ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

যমুনার তীরে এক বিকেল

ওয়ালীউল্লাহ মিঠু, জাবি থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫
যমুনার তীরে এক বিকেল

ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৭টা। কানে আসছে অতিথি পাখির কলতান।

আকাশ দিনের বার্তা দিতে শুরু করেছে। তখনও খোঁজ নেই সূয্যি মামার। খবর নেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আ ফ ম কামালউদ্দীন হলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরও।

লেপের ওম ছেড়ে ঘুম ঘুম চোখে একটু পরেই সবাই আসতে শুরু করলো হলের সামনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন-তিনটে বাসও এসে হাজির। হলের অন্যরা হৈ-হুল্লোড় আর চিৎকারে জোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করছে।

মুহূর্তেই সেখানে এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হলো। যদিও সাত সকালে আবাসিক হলের সামনে এধরনের শোরগোল দেখা ভার!

বার্ষিক বনভোজন উপলক্ষেই এত শোরগোল আর হৈ-হুল্লোড়। ক্লাস-পরীক্ষা আর অ্যাসাইনমেন্টের চাপ ভুলে সবাই প্রহর গুনছে যমুনা রিসোর্টে যাওয়ার।

বঙ্গবন্ধু সেতুর নিচ দিয়ে যমুনা নদীর বুকে ঘুরে বেড়ানো আর গোধূলির আলোয় ব্রিজকে কাছ থেকে দেখা হবে... আহা কত্ত মজা! 
ঘড়ির কাটা নয়টার ঘরে যেতে না যেতেই সবুজ ক্যাম্পাস থেকে বাস ছাড়ল টাঙ্গাইলের উদ্দেশে। সবার পরনে বিশেষ টি-শার্ট। অধিকাংশের চোখে রঙিন চশমা।

বাস চলছে আপন গতিতে। সবার মুখে চলছে লাগামহীন খোশগল্প আর বেসুরো গান! আর কেউ-ই ভুল করছে না গালে তাল মেলাতে। জুনিয়র-সিনিয়র, ক্যাম্পাস সাংবাদিক কিংবা রাজনীতিক অথবা সাধারণ শিক্ষার্থী-সবাই একে সঙ্গে উল্লাসে মেতে ‍ওঠে। সবাই যেন বন্ধু...

বেলা বারোটা নাগাদ-টাঙ্গাইলের মহেরা জমিদার বাড়িতে পৌঁছালাম। সেখানে ঘুরে বিলাসবহুল বাড়িগুলো দেখে নিলাম। বাড়ির গঠন-প্রকৃতি দেখে সহজে সবাই বুঝে নিলাম এগুলো জমিদারই বাড়ি।

বিভিন্ন ধরনের নজর কাড়া নকশা বাড়িগুলোর সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রত্যেকেই ভ্রমণকে স্মৃতির ফ্রেমে বন্দি করতে ক্যামেরায় ক্লিক...ক্লিক কতে ভুললো না। প্রাতঃরাশ শেষে আবারও বাসে চেপে রওনা দিলাম যমুনা রিসোর্টের দিকে।

দুপুর দুইটা নাগাদ সেখানে পৌঁছালাম। নামার সঙ্গে সঙ্গেই একদল ফুটবল খেলায় মেতে উঠলো, কেউ আবার নদীর চরে গল্পের ঝাঁপি খুলে বসলো। অনেকেই আবার ‘দুধের সাধ ঘোলে মেটানো’র মতো নদীর চরের ‘সৈকতে’ গোসলে নেমে পড়লো।

যমুনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে আমরা ক’জন ছিলাম হাঁটার দলে। ওই যে দেখা যায় যমুনা সেতু। সবাই হাঁটছি ব্রিজের দিকে...।

চর আর পানি পেরিয়ে আমরা যাচ্ছি তো যাচ্ছি...। কিন্তু একটা সময় আর যাওয়া সম্ভব হলো না। কারণ সেখানে অনেক পানি। এবার হেঁটে সেতুর মাঝ বরাবর যেতে না পারলেও হতাশ হইনি। ভবিষ্যতে যাবো...

এদিকে সবাই ফিরে এলাম তটে। ততক্ষণে প্রস্তুত হয়ে গেছে দুপুরের খাবার। দ্রুত খাবারটা সেরে নেওয়ার দায়িত্ব পড়ল সবার ওপর। পেটও ‘খাই..খাই’...।

খাওয়া শেষ করে সবাই একসঙ্গে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে যমুনা সেতু দর্শনের পরিকল্পনা করলাম। এজন্য বনভোজনের সমন্বয়কারী ওয়ালী ভাই কয়েকটা নৌকাও ভাড়া নিলেন।

এবার আমাদের সেতু দর্শনের পালা। সাঁতরিয়ে সেতুর কাছাকাছি যেতে পারিনি তো কী হয়েছে? নৌকায় করে তো যাচ্ছি!

শেষ বিকেলের সূর্যের রঙিন আলোয় নদীর বুকে যমুনা সেতুকে যেন আরও বিস্ময় মনে হচ্ছিলো।

উপরে হেলানো সূর্যটা রঙধনুর মতো আলো ছড়াচ্ছিলো! বন্ধু অমিত, মিতুল, সোহাগের দিকে তাকাতেই যেন মনে হল-ওরা অপরিচিত সোনালি গ্রহের কোনো প্রাণী! নদীর পানি, তার ওপর সেতু পড়ন্ত বিকেলে আরও চমৎকাল লাগছিল চারপাশ।

হিমেল ভাই, মানিক ভাই আর আমার ক্যামেরায় এক নৌকা থেকে অন্য নৌকার ছবি ওঠানো হলো বেশ। আর নিজ নৌকায় থেকেও আমাদের ছবি তোলা হলো। হাল আমলেও সেলফিতেও ভুল করেনি কেউ।

এমন মায়াবী আর শান্ত পরিবেশ ছেড়ে কে ফিরে যেতে চায়? কিন্তু চাইলেই কী সব হয়! সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে অজস্র অমলিন স্মৃতি নিয়ে ফিরতে হয়েছে।
সন্ধ্যার পর যমুনা রিসোর্টে কিছু সময় কাটানোর পর রাতে আবারও ফিরে এলাম আপন নীড় জাবি ক্যাম্পাসে।

প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।

আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।  

প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন- 
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।