ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

বাংলাদেশে প্রথম সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স আবিষ্কার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২১
বাংলাদেশে প্রথম সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স আবিষ্কার

মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জে পাঁচ মাসব্যাপী নাটেশ্বর বৌদ্ধবিহার খনন কাজ শেষে আবিষ্কার হলো বাংলাদেশের প্রথম সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স। যা ঘোষণা করে যে নাটেশ্বর প্রত্নস্থানে ছিল দশম-একাদশ শতকে একটি বৃহৎ, সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স।

যা বাংলাদেশে প্রথম। এবার আবিষ্কার হয়েছে দুইটি বৃহৎ আকারের অষ্টকোণাকৃতির স্তূপ, স্মারক কুঠুরি, সুরক্ষা প্রাচীরের অংশ, নকশাকৃত ইট।

বুধবার (০৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় টংগিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামের প্রত্নস্থানে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি এসব তথ্য দেন।

বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচি পরিচালক ড. নূহ-উল-আলম লেনিন ও গবেষণা পরিচালক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠ করে প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ আরও জানান, নাটেশ্বর দেউলে দ্বিতীয় সভ্যতার স্তরে (৯৫০-১২২৩ খ্রিস্টাব্দ) ইতিপূর্বে এবং এবার যে আবিষ্কার হলো তা পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করে যে, নাটেশ্বর প্রত্নস্থানে ছিল দশম-একাদশ শতকে একটি বৃহৎ এবং সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স যা বাংলাদেশে এই প্রথম। বিগত বছরের আবিষ্কারগুলোর মধ্যে ছিল ২৫.২ বর্গমিটার আকৃতির বৃহৎ আকারের নান্দনিক কেন্দ্রীয় অষ্টকোণাকৃতি স্তূপ। এটির চতুপার্শ্বে ১৮ বর্গমিটারের চারটি স্তূপ হলঘর। প্রতিটি হলঘরে আবার ২.৫ বর্গমিটারের চারটি করে স্তুপ। অষ্টকোণাকৃতির স্তূপের কেন্দ্রে বিশেষ ধরনের স্তাপত্য ‘স্মারক কুঠুরি’ একটি দুষ্প্রাপ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার। যেখানে গৌতম বুদ্ধ বা তার গুরুত্বপূর্ণ শিষ্যের দেহ ভষ্ম বা ব্যবহৃত জিনিস রাখা হতো। এর উপরের অংশ গোলাকার ও নিচের অংশ চতুষ্কোণাকৃতি। বাংলাদেশে এ ধরনের আবিষ্কার প্রথম। স্মারক কুঠুরির গোলাকার অংশ বৌদ্ধ ধর্মের দর্শনের সৃষ্টিতত্ত্ব ‘শুন্যবাদ’ এর প্রতীকী রূপ। এছাড়া স্তূপের ভেতরের অন্ত্রস্থলটি নির্মিত হয়েছিল স্পোকযুক্ত গাড়ির চাকার আলদে। গোল চাকাও শুন্যের প্রতিরূপ এবং চাকা গতির প্রতীক। উলম্ব ইটের বিন্যাসকে চাকার স্পোকের সঙ্গে তুলনা করা হয়। স্পোককে কল্পনা করা হয় সূর্যের রশ্মির সঙ্গে। ইতোপূর্বে ইট নির্মিত সুরক্ষা প্রাচীরের অংশ বিশেষ পাওয়া গেলেও বিস্তৃতি বুঝা যায়নি। সুরক্ষা প্রাচীরটি যে পুরো স্তূপ কমপ্লেক্স জুড়েই ছিল এবারের আবিষ্কারে তা অনেকটা পরিষ্কার হয়েছে। পুরো বসতি জুড়ে সুরক্ষা প্রাচীরও বাংলাদেশ এই প্রথম। ইতোপূর্বে উৎখননে নকশা আকৃতির ইটের ভাঙা টুকরা পাওয়া গেলেও স্থাপত্যের সঠির অবস্থানে ইটের নকশা পাওয়া যায়নি। এবার সুরক্ষা প্রাচীরের বহিঃস্থ দেয়ালে একটি হলেও ইটের পূর্ণাঙ্গ নকশা সঠিক অবস্থানে আবিষ্কৃত হয়েছে। খননকালে হতাশার জায়গা ছিল নাটেশ্বরে পোড়ামাটির ফলক না আবিষ্কৃত হওয়া কিন্তু নকশাকৃত ইটের ব্যবহার বুঝতে পেরে রহস্যটি উন্মোচিত হলো। অতীশের জন্মভূমিতে স্তূপ কমপ্লেক্সের দেয়াল অলংকরণের ক্ষেত্রে পোড়ামাটির ফলকের পরিবর্তে নকশাকৃত ইট ব্যবহৃত হয়েছে যার কারণ গবেষকদের নতুন করে ভাবতে সহায়তা করবে।

সংবাদ সম্মেলনের আগে প্রতিমন্ত্রী মুন্সিগঞ্জে রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। ৫ মাসব্যাপী খননে যেসব প্রত্নবস্তু মিলেছে সেসব ঘুড়ে দেখেন প্রতিমন্ত্রী। এসময় বিক্রমপুরী বৌদ্ধবিহার প্রত্নস্থান জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়।  

এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন, বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচির ‘কর্মসূচি পরিচালক’ ড. নূহ-উল-আলম লেনিন, গবেষণা পরিচালক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।