ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

মুম্বাই-কলকাতার কড়চা-৮

এটাই তো বলিউডি মুম্বাই!

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট ‍আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৫
এটাই তো বলিউডি মুম্বাই! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মুম্বাই থেকে ফিরে: পড়ন্ত সূর্যটাকে পেটে পুরছে বিশালদেহী ‍আরব সাগর। লজ্জায়-ক্ষোভে সে যেন রাঙা।

ক্ষোভ-অভিমান আমির, শাহরুখ, সঞ্জয়, জুহি, ঐশ্বরিয়ারও। তাই ধনুকবাঁকা সাগরতীরের তেকোণা ব্লকে বসে সাগরজোড়া আকাশপানে তাকিয়ে থাকা। পিছন থেকে হয়তো প্রিয়প্রত্যাশীর স্পর্শ, একটু বাঁকা চাহনিতে ঘুরে তাকানোর চেষ্টা। তারপর দুজন পাশাপাশি বসে পা ঝুলিয়ে সামনে তাকিয়ে সব মান-অভিমানের উত্তর খোঁজা।


বলিউডি সিনেমার মোটামুটি পরিচিত দৃশ্য এটি। বলছি মুম্বাইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা মেরিন ড্রাইভের কথা। ঠিক ধনুকের মতো নিখুঁতভাবে বাঁকা গড়ন। পাড় বাঁধানো। নিচে ফেলা কংক্রিটের ব্লক। ব্লকগুলো এমনভাবে বানানো যাতে বড় বড় ঢেউ আঁছড়ে পড়লেও ক্ষতি হবে না খুব। সুন্দর পরিচ্ছন্ন বাঁধানো পাড়ের পরে রাস্তা। তার পাশজুড়ে বড় বড় স্থাপনা। সন্ধ্যার পর আলোর মুম্বাইয়ের প্রতিবিম্ব সাগরজলে। শহর মুম্বাই চেনার সবচেয়ে সহজ দৃশ্য!


গেটওয়ে ইন্ডিয়া থেকে ডায়মন্ড ব্যবসায়ীদের শহর মালাবার হিলে যাওয়ার পথে বুড়ো ট্যাক্সি চালককে অনুরোধ করে ক্ষণিকের জন্য মেরিন ড্রাইভে থামলাম আমরা। মধ্যদুপুরে তপ্ত রোদে পড়ন্ত বিকেলের স্নিগ্ধ পরিবেশ পাওয়া সম্ভব নয়। তবু নামা, দেখা। বলিউড সিনেমায় সকালের জগিংয়ের যে দৃশ্য দেখানো হয় সেটির অধিকাংশও এই মেরিন ড্রাইভে। এখানকার পরিবেশ যে অতি স্বাস্থ্যকর তাতে কোনো সন্দেহ নেই। হাঁটার বিস্তর জায়গার পাশপাশি রয়েছে গাছের ফাঁকে ফাঁকে বেঞ্চে বসে আড্ডাবাজি, রোমান্স করার ব্যবস্থাও।


তবে আমরা যখন মেরিন ড্রাইভে তখন অফটাইম, অর্থাৎ এসময় ৩৭-৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা। নিতান্ত আমাদের মতো দূর থেকে আসা দু’একজন অতিউৎসুক ছাড়া কারো টিকি দেখা গেলো না।


ভরদুপুরেও কোনো কেনো যুগলকে দেখা গেলো বৃক্ষছায় সময় কাটাতে। প্রচণ্ড গরমে দাঁড়িয়ে থাকাই দায় হয়ে গেলো। তবু নামলাম ব্লকে চেপে জল ছুঁতে। তানজিলকে নায়কের পোজে ছবি তুলে দিলাম কয়েকটা। বাদ গেলাম না নিজেও। আপা দেখলেন উপরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।


ন্যারিম্যান পয়েন্ট থেকে মালাবার হিল পর্যন্ত ৪.৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য মেরিন ড্রাইভ ম্যাপে দেখলে ইংরেজি অক্ষর ‘সি’ এর মতো দেখা যায়। দক্ষিণের মোটামুটি শেষ প্রান্তে বিখ্যাত ওবেরয় হোটেল ও এয়ার ইন্ডিয়ার ভবন চোখে পড়ার মতো।


বেলা গড়ালেই জনারণ্য হয়ে ওঠে এ এলাকা। সমুদ্রের স্নিগ্ধ বাতাসে গা এলিয়ে খোশগল্প আর আড্ডাবাজিতে মাততে জড়ো হন মুম্বাইবাসী। ট্যুরিস্টরাও নিয়মিত উপভোগ করেন এখানকার পরিবেশ।


এর শেষ প্রান্ত মালাবার হিল ‍আবার উঁচু। এখানের কিছু স্পট থেকে পুরো মেরিন ড্রাইভ দেখা যায়। মালাবার হিলের আশপাশেই ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ ‍আম্বানি, কিংবদন্তি গায়িকা লতা মুঙ্গেশকারের বাড়ি। রয়েছে পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহর বাড়িও। কয়েক সেকেন্ডের জন্য জিন্নাহর বাড়ি দেখার অভিজ্ঞতা খুব ভালো ছিলো না। সে গল্প থাকবে আগামী পর্বে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৫
এএ/

** মুম্বাইয়ের ‘বাজু’তে দিনভর ঘোরাঘুরি
** সাগরকোলে হাজি আলী দরগা
** বলিউড তারকাদের বেহাল জুহু বিচ!
** প্রথম দর্শনেই মুম্বাইপ্রেম, চিকিৎসায় মন ভালো
** মনভোলানো খানাপিনায় ২৬ ঘণ্টায় মুম্বাই
** সোনার হরিণ ট্রেন টিকিট, অতঃপর হাওড়া স্টেশন
** ৫৫২ টাকায় ঢাকা থেকে কলকাতা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।