ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায়-১

পাহাড়জয়ের স্বপ্নপথে যাত্রী আমি একা

রিয়াসাদ সানভি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৫
পাহাড়জয়ের স্বপ্নপথে যাত্রী আমি একা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বান্দরবান থেকে ফিরে: এবার ঘটলো আজব ঘটনা। ঈদের বাকি মাত্র দু’দিন, অথচ হাতে কোনো টাকা নেই।

অথচ অভিযানে বেরুবো ঠিক করা মোটামুটি বছরখানেক আগেই। হুট করে সমস্যার পাহাড় সত্যিকারের পাহাড়ে যাওয়ার পথ আটকে দাঁড়ালো যেন। ভেবেছিলাম যাদের নিয়ে একসঙ্গে যাবো স্বপ্নের পথে, তারাও নানা কারণে পিছিয়ে পড়তে লাগলো।

একে তো হাতে টাকা নেই, অন্যদিকে বেরুলে একাই বেরুতে হবে। তেনজিং নোরগে তার আত্মজীবনীতে বলেছিলেন ‘ভাবি পাহাড়ে যাওয়া ছেড়ে দেবো। কিন্তু বাড়ি ফিরে যখন জানালার ফাঁকে ওই সাদা পাহাড়ের চূড়াটার দিকে তাকাই তখন ঠিকই বেরিয়ে পড়তে হয়। ’ ঢাকায় আমার বাসার কাছে তো কোনো পাহাড় নেই, কিন্তু মনের কোণে ঠিকই একটা সবুজ চূড়ার ছবি আঁকা আছে। এবার বেরুবো তাকে স্পর্শ করতে।

টাকা জোগাড়ের গল্পটা আগে বলি। বন্ধু, কয়েকটি ট্যুরের সহযাত্রী তোড়াকে দিলাম ফোন। এক কথাতেই সে টাকা দিতে তো রাজি হলো। সাথে তার ক্যামেরাখানা দিতেও।   কিন্তু প্রয়োজন আরও অনেক টাকার। এবার বন্ধু, ফিলোসফার, সহযাত্রী শামিমা মিতুর দুয়ারে। সে তার ঈদ বোনাসের পুরোটা উজাড় করে ঢেলে দিলো আমার পকেটে। সঙ্গে তার লাইফ জ্যাকেটখানি। কিন্তু এতেও হবে না। আরও অন্তত দরকার হাজার সাতেক। এবার বড় মামির কাছে চাইলাম। বলামাত্র টাকা বের করে দিলেন তিনিও।

আহা, চোখ ভিজে যাওয়ার মতোই ব্যাপার বটে। এ অভিযানে তৌহিদ বাদে আর কোনো পুরুষের কাছে কৃতজ্ঞ হতে পারছি না। পুরো কৃতিত্বই এই তিন নারীর। সব শেষ করে যখন নিশ্চিত হলাম বান্দরবানে যাওয়া হচ্ছে, তখন আমার বাসের আর দুই ঘণ্টা বাকি। ব্যাগ গুছিয়ে এক দৌড়ে কাউন্টার। ওদিকে তৌহিদ সমানে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। সে নিশ্চিত হতে চায় আমি সত্যিই আসছি কিনা। রাত ১২টায় ফোনে ওকে আশ্বস্ত করলাম আমি আসছি। সে স্বপ্ন চূড়ার পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। পাহাড় চূড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে হারিয়ে গেলো আমার রাত।

স্বপ্নে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়াকে যেন দেখলাম। কত নামেই না একে চিনি। সাকা হাফং, ত্লাংময়, প‍ুবের পাহাড়, স্বপ্ন চূড়া। নাম যাই হোক, এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া তাতে কোনো সন্দেহ নেই। উচ্চতা ৩ হাজার ৪শ ৫১ ফুট, ১ হাজার ৫২ মিটার। এ চূড়ার প্রথম আরোহী ব্রিটিশ পর্বতারোহী জিঙ ফুলেন। ২০০৫ সালে আরোহন করেন তিনি। তারপর অনেক অভিযাত্রীই গিয়েছেন এখানে। অবশ্য বলে কয়ে কেওক্রাডংয়ে যেমন অনেকেই চলে যান, তলাংময়ে যাওয়া কিন্তু এতটা সহজ নয়।

ঈদযাত্রায় মানুষের ঢল নেমেছে। সেই সঙ্গে মহাসড়কে যানযট। তাই বান্দরবানে যেখানে পৌঁছানোর কথা সকাল আটটার মধ্যে সেখানে এগারোটা বাজলো। রুমার বাস ধরতে ধরতে ১২টা। তাও সরাসরি রুমা যাওয়া গেলো না। সদরঘাট থেকে প্রথমবারের মতো নৌকায় করে রুমা গেলাম। ঘাটে তৌহিদ আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। বেচারা বোধহয় বড় দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচলো। সে বিশ্বাসই করতে পারছিলোনা যে আমি আসবো। কেউ একা একা ত্লাংময়/ সাকা হাফং যেতে পারে এটি তাকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না।

নেমে ঝটপট কিছু কাজ সেরে নিতে হলো। আগামী পাঁচদিনের বাজার তৌহিদ আগেই সেরে রেখেছিলো। ট্রেকিং স্যান্ডেল কিনে নিলাম। আর্মি ক্যাম্পে রেজিস্ট্রেশন, তারপর আবার থানায় রিপোর্টিং সারতে সারতে ঘড়ির কাঁটা তিনটার ঘরে। ঈদের বাকি মাঝখানে মাত্র একদিন। তাই রুমাতে এখন ট্রেকারদের তেমন ভিড় নেই। একটা গ্রুপকে পেলাম। তারাও বগালেকের দিকে যাবে আজ। শেয়ারে নিশান পেট্রোলে জমিয়ে আড্ডা মারতে মারতে যখন বগালেকের দিকে চলেছি, তখন সারা দিনের টিপটিপ বৃষ্টি ধরে এসেছে।

এগারো মাইলে নামার পর শ্বৈরতন পাড়ায় কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। এরপর আর কোনো থামাথামি নেই। এক টানে বগালেকের নীচে কমলা বাজার পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার মতো বেজে গেলো। ট্রেকের শুরু বগালেক এলাকা হলেও এখানে উঠতে আমার সব সময় কষ্ট হয়। এবার তার তোয়াক্কা না করে লাফিয়ে লাফিয়েই উঠে গেলাম। আর্মি ক্যাম্পের আনুষ্ঠানিকতা সেরে বরাবরের মতো শিউলিদের কটেজে থাকার ব্যবস্থা হলো। সঙ্গে সঙ্গে হাজির খাবার। দেড় দু’ঘণ্টার ট্রেকেই পেটো ছুঁচোয় ডন দিতে শুরু করেছে। খাবারের মেন্যু কি ছিলো তা এখন মনে পড়ছে না, তবে এটুকু মনে আছে গো গ্রাসেই খেয়েছিলাম।   লেকের পানিতে ঝাপাঝাপি করতে করতে রুমার গাইড তৌহিদ, শাজাহান, আপেলদের মুখে ট্রেকিংয়ের নানা গল্প শোনা হলো। গোসল সেরে কটেজে ফিরে খুব বেশি আর জমলো না। কাল অনেক সকালে উঠতে হবে।   চাই ঘুমমমমমম....

আগামী পর্বে পড়ুন: বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায়-২
মেঘ চেপে ধরলো চারপাশ থেকে, পথ দেখা দায়

বাংলাদেশ সময়: ০৬০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।