ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

পর্যটন

পদ্মবিলে দর্শনার্থীদের ভিড়, ভাগ্য ফিরেছে ৪৫ হতদরিদ্র পরিবারের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০
পদ্মবিলে দর্শনার্থীদের ভিড়, ভাগ্য ফিরেছে ৪৫ হতদরিদ্র পরিবারের

গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের পদ্মবিল আকৃষ্ট করেই চলেছে ভ্রমণ পিপাসুদের। পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন গোপালগঞ্জসহ আশাপাশের জেলার মানুষ।

এসব ভ্রমণ পিপাসুরা নৌকায় ঘুরে ঘুরে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন আর হারিয়ে যাচ্ছেন প্রকৃতির মাঝে। এ যেন এক অপরূপ সৃষ্টি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে কেউ যেন ফুলের গালিচা বিছিয়ে রেখেছেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের বিলবেষ্টিত গ্রাম বলাকইড়। জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ বিল ইতোমধ্যে পদ্মবিল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯৮৮ সালে বন্যার পর থেকে বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মায়। এ সময় পুরো বিল পদ্মফুলে ভরে ওঠে। চারিদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গোপালি আর সাদা পদ্মের সমাহার। এ যেন বিধাতার এক অপরূপ সৃষ্টি।

ভিডিও

পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা গোপালগঞ্জ জেলা শহরের ফেরদৌস রাদিন ও জান্নাতুল রাতুল বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পদ্মবিল ঘুরতে আসি। এ বিলের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে। এখানে ঘুরতে আসলে মন ভাল হয়ে যায়।

ঢাকা থেকে পদ্মবিল ঘুরতে আসা রুবাইয়া লিটল বলেন, বর্ষার সময় গোপালগঞ্জ এলে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে পদ্মবিলে ঘুরতে আসি। এ বিলের সৌন্দর্য আমার খুব ভাল লাগে। এখানে এলে আমি প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যায়।

শুধু সৌন্দর্যই নয়, বর্ষা মৌসুমে কাজ না থাকায় এ বিলে জন্ম নেওয়া পদ্ম বিক্রি করে ও দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে শতাধিক দরিদ্র পরিবার জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। শহরে এক একটি পদ্ম ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া তারা পদ্মফুল বিক্রি করে উপার্জন করছেন।
 
অন্যদিকে, পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে এক এক জন দৈনিক ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় করছেন। আর এ কাজ করছেন বিল পাড়ের অন্তত ৪৫টি পরিবার। ছোট-বড় ৪৫টি নৌকা দিয়ে তারা পদ্মবিলের সৌন্দর্য ঘুরিয়ে দেখান। এতে তাদের পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে বলে জানান।

বলাকইড় গ্রামের তাজমুল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মা-বাবাসহ ১০ সদস্যের পরিবার। বাবা শ্রমিক। তার আয় দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই পদ্মবিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে দৈনিক ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় করেছি। এতে সংসার খুব ভালভাবেই চলে যাচ্ছে। তার মতো আরও ৪০-৪৫ জন আছে তারাও বর্ষা মৌসুমে দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরান। এতে তাদের সংসারও ভালভাবে চলছে।

সুমন চৌধুরী, এনাজ শেখ ও আরিফুল ইসলাম বলেন, বর্ষার সময় বিলের জমি পানিতে তলিয়ে থাকে। তাই ৫/৬ মাস কোনো কাজ থাকে এখানকার মানুষের। আর এ সময় দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে আমরা সংসার চালায়। সপ্তাহের প্রতি শুক্র-শনিবার দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি থাকে। এ দুইদিন দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে তাদের আয় একটি বেশি হয়। সপ্তাহের অন্য পাঁচদিনও কম বেশি আয় হয়। এখানে ছোট সাইজের নৌকা ৩-৪শ’ টাকায় ভাড়া হয় আর বড় সাইজের নৌকা ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় ভাড়া হয়। বছরের ৩-৪ মাস তারা দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে আয় করে সংসার চালান।

মোটরসাইকেলের টোকেন দিয়েও আয় করছেন বিলের পাড়ের শিশু তামিম সরদার। সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিদিনই বাড়ির উঠানে দর্শনার্থীদের মোটরসাইকেল রেখে দৈনিক ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় করছে সে।

গোপালগঞ্জের করপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, বলাকইড়ের পদ্মবিলে প্রকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া পদ্ম সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। প্রতিদিনই শত শত ভ্রমণপিপাসু বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে আসেন। পদ্মবিলটি রক্ষাণাবেক্ষণ করলে আগামীতে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে। এতে এ বিলের পাশে বসবাসকারি পরিবারগুলোর আয়ও বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।