ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

স্বপ্নের দেশের মোহনীয় দ্বীপে

ফারিহা কবির চৈতি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫
স্বপ্নের দেশের মোহনীয় দ্বীপে

খাই  আইল্যান্ড এ পৌঁছানোর পাঁচমিনিট  আগে  আমাদের ক্রুসের  গাইড  বলল-  এখানে  নেমে  তার  পাশে  থাকা  একটা  ছোট  বোটে  করে  খাই  আইল্যান্ডে যেতে  হবে।

কারণ  এত  বড়  ক্রুস  ওই  আইল্যান্ড  পর্যন্ত  যায়না।

তারপর  আমরা  ক্রুসের  যাত্রীরা  সবাই  একে  একে  বোটে গিয়ে বসলাম। বোটে আমাদের  সঙ্গে একটা  ইরানি  পরিবারের সদস্যদের পরিচয়  হয়।

এক বাবা তার মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে এখানে এসেছেন। ওই  ছেলেটার মেয়ে  নাকি  একদেই  আমার  বোনের  মতো। এজন্য  তাদের সঙ্গে আমাদের  বেশ  ভালো   সম্পর্ক  গড়ে  উঠে।

এরমধ্যে পাঁচ মিনিটেই আমরা পৌঁছে গেলাম দ্বীপে। সেখানে পৌঁছানোর পর  গাইড  আমাদের  জানালো- এই দ্বীপে আমাদের  ২০ মিনিটে  থাকতে  হবে। এরমধ্যে চাইলে  আমরা  স্নর্কলিং, সাঁতার কিংবা ঘুরেও দেখা যাবে দ্বীপের সৌন্দর্য।

যেহেতু  সাঁতার  জানিনা  তাই  বিষয়টি গাইডকে জানালাম। এরপর গাইড আমাদের একজন  এক্সপার্টের কাছে  নিয়ে  গেল। সেই  এক্সপার্ট  আমাদের বললেন-একজন  একজন  করে  আমরা  স্নর্কলিং  করতে পারবো। প্রথমে রিস্কটা আমিই নিলাম।

গাইডকে অনুসরণ  করে  পানিতে নেমে  গেলাম, গলা বরাবর পানিতে নামার পর গাইড  আমাকে  তার হাত  ধরতে বলল, কথা মতো আমিও তাই করলাম।

এরপর সে আমাকে নিয়ে চলে গেল পানির নিচে। তবে সাঁতার  জানিনা  তাই  আমাকে  গভীরে  নেওয়া হয়নি। এদিকে আরেক এক্সপার্ট আমার বোনকে স্নর্কলিং করাতে পানিতে নেমে গেলো।

একটা  কথা- স্নর্কলিং  কী  সেটাই  তো  বলা  হয়নি। স্নর্কলিং  হচ্ছে  পানির  নিচে  সাঁতার  কাটা, যেখানে  মাস্ক  থাকবে  মুখে, সেই  মাস্কে একটা  পাইপ  থাকবে, যা দিয়ে নিঃশাস  নেওয়া  যায়।

আমি  পানির নিচে  গেলাম, খুব  গভীর  না  এরপরও তো  পানি। অদ্ভূত  এক  দুনিয়া  সেটা!  কী  শান্ত  পানির  নিচ! পানির নিচে ‘পাতালপুরী’তে
দেখলাম সামুদ্রিক মাছ আমাকে ঘিরে ধরছে, আমিও ছুঁয়ে দেখলাম তাদের! যেন অল্প সময়েই সখ্য গড়ে উঠেছে আমাদের মধ্যে।

তবে বেশিক্ষণ না থেকে পানি থেকে উঠে এলাম। এরইমধ্যে আমার ছোট বোনও পানি  থেকে  উঠে  এসেছে। সব মিলিয়ে খ‍ুবই উপভোগ করলাম স্নর্কলিং।

এখন  বোটে ফিরে যাওয়ার পালা। গাইড  আমাদের  সবাইকে  বোটে যেতে বলল-এরপর  পাঁচমিনিট  পর  ক্রুসে  উঠতে হবে।

উঠার  পর  ক্রুস চলতে শুরু করলো- এখানেই  আমাদের  লাঞ্চ  দেওয়া  হল। দুপুরের খাবারের মেন্যু যেমন  সুস্বাদু ছিল, তেমননি তা বেশ  রুচিকর। এরমধ্যে ভাত, ফ্রাইড চিকেন, থাই সবজি, সামুদ্রিক  মাছ  (নাম  জানিনা ) সঙ্গে ছিল ঝোল।

খাবার শেষ হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পর আমাদের গাইড বলল- আমরা মায়া বে দ্বীপে চলে এসেছি। এখানেই হয়েছিল লিওনার্দ ডি কাপ্রিওর বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘দ্য বিচ’। কিন্তু এখানে বড় বিচ নেই। ছোট একটা  বিচ।

এখানে সবাইকে বোট থেকেই চারদিকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হবে। ইচ্ছে হলে সাঁতার, স্নর্কলিং কিংবা ডাইভিংও করতে পারবেন। আমি ক্লান্ত ছিলাম তাই ক্রুসে বসেই সবার সাঁতার, স্নর্কলিং এবং ডাইভিং উপভোগ করেছি।

মায়া বে দ্বীপ সম্পর্কে গাইড বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছিল আমাদের- যেমন ২০০৪ এর সুনামিতে দ্বীপের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। একটা পাথরের পাহাড় দেখালো-যা কিনা সুনামির সময় কিছুটা ভেঙে একটা গুহার মতো হয়ে যায়! যদিও সেটা আগেই ছিল। তখন দর্শনার্থীরা ভেতরে যেতে পারতেন।

কিন্তু সুনামির পর ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দর্শনার্থীদের সেখানে যেতে নিষেধ করা হয়। দ্বীপের অনেক ঐতিহাসিক দর্শনীয় বস্তু সুনামিতে ধ্বংস হয়ে যায়।

মায়া বে-দর্শনের পর গেলাম সর্বশেষ কো ফি ফি দ্বীপে। সেখানে আমাদের নামিয়ে দেওয়া হল এবং বলা হলো একঘণ্টা আমরা এখানে যে যার মতো ঘুরতে পারবো।

যাই হোক আমি আর আমার বোন সময় নষ্ট না করে আইল্যান্ডটা ঘুরতে লাগলাম। প্রথমে দেখলাম এখানকার বেশকিছু সুভেনির শপ। সেখানে কিছুক্ষণ নানা জিনিসপত্র দেখলেও কিনলাম না।

কারণ এত দাম যে না কেনাটাই ভালো মনে হলো। এরপর যতই এগোলাম ততই মুগ্ধ হচ্ছিলাম, কারণ এই আইল্যান্ডটাই ২০০৪ এ সব’চে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আর এখন এই দ্বীপটাই দর্শনার্থীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে।

দ্বীপটা দেখলেই অনুমেয়, এখানকার মানুষগুলো কত কর্মঠ। কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপটাকে আগের সেই হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে দিয়েছে। অনেক বড় দ্বীপ, পুরোটা ঘুরে শেষ করতে পারলাম না।

ঘুরে দেখতে লাগলাম দ্বীপের সামনের অংশ! কী অদ্ভূত সুন্দর এ দ্বীপ! সমুদ্রের কোল ঘেঁষে চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে পাহাড়...যা পর্যটকদের আরও বিমোহিত করে।

তবে রাতের এই দ্বীপের সৌন্দর্য যেন আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আফসোস-অদ্ভূত সুন্দর রাতটা উপভোগের। কিন্তু আমি আর আমার বোনের ভাগ্যে তা না জুটলেও বাকিটুকু পরের পর্বে...

প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।

আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।  

প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন- 


** স্বপ্নের দেশ থাইল্যান্ডে

বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।