ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

জলাধারে পাহাড়ি মহামায়া

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৬
জলাধারে পাহাড়ি মহামায়া

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে ফিরে: স্বচ্ছ জল থৈ থৈ চারদিকে। ফাঁকে ফাঁকে সবুজ পাহাড়ের ভাঁজ।

অথবা চারদিকে সবুজে মোড়ানো পাহাড়, তার ভাঁজে ভাঁজে স্বচ্ছ জল তরঙ্গ। মহামায়ার ‘মায়া’ কেবল এ দুরকম বর্ণনায়ই সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। গিরি-নদীর মিলনস্থলে ছায়া হয়ে দিগন্তে মিশে যাওয়া নীলাকাশের আয়নার মতো এ মহামায়া যেন শিল্পীর ক্যানভাসে কল্পনার রঙে আঁকা ছবি৷ এ সৌন্দর্যের মায়ায় দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মহামায়া ইকোপার্ক ও লেক।

শনিবার (৯ জুলাই) ঈদুল ফিতরের তৃতীয় দিন সেখানে গিয়ে দেখা যায় পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়৷

এ ইকোপার্কের দায়িত্বে থাকা ইজারাদার আবু সুফিয়ান বিপ্লব জানান, গতবারের তুলনায় এবারের ঈদ মৌসুমে অনেক বেশী দর্শনার্থী এসেছে।

১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের স্বচ্ছ এ লেকের চারদিকে সারি সারি পাহাড়ের ভাঁজ। পৃথক দ্বীপের মতো পাহাড় লেকের মাঝেও, সেই খণ্ড খণ্ড দ্বীপ পাহাড় যেন একেকটি থাইল্যান্ডের জেমস বন্ড আইল্যান্ড। পাহাড় মোড়ানো সবুজের মায়াবী চাদরে। সেই মায়া যেন ডাকে হাতছানি দিয়ে।

প্রকৃতির এমন অপরূপ মায়ার হাতছানি ফেরানোর সাধ্যি ভ্রমণপিপাসুদের নেই বলেই যেন দিনে দিনে জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠছে এটি। বন বিভাগ লেকের বুকে জেগে থাকা সেই আইল্যান্ডের চূড়ায় আধুনিক কটেজ তৈরি করে যেন লোভ জাগিয়ে দিয়েছে আরও।

আরো টানবে জলাধারে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে সৌন্দর্য উপভোগের সুবিধার্থে লেকে ভাসানো রঙিন নৌকাগুলো।

ইজারাদার বিপ্লব জানান, মহামায়া লেকের জলরাশির প্রেমে পর্যটককে বন্দি করে রাতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করাতে পাহাড়ের চূড়ায় কটেজ তৈরি করা হয়েছে। কটেজে দু’টি বেডরুম, আলাদা কিচেন, ডাইনিং, ওয়াশরুমও রয়েছে। কটেজ চালু হলে পর্যটকের কাছে মহামায়ার জৌলুস অনেক বেড়ে যাবে।

২০১০ সালে মহামায়া পর্যটন কেন্দ্রটি তৈরি করে সরকার। লেকটিকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে কটেজ নির্মাণ করার পাশাপাশি এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ের মধ্যে কেবল কার, পাহাড়ে পাহাড়ে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার তৈরি শুরু করেছে বন বিভাগ, প্রতিদিনই চাপ বাড়তে থাকায় লেকের পাড়ে পর্যটকের বসার জন্য দৃষ্টিনন্দন ছাতার টেবিল, ইটের চেয়ার ও আড্ডা স্পট তৈরি করা হয়েছে। গড়ে উঠেছে উন্নত মানের খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। রাজস্ব বাড়াতে দর্শনার্থীর কাছে প্রবেশ ফি ১০ টাকা, লেকে প্রতি ঘণ্টায় ইঞ্জিন বোটে ঘুরতে ৩০০ টাকা, গাড়ি পার্কিং সিএনজি ১০ টাকা, কার-মাইক্রো ২০ টাকা হারে অর্থ আদায় করছে বন বিভাগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
 
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইকোপার্কটির ইজারাদার বিপ্লব মনে করেন, মহামায়াকে আরও আকর্ষণীয় করা গেলে প্রচুর পর্যটক আসবে। সরকারও রাজস্ব পাবে ৷

কুমিল্লা শহর থেকে মহামায়ায় ঘুরতে এসেছেন ফয়সাল। তিনি বলেন, এ লেকের সৌন্দর্যের তুলনা হয় না৷ তবে নিরাপত্তার ঘাটতি থাকায় এখানে পর্যটকরা তেমন আসতে চান না ৷ সন্ধ্যা হলেই ভয় কাজ করে।
 
মহামায়া ইকোপার্কের দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে জানতে চাইলে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ ভূইয়া বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য এ এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন থাকে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় তারা সদা তৎপর।

মহামায়ায় যেভাবে যেতে হয়
ঢাকা থেকে -
রাঙামাটির কাপ্তাই লেকের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহামায়া প্রাকৃতিক লেকে ঢাকা থেকে আসতে হলে কমলাপুর টার্মিনাল থেকে উঠতে হবে বিআরটিসির চট্টগ্রামমুখী বাসে। মিরসরাই বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি অটোরিকশা বা অন্য কোনো বাহনে ঠাকুরদিঘী বাজারে এসে পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে মহামায়ায় প্রবেশ করতে হবে। ঢাকার বাইরেi অন্য জেলা থেকে মহামায়ায় যেতে চাইলে চট্টগ্রামমুখী বাসে উঠে মিরসরাই বাসস্ট্যান্ডে নেমে আগের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করতে হবে।

চট্টগ্রাম থেকে -
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী বাসে উঠতে হবে। এই রুটেও এসে মিরসরাই নেমে আগের নির্দেশিত পথে মহামায়ায় ঢুকতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৬
জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।