ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

পর্যটন

পর্যটন বিকাশে অ্যাগ্রো ট্যুরিজম

মীর মাহফুজুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
পর্যটন বিকাশে অ্যাগ্রো ট্যুরিজম

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে আরেকটি নতুন অধ্যায় সূচিত হতে পারে কৃষি পর্যটনের মাধ্যমে। নগর কেন্দ্রিক অর্থনীতি তথা দেশের অর্থনৈতিক সম্পদ পুনর্বন্টন করতে কৃষি পর্যটন সাহায্য করে।

এর মূল উদ্দেশ্য হলো বিনোদন ও ভ্রমণের মাধ্যমে কৃষি পণ্যকে পরিচিত করানো এর জন্য প্রতিটি জেলায় গ্রামগুলোকে খামারভিত্তিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

পর্যটনের একটি উপখাত হিসাবে বিবেচিত কৃষি পর্যটনকে পরিচিত করার সময় এখনই। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই কৃষি পর্যটন।  

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবী হলেও গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো শহুরে অর্থনীতির তুলনায় অনেকাংশে দুর্বল। যে কারণে মানুষ ক্রমাগতভাবে গ্রাম থেকে শহরমুখী হচ্ছেন। কৃষক তার পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার বিভিন্ন উন্নয়নশীল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন যা প্রশংসার দাবি রাখে।

কৃষি পর্যটন এমনি এক খাত যেখানে একজন কৃষক তার ফসল উৎপাদন ছাড়াও তার আবাস্থল ও শস্য ক্ষেতকে কৃষি পর্যটন বান্ধব করে সারা বছরের আয়ের উৎসে পরিণত করতে পারেন। যেহেতু কৃষি পর্যটন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নীতি কাঠামোতে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালা ২০২০ কৃষি পর্যটনকে উন্নত করার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের একটি খামার একটি বাড়ি কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করে কৃষি পর্যটনের সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে সংযুক্ত করলে তা হতে পারে বাংলাদেশের কৃষি পর্যটন বা অ্যাগ্রো ট্যুরিজমের জন্য মাইলফলক।  

ভ্রমণপিপাসুরা এখন সমুদ্র আর পাহাড় দেখে তুষ্ট নয়। তারা এমন নতুন কিছু দেখতে চায় যেটা সে অন্য কোথাও দেখেনি। কৃষি পর্যটন হতে পারে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে এক আউট অব বক্স কনসেপ্ট, যা বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত শক্ত হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। একজন পর্যটক যখন বাংলাদেশে ভ্রমণের চিন্তা করে তখন নির্দিষ্ট কিছু ট্যুরিস্ট স্পটের কথা ভাবতে থাকেন। আমরা যদি পুরো বাংলাদেশকে একটি ট্যুরিস্ট স্পট ভাবতে পারি, তাহলে কৃষি পর্যটনের বিকল্প নেই।  

এক্ষেত্রে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি গুছিয়ে রাখা হবে, নানাবিধ সুযোগ সুবিধা থাকবে যা দেখে একজন পর্যটকের সেখানে থাকার ইচ্ছা জাগে। থাকার পর ওখান থেকে আসার সময় চাল, বিভিন্নরকম সবজি, গৃহপালিত হাস-মুরগি কিনে আনতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও থাকতে হবে।  

ধরা যাক, বাংলাদেশের ২ কোটি কৃষক যদি সপ্তাহে জনপ্রতি ন্যুনতম দুই হাজার টাকা কৃষি পর্যটনের মাধ্যমে আয় করেন তাহলে এক সপ্তাহে আয় দাঁড়ায় চার হাজার কোটি টাকা, মাসিক আয় ষোল হাজার কোটি টাকা বছরে এই পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। এটা ধরা হয়েছে কৃষকের আয়, পরিবহন ও অন্যান্য বিবিধ আয়ের হিসাব করলে সেটিও এর দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে, আমাদের এই খাত থেকে আয়ের উৎস বের করতে হলে উন্নত যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থাসহ গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা দরকার।

সরকারের কৃষি বিনিয়োগের পাশাপাশি কৃষি পর্যটনে কীভাবে কৃষকদের সম্পৃক্ত করা যায়, তাদের কৃষিভিত্তিক পর্যটনের ওপর ট্রেনিং, কৃষি পর্যটনে আপামর জনসাধারণকে উদ্ধুদ্ধকরণ, এর জাতীয়ভিত্তিক প্রচারণার মাধ্যমে কৃষি পর্যটনকে জিডিপি আয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে।  

 গ্রামীণ অর্থনীতিকে সবল করতে কৃষি পর্যটন একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। গ্রামের মানুষের কষ্ট লাঘব করতে ও গ্রামীণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে কৃষি পর্যটন নিয়ে আমাদের কাজ করার সময় এসেছে।  

দেশের কয়েক হাজার গ্রাম পর্যটন বান্ধব হলে, সামাজিক, ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দিক দিয়ে বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর উন্নত ও ধনী দেশের একটি। তাই অনেকে বলে থাকেন, কৃষি ও পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনা একটি দেশের স্বনির্ভরতায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। আমরা জাতীয়ভাবে কৃষি খাতের উৎপাদনশীলতা নিয়ে কাজ করছি কিন্তু এই উৎপাদনশীল খাতের সঙ্গে যদি আমরা কৃষি পর্যটন নামক পর্যটনের উপখাতকে সমন্বিত করি তাহলে আমাদের জাতীয় আয় অনেক বেড়ে যাবে।  

ঘরের বারান্দায় বসে সবাই মিলে পুকুরের তাজা মাছ, ক্ষেতের চাল ও সবজি দিয়ে দুপুরের ভাত খাওয়া, পুকুরে সাঁতার কাটা, নৌকায় চড়ে বেড়ানো, গাছে উঠে আম, জাম, পেয়ারা খাওয়া, সকালবেলা ফুল কুড়ানো, মাটির চুলায় রান্না করে খাওয়া এসবই শহুরে মানুষদের কাছে স্বপ্নের মতোই মনে হয়। একমাত্র কৃষি পর্যটনের মাধ্যমেই সেই আনন্দ একজন শহুরে মানুষও পেতে পারেন।  

দেশের আনাচে কানাচে কৃষি পর্যটন উদ্যোগ অনেকেই শুরু করেছেন। দেশের তরুণদের বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে কৃষি পর্যটন সম্প্রসারণের ফলে। চীন, জাপান ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কৃষি পর্যটনের সুফল ভোগ করা শুরু করলেও ৮০ শতাংশ কৃষি পেশায় নিয়োজিত আমাদের বাংলাদেশে এর বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা সুফল ভোগ করা দূরে থাক, এর শুরুই করতে পারছি না। সরকার কৃষি পর্যটনের দিকে সুদৃষ্টি দিলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে এক নবধারা উন্মোচিত হবে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হবে এক নতুন মাত্রা।  

লেখক: মীর মাহফুজুর রহমান, মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যামিউজমেন্ট পার্ক অ্যান্ড অ্যাট্রাকশন (বাপা)।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।