ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

অবসরে অবসর

সাজেদা হক, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৬
অবসরে অবসর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

এম ভি অবসরের জন্ম সেই ৯৭ সালে। সেই থেকেই নিরন্তর ছুটে চলছে শীতলক্ষ্যা থেকে মেঘনা, সুপতী হয়ে বলেশ্বর পর্যন্ত।

তবে তার এই ছুটে চলার পথে সবসময়ই যোগ হয় ছোট কটকা খাল, বড় কটকা খাল, হিজলা ও সুগন্ধা নদীও।

শুধু নামে অবসর হলেও, ছুটে চলায় দারুণ দুরন্ত সে। কোনো অবসর নেই তার। তার এই বয়ে চলাতেই কখনো যোগ হয়, হাসি-আনন্দ, কান্না-বেদনা কিংবা চ্যালেঞ্জ।

দক্ষ হাতে এই অবসরকে সামাল দেন ক্যাপ্টেন জাহেদুল ইসলাম। তাকে সহযোগিতা করেন ফারুক, আহমেদ, আব্দুল হালিম, বেলাল, মনোয়ার, মাহতাবসহ আরও সাতজন।

কয়েকদিন আগে অবসরের এই নিরন্তর ছুটে চলার সঙ্গী হতে পেরেছিলাম আমরা কয়েকজন। সংখ্যাটা ৪০ এর উপরে হলেও ব্যাপ্তি ছিলো দিগন্তজোড়া আকাশ অব্দি।   তারচেয়েও বেশি ছিলো আন্তরিকতাপূর্ণ প্রতিটি মুহূর্তের আসক্তি।

কাজের ধরনের কারণেই ২৪ ঘণ্টাই অন ডিউটি থাকতে হয়- এমন বেশ কয়েকটি পেশার মধ্যে সাংবাদিকতা অন্যতম।   আর এ কারণেই এসব পেশাজীবীদের  মধ্যে একধরনের ক্লান্তিবোধ থাকেই।

এই ক্লান্তিবোধ নিয়েও ২৪ ঘণ্টাই কাজে মনোযোগ দেন তারা। কিন্তু মনের অজান্তেই অবসরকে ভীষণভাবে মিস করেন এসব পেশাজীবী। বিশেষ করে যারা গণমাধ্যমের গেটকিপার হিসেবে কাজ করেন। তাদের সঙ্গে অবসর শব্দটি কোনোভাবেই যায় না।

কিন্তু এই অবসরে বসেই সেই অবসরের স্বাদ পেয়েছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমের একঝাঁক সিনিয়র সাংবাদিক, যারা নিজেদের মেধা আর শ্রম দিয়ে মূলত সংবাদ ও সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়।

নাম ধরে বলে শেষ করা যাবে না। প্রত্যেকেই নিজ নিজ আলোয় উদ্ভাসিত। তবুও সুন্দরবনের এই সফরে আমি পেয়েছি আজম মীর ভাই, কানাইদা, শংকরদা, অলোকদা, জহির ভাই, লিটন ভাই, জাকারিয়া মুক্তা ভাই, ইখতিয়ার ভাই, আনোয়ার ভাই, মারুফ ভাই আর শফিক ভাইকে।

পূর্ব পরিচিত ছিলেন বিপ্লব ভাই, নিশান ভাই আর মনির হোসেন লিটন ভাই। একেবারেই নতুন সংযোজন তুষার মীর, সাজ্জাদ, মিজান আর জাকারিয়া মন্ডল ভাই।

একেবারে অন্যভাবে পাওয়া হয়েছে সুলতানা আপাকে। আমি দূর হতেই তাকে চিনতাম কেবল। মাঝে মাঝে ফেসবুকে তার পোস্ট দেখতাম। কখনও গরম, কখনও নরম। প্রজ্ঞা, মেধা, সৌন্দর্য, সাহস আর সাবলীলতার দারুণ মিশেল তিনি। কাছে পেয়ে আরও নতুন করে পেয়েছি সুলতানা আপাকে।

আনন্দ বিলিয়ে দিতে কার্পণ্য করেননি কেউই। ছিটা কটকা থেকে বড় কটকা পর্যন্ত সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে হাঁটার সময় গাছের গুঁড়িকে বাঘ ভেবে সবার অস্থির হওয়া কিংবা হরিণের দলকে নির্বিঘ্নে বিচরণ করতে দেওয়ার জন্য সতর্কতামূলক সমস্বরে শিষ দেওয়ার কারণে যে শব্দের উৎপত্তি অথবা সুন্দরবনের স্মৃতি ধরে রাখতে প্রায় প্রত্যেকটি স্থানে ছবি তোলার হিড়িক- এ সবকিছুরই পরতে পরতে আনন্দ ছড়ানো।

অনেকেই শুনি একদিনেই বাঘ দেখে আসেন, আর আমরা চারদিন ঘুরে বেড়ালাম সুন্দরবনের তীর ঘেঁষে, কিন্তু বাঘ পেলাম না। তবে, দেখেছি বাঘের পায়ের ছাপ, অনেক হরিণ,  একটা কুমির, একটা গাঙচিল, একটা বক আর কয়েকটা পাখি চোখে পড়লো। আর মনে হলো সুন্দবন কি তার বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে?

তবে গোলপাতা যে গোল নয়, এটা নিজ চোখে দেখে বুঝেছি। বইয়ে কতবার পড়েছি, ছবিও দেখেছি- কিন্তু এবারের বোঝাটার ব্যাপারই অন্যরকম। সুন্দরী কিংবা কেওড়ার এতো ধরন- এটাও সুন্দরবনে দেখেছি।

সবচেয়ে অদ্ভুত লেগেছে সুন্দরবনকে দূর থেকে দেখে। এতো এতো গাছ। কিন্তু মাপটা দূর থেকে একই মনে হয়। মনে হয় কেউ গাছের মাথাগুলো ছেঁটে দিয়ে এক মাপে করে দিয়েছে। সত্যিই প্রকৃতি, তুমি তোমার চাইতেও সুন্দর।

মারুফ ভাইয়ের বদৌলতে ইলিশ মাছের নাচনটা ছিলো অসাধারণ। উত্তরবঙ্গে বাড়ি হওয়ার সুবাধে এ যাবতকাল ইলিশকে কেবল শুয়ে থাকতেই দেখেছি, ইলিশ যে নাচতেও পারে শুনেছিলাম কেবল। এই সফরে ইলিশের নাচনটাও ছিলো স্মরণীয় একটি সংযোজন।

স্মৃতিটুকু থাক। এ গল্পের শেষ নেই। শেষ হয় না আসলে। কর্মব্যস্ত জীবনের ক্ষণিকের অবসরের প্রত্যেকটি মুহূর্তই স্মরণীয়। সময় গড়িয়ে যায়, সবাই যার যার কর্মস্থলে ফিরে আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বাধা পড়েছেন জীবনের যাতাকলে। তবুও অবসরের এই অবসরে কিছুই হারাইনি, কেবলি পেয়েছি। সেসব পাওয়ায় পূর্ণ হয়েছে অনেক অপূর্ণতা। তাই বলতে দ্বিধা নেই গুণী এক ঝাঁক আলোকবর্তিকার সঙ্গে কাটানো সময়গুলোই তাই এখন পর্যন্ত আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত ছিলো।

চারদিনের সুন্দরবন ভ্রমণের সুযোগ দেওয়ার জন্য তাই প্রজ্ঞা ও আত্মার  প্রতি কৃতজ্ঞতা।

কৃতজ্ঞতা অগ্রজদের প্রতিও।

লেখক সাজেদা হক
সাংবাদিক, রেডিও ধ্বনি

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৬
বিএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।