হবে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে।
মূলত রাজনগরের সবচেয়ে বড় জলাভূমি কাউয়াদিঘি হাওরকে কেন্দ্র করে অন্তেহরি গ্রামে লোকবসতি গড়ে উঠে প্রায় শত বছর আগে। গ্রামটি বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ ধারণ করে, যখন হাওর পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। আর তখনই অন্তেহরি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। অন্তেহরি গ্রাম বছরে ছয় মাস জলমগ্ন থাকে। বর্ষার শুরুতে পার্শ্ববর্তী কাউয়াদিঘি হাওরে পানি বেড়ে এই গ্রামটি জলাবদ্ধ হয়। তখন অন্য ১০টি গ্রামের মতো থাকা অন্তেহরি গ্রামের রূপ পাল্টে মোহনীয় হয়ে ওঠে। খাল, বিল, পুকুর কিংবা গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট সব একাকার হয়ে যায় হাওরের পানিতে। বছরের জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জলের গ্রাম হিসেবে অন্তেহরি নিজেকে পূর্ণ রূপে আবিষ্কার করে। অগোছালো জলারবনের ভেতর নৌকায় করে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ানো যায়। গ্রামের মেঠোপথের মতো সবুজের বুক চিরে চলে নৌকা। ডানে-বামে গ্রামের সাধারণ মানুষের অসাধারণ জীবনের চিত্র। পুরো গ্রামই পানির ওপর ভাসমান। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ির যাতায়াতের মাধ্যম শুধুই নৌকা। এ যেনো একটি বাড়ি একেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির বাঁকে-বাঁকে মাছ শিকারের নানা আয়োজন। এমন দৃশ্য দেখতে দেখেতে হঠাৎ আপনি প্রবেশ করতে পারবেন বিস্তৃত কাউয়াদিঘি হাওরে। পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলে পড়েছে, মানে বিকেল। জলারবনে ভ্রমণের জন্য বিকেলই উত্তম সময়। তাই শহরের বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেতে আপনার যাত্রা যদি অন্তেহরি হয়, তাহলে বিকেলই চেয়ে নিন। বিকেলেই অন্তেহরির মানুষের জীবন আর জীবিকার দৌড়ঝাঁপ প্রত্যক্ষ করা যায়।
জলারবনের মাঝখান দিয়ে টলটলে জলের ওপর দিয়ে ছুটে চলে মাঝির ডিঙি নৌকা। এই জলই সেখানকার জনগোষ্ঠীর জীবিকার প্রধানতম মাধ্যম। চলার পথে কোথাও চোখে পড়বে নৌকার ওপর জাল টানছেন জেলেরা। আবার কোথায় শিশুরা পাল্লা দিয়ে শাপলা কুড়াচ্ছে, কখনো বা দেখা পাবেন বাড়ির উঠানে কৃষাণীর বিরামহীন পরিশ্রমের চিত্র। এসব দেখতে দেখতে আর প্রকৃতিকে উপভোগ করতে করতে মাঝি আপনাকে নিয়ে যাবে কাউয়াদিঘি হাওরে, তখন পশ্চিমাকাশে সূর্য ডুবতে যাচ্ছে। ঘরে ফেরা উড়ন্ত পাখিদের বিচরণ প্রকৃতিকে করে তুলে আরও আকর্ষণীয়। ঝাঁকে-ঝাঁকে সাদা বক উড়ে বেড়ায় আকাশে। এ যেনো পাখিদেরও স্বর্গরাজ্য। প্রকৃতি যেনো তার রূপের লাবণ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে আপনার মাঝে।
মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে অন্তেহরি গ্রামের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। শহরের চাঁদনীঘাট ব্রিজসংলগ্ন জগতপুর স্ট্যান্ড থেকে ৩০ টাকা ভাড়ায় সিএনজি চালিত অটোতে যেতে পারেন, কিংবা রিজার্ভ গাড়ি নিয়েও সোজা চলে যেতে পারেন অন্তেহরি বাজারে। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে ঘুরতে পারেন পুরো গ্রাম।
অবশ্যই অভিজ্ঞ মাঝি নিয়ে নৌকা চড়তে যাবেন। সাঁতার জানা না থাকলে লাইফ জ্যাকেট পরে নেওয়া উত্তম।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৯
টিএ