ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

দোতলা মাটির ঘরের সন্ধানে

ফজলে রেজওয়ান করিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৫
দোতলা মাটির ঘরের সন্ধানে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গ্রামের একপাশে একটি মাটির দোতলা ঘর। তার পাশে টালির রান্নাঘর।

সামনে এক চিলতে উঠান। পেছনে পুকুর। দুই পাশে গাছপালার সাম্রাজ্য। হয়তো ভাবছেন, আরে!

এমন দুয়েকটা ঘর তো ভ্রমণ পথে গাড়ি বা ট্রেনের জানালা থেকে অনেক দেখেছি। দেখে হয়তো মনে হয়েছে, এখানে আজীবনের জন্য নেমে যাই!

ওই বাড়িটার হাতছানি তারপর এমন ভাবনায় বহুবারই তাড়িত করেছে আপনাকে! 
 
করবে নাই বা কেন? ইট-পাথরের দালানের ভিড়ে আজকাল মাটির ঘর তো তেমন দেখা যায় না বললেই চলে। শহরে তো নয়ই গ্রামেও এমন ঘরের দেখা মেলা ভার।

এককালে উত্তরের জনপদ নাটোরের সিংড়ায় দেখা যেতো মাটির তৈরি দোতলা ঘর। স্থানীয়রা এ ধরনের ঘরকে বলে থাকেন তালা। এখনও এমন ঘর রয়েছে, তবে একদমই কম।

পারিবারিক ও পেশাগত ঐতিহ্য বা দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা, যে কারণেই হোক উপজেলার স্থাপনদীঘির চৌগ্রাম, হুলহুলিয়া, গোয়ালবাড়িয়াসহ আশেপাশের গ্রামে গেলে এখনও এমন মাটির ঘরের দেখা মেলে।

এমন সুন্দর মাটির ঘর দেখতে হলে আপনাকে চলন বিলের পাশ ঘেঁষে ইট আর মাটির রুগ্ন রাস্তা ধরে চলতে হবে ঘণ্টা খানিকের পথ।

মাটির সহজলভ্যতা ও প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে এ জনপদের বাসিন্দারা এ ধরনের বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হয়ে থাকেন।

এছাড়া সে সময় একান্নবর্তী পরিবার থাকায় বেশি ঘরের প্রয়োজন হতো। এটাও এ রকম দোতলা বাড়ি তৈরির আরেকটি কারণ।

শীত, গরম দুই ঋতুতেই আরামদায়ক এ মাটির ঘর। শীত মৌসুমে বাইরে যখন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা তখন এ ঘর উষ্ণ থাকে। আর প্রচণ্ড গরমেও এর ভেতরটা তুলনামূলক শীতল থাকে বলে স্থানীয় গৃহস্থরা জানালেন।

বাড়িগুলো একতলা মাটির বাড়ির মতো দুর্বল নয়। যথেষ্ট মজবুত। প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টিতেও এগুলোর ক্ষতি হয় না।

এসব বাড়ির দেয়ালের প্রশস্ততা বেশি এবং নির্মাণ কৌশল ভিন্ন হওয়ায় যুগের পর যুগ সামান্য রক্ষণাবেক্ষণেই থাকে মজবুত।

গ্রীষ্ম বা বর্ষায় বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সাধারণত শীতকালে এ ধরনের বাড়ি নির্মাণ করা হয়। এঁটেল বা দোঁআশ মাটির সঙ্গে পানি মিশিয়ে কাদা তৈরি করা হয়।

গাঁথুনি দেওয়ার সময় কারিগররা মাটিকে ভালোভাবে পিষে তাতে পাটের আঁশ, খড়, ধানের চিটা, কুঁড়া বা সিমেন্ট মিশিয়ে ২০ থেকে ৩০ ইঞ্চি মোটা দেয়াল তৈরি করেন।

সুপারি বা শাল কাঠের মোটা বিম দিয়ে তৈরি হয় পিলার ও ছাদের ভিত। প্রথম তলার উচ্চতা ৮ থেকে ৯ ফুট। কাঠের তক্তা ও বাঁশ ব্যবহার করা হয় ছাদ তৈরিতে। আর দ্বিতীয় তলার উচ্চতা ৬ থেকে ৭ ফুট।

সেটি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পুরোটাই একটা কক্ষ হয়। তাতে রেলিং বারান্দা থাকে। তার উপরে থাকে টিনের চাল।

ঘরগুলোর দৈর্ঘ্যের তুলনায় প্রস্থ কম হয়। আয়তাকার আকারের। দরজা-জানালা কাঠের।

এভাবেই দেড় থেকে ৬ মাসে তৈরি হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম ঘরগুলো।

এর কোল ঘেঁষে থাকে রান্নাঘর। সেটির ছাদ টালির। বাড়ির পেছনে পুকুর, সামনে উঠোন। তার একপাশে বাথরুম, টয়লেট।

প্রতিবছর ঘরগুলোতে নতুন করে মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়। ফলে সব সময়ই দেখায় ঝকঝকে। অনেকে চুনকামও করেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের ঘরগুলোতে নানা ধরনের নকশাও দেখা যায়।

প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।

আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।  

আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন- 

বাংলাদেশ সময়: ০২০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৫
আরএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।