ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

রুংরাং অভিযান-২

চিম্বুক রেঞ্জের সর্বোচ্চ চূড়া কির্সতং-রংরাংয়ের পথে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৬
চিম্বুক রেঞ্জের সর্বোচ্চ চূড়া কির্সতং-রংরাংয়ের পথে ছবি: জুয়েল থিওটোনিয়াস/ঠাকুর বিলাস

[পূর্ব প্রকাশের পর]

আমাদের সামনে বেশ কয়েকটি রুটম্যাপ। কোনটি দিয়ে যাবো জানি না।

এর আগে তো আসা হয়নি এখানে, বন্ধুদের দেওয়া ম্যাপই ভরসা। তার উপর এ ভয়ংকর গরমে পথের অবস্থা ও পানির উৎসের সহজলভ্যতারও একটি ব্যাপার আছে। আমাদের এই মুশকিলের আসানও হলো এক নিমিষে।

তেরো মাইলে দেখা হয়ে গেলো শুক্রসেন তঞ্চঙ্গ্যার সঙ্গে। তার দুস্রি বাজারে দোকান আছে। তিনি আলি কদম থেকে প্রয়োজনীয় বাজার করে ফিরছেন। আমাদের নিয়ে যেতে রাজি হলেন। ঠিক হলো আমরা মেনিয়াঙ্ক পাড়া হয়েই যাবো কির্সতং রুংরাং পাহাড়ের  দিকে।

ও আচ্ছা!! এতো কথার ভীড়ে এবারের অভিযান সম্পর্কে বলাই হয়নি। আমরা চলেছি চিম্বুক রেঞ্জের সর্বোচ্চ চূড়া কির্সতং ও রংরাংয়ের পথে। রুংরাং মানে হচ্ছে ধনেশ পাখি। আমাদের এবারের অভিযানের লক্ষ্য ছিলো থানচির অন্য একটি গন্তব্য। কিন্তু নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণে আর ও পথ মাড়ানোর সাহস হয়নি।   শুক্রসেন দার সঙ্গে পথচলা শুরু করতেই বুঝলাম এই ট্রেক সহজ হবে না। পাকা রাস্তা থেকে সরু একটি ট্রেইল নেমে গেছে প্রায় ২ হাজার ফুটের মতো। তার মানে এ রাস্তা নেমে আবার উঠতে হবে।

পাহাড়ের নিয়মই হচ্ছে নামলে আবার ওঠা। ট্রেকের শুরুতে শরীরে থাকে পূর্ণ শক্তি। খাঁড়া রাস্তা এক নিমিষে পার হয়ে এসে নামলাম শুকিয়ে যাওয়া এক ঝিরিতে। একটু এগিয়েই পড়লো দুস্রি ঝিরি। আহ! শরীর জুড়িয়ে গেলো। এটুকু হেঁটেই ঘাম দরদর করে নামছে। তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির কম না। সমতলের তুলনায় পাহাড়ের আবহাওয়া খানিকটা ভিন্ন। বসন্তের এ সময়ে সমতলে এতো গরম থাকে না। কিন্তু পাহাড়ে দিনের বেলা বোধহয় সূর্য একটু বেশিই তাপ দেয়। আবার রাতে বেশ ভালো রকমের শীত।

এ রাস্তা ধরে মেনকিউ পাড়ায় যেতে হলে অন্তত পঞ্চাশ ষাট বার ঝিরি এ পার ওপার করতে হয়। ঝিরিতে এখন স্রোত নেই। তাই এ পানি খাওয়া নিরাপদ না। কিছুটা হেঁটে কানে এলো পানির কলকল শব্দ। ট্রেইলের পাশে ঝোপঝাড়ে ঢাকা এক জায়গায় ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম পাহাড়ের খাঁজ থেকে নেমে আসছে ছোট পানির ধারা। তার গতি বেশ তীব্র। হয়তো অসূর্যস্পর্শা এ ধারা বেরসিক মানুষের চোখ এড়াতেই ঝোপঝাড়ের আড়ালে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু তৃষ্ণার্ত মানুষ ছাড়বে কেন! অনেক খানি এগিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসতে হলো তার কাছে।

অতঃপর ইচ্ছেমতো বরফ শীতল পানি পান আর বোতলে ভরে নেওয়া। এভাবে দেড় ঘণ্টা হাঁটার পর দেখা পাওয়া গেলো মেনকিউ পাড়ার। বিদায় নিলেন শুক্রসেন দা। এখান থেকে দুস্রি বাজার ২০ থেকে ২৫ মিনিটের পথ।   খুঁজতে হবে গাইড। সে আমাদের নিয়ে যাবে মেনিয়াঙ্ক পাড়া অবধি। কিন্তু এ ভর দুপুরে পাড়ায় পুরুষ কাউকে খুঁজে পাওয়াটাই দুষ্কর। সবাই জুমের কাজে চলে গিয়েছে। এমন সময় সেখানে দেখা রাজীব মুরংয়ের সঙ্গে। মেনিয়াঙ্ক পাড়া একটি মুরং পাড়া। এখানে প্রায় ৩০, ৪০ ঘর মুরং পরিবারের বাস। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও আছে। রাজীব সেই স্কুলের শিক্ষক। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর লিউ ল এবং মাগিয়াঙ্ক নামে পাড়ার দুই কিশোরকে রাজি করানো গেলো মেনিয়াঙ্ক পাড়া পর্যন্ত যেতে। তারা দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য কিছু সময় চেয়ে নিলো। এ ফাঁকে আমরা ঝিরির পাশে চালাঘরে জিরিয়ে নিলাম।

চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৬
এএ

**
রুংরাং কির্সতং অভিযান-১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।