ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

রাজার রাজ্য আগরতলা

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
রাজার রাজ্য আগরতলা

আগরতলা, (ত্রিপুরা) থেকে ফিরে: কথায় কথায় সবাই বলে, নদী পার হলেইতো আগরতলা। এত পরিকল্পনা করে যাওয়ার কী আছে।

তবে আমি একটু ব্যতীক্রম। কাছে দূরে যেখানেই যাই পরিকল্পনা করেই যাই। সময় পরিকল্পনা করতে অনেক সময় তা বছর পেরিয়ে যায়! এবার ঘুরে এলাম বাড়ির পাশের আগরতলা থেকে। এই আগরতলা দেখার আমার বিশেষ আগ্রহও আছে। আর তা হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থীদের সরাইখানে রাখা, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণসহ অনন্য দৃষ্টান্তের ইতিহাস আছে আগরতলার। তাই আগ্রহটাও বেশ।

চার বন্ধু মিলে গত ১৩ জুন তিন দিনের সফর দিয়ে এলাম। আগরতলা মূলত রাজার রাজত্বে কেন্দ্রিক ইতিহাস। আমার শুধু জাদুঘরের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ কর্নার দেখে সফর স্বার্থক হয়েছে। এপারের অনেক ইতিহাস জানলেও ওপারে থেকে দেখা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার প্রবল ইচ্ছে পূর্ণ হয়েছে।  আমাদের প্রথম গন্তব্য উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ। গোলবাজার থেকে উজ্জয়ন্ত প্রসাদের দূরত্ব ১.৬ কিলোমিটার। ১৯০১ সালে তৎকালীন রাজা রাধা কিশোর মানিক্য আগরতলার প্রাণকেন্দ্রে ২০ একর জমির ওপর তৈরি করেন উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ।  

১৮৯৯ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ওই আমলে এটি ১০ লাখ রুপি নির্মাণ ব্যয় ছিল বলে জেনেছি। প্রাসাদের ভেতরে রয়েছে সারি সারি কক্ষ। এগুলোর নাম হলো শ্বেতমহল, লালমহল, সদর বাড়ি, তহবিল খানা, আরাম ঘর ইত্যাদি।

প্রাসাদের নিচ ও দোতলায় রয়েছে সুন্দর পরিপাটি জাদুঘর। জাদুঘরের একটা অংশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সেসময়ের প্রকাশিত পত্রিকা এবং মুক্তিযুদ্ধের অনেক ছবি আছে যেটি দেখলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আরো পরিষ্কার করে জানতে পারবেন। উজায়ান্ত প্যালেসের ভেতর থেকে বাইরের অংশ বেশি সুন্দর। এর নির্মাণ শৈলী, খোলা মাঠ, বিশাল বাগান, পানির ফোয়ারা সবকিছু আপনার নয়ন কেড়ে নেবে।
আমাদের সীমান্তের কাছাকাছি রয়েছে এক বিশাল কমলাসাগর লেক। মহারাজ ধনমানিক্য পঞ্চদশ শতাব্দিতে লেকটি খনন করেন। এই লেকের কাছে ষোড়ষ শতাব্দিতে নির্মিত কালি মন্দিরের অবস্থান। এটি কসবা কালি মন্দির নামেও পরিচিত।

আগরতলা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নীরমহল। যেতে সময় লাগবে ১টা ৩০ ঘণ্টা। রুদ্রসাগরের বিশাল জলরাশির মাঝখানে মুসলিম স্থাপত্য রীতিতে তৈরি করা ওই মহলটি দেখতে অনেক বেশি সুন্দর।  ৩০ রুপির টিকিট কেটে ট্রলারে করে মহলে যেতে হয় নীরমহল। পুরো ভবন দেখে মনে হবে পানিতে ভাসছে। মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য নীরমহল নামকরণ করেন।  
এছাড়াও কুঞ্জবন প্রাসাদ, সিপাহীজলা ওয়ইল্পলাইফ স্যাংচুয়ারি, ডাম্বুর লেক, জাম্পুই হিলসসহ অনেক সুন্দর স্পট রয়েছে।  

আমরা তিন দিন ছিলাম। অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে আগরতলা ভ্রমণ উপযুক্ত। আগরতলা শহর, খাবার, মানুষের কথাবার্তা আমাদের সঙ্গে অনেকটা মিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া হয় কাছেই রাজার রাজ্য আগরতলা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
এডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।