ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

মনোমুগ্ধকর শাপলার বিলে ঘুরে আসুন

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৬
মনোমুগ্ধকর শাপলার বিলে ঘুরে আসুন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরিশাল: পার্বন কিংবা সাধারণ ছুটিতে ঘুরে আসুন বরিশালের মনোমুগ্ধকর শাপলার বিলে।
শাপলার বিলে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস জুড়েই থাকবে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

প্রথম দেখাতে মনে হবে সবুজের মাঝে যেন লাল রঙের ছড়াছড়ি। আর পানিতে সূর্যের আলোর ঝলকানি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় এর সৌন্দর্য।

বরিশালের উজিরপুর ও আগৈলঝাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চলে (বিলে) প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শাপলার বিল যেমন মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘোরাচ্ছে। তেমনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আকর্ষণ করছে পর্যটকদের।

স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আগস্টের শেষ থেকে মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার এ বিল দেখতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে। লাল শাপলার পাশাপাশি এখানে দেখা মেলে সাদা শাপলারও।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বিলে তিন ধরনের শাপলা হয়ে থাকে। যার মধ্যে একটির রঙ লাল, একটির সাদা ও একটি বেগুনি রঙের। এরমধ্যে সবজি হিসেবে সাদা শাপলার কদর বেশি। আর লাল শাপলার কদর থাকলেও এটি রান্না করতে অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই এটি পর্যটকদের কাছেই বেশি কদর পেয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, দিন যত যাচ্ছে বিলের পানির উচ্চতা কমে যাচ্ছে ও বিলের বিভিন্ন অংশ আটকে মাছের চাষ হওয়ার কারণে শাপলার পরিমাণ কমছে।

তবে, বছরের বেশিরভাগ সময় এই শাপলার বিলের ওপরই নির্ভরশীল থাকছে আশপাশের এলাকার কয়েক’শ পরিবার। এদের কারো জীবিকার মাধ্যম শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করা, আবার শাপলার বিলে মাছ শিকার করে তা বিক্রি করে। এ বিলে ছোট-বড় কৈ, খলিসা, টাকি, শৌল, পুটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।

দক্ষিণ বাগদা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম বাংলানিউজকে জানান, নভেম্বরের শেষ ও ডিসেম্বরের শুরুতে বিভিন্ন জমির মালিক শাপলাগাছের গোড়া কেটে দেন। তবে, এতে বীজের কোনো ক্ষতি হয় না। আর গোড়া কেটে দিলে তার জমির ওপরে পানির সঙ্গে মিশে পঁচে মাটির উর্বরতার জন্য ভালো সারের কাজ করে। পানি কমতে শুরু করলে বাংলা অগ্রাহায়ণ থেকে মাঘ মাসের মধ্যে এক ফসলি এ জমিতেই বোরো ধানের আবাদ করা হবে বলে জানান তিনি।

বরিশাল সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের উত্তর সাতলা গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা ও খাজুরিয়া গ্রামের কয়েক’শ হেক্টর জমি নিয়ে এ বিলের মূল অবস্থান। সড়ক পথে যেতে হয় এখানে।

বরিশাল থেকে সরাসরি সাতলার উদ্দেশে বাস ছাড়ে নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে, যেখানে জনপ্রতি যেতে ৯০ টাকা খরচ পরবে। এছাড়া মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও কিংবা মাহিন্দ্রা ভাড়া করেও যাওয়া যায়, এতে ৫শ’ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকার মতো বাহনভেদে যাওয়া-আসায় খরচ পড়বে।

শাপলার বিলের খুব সকালেই যাওয়া শ্রেয়, এজন্য ভোররাতে রওয়ানা দেয়া যেতে পারে। তবে, আগের রাতে গিয়ে উজিরপুর উপজেলা সদরে থাকা যেতে পারেন। যদিও থাকার জন্য স্বল্প ব্যবস্থা রয়েছে উজিরপুরে।

এদিকে, এ বিলের পাশের সড়ক ধরে প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে ডিঙি নৌকা, যা নিয়ে আপনি ঘুরতে পারবেন বিলে। এক্ষেত্রে অল্প টাকার বিনিময়ে একজন মাঝিও পেয়ে যেতে পারেন। তবে তার বসতবাড়ি বিলের পাশে হলে আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে যেতে হবে।
সর্বোপরি বিলে ঘুরতে গেলে ভালোমানের একটি ক্যামেরা নিতে যেন ভুলে না যান এমনটাই পরামর্শ  দিয়েছেন আলোকচিত্রী ও স্থানীয় পর্যটক আরিফুর রহমান। তিনি বিভিন্ন সময় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে সময় দিয়েছেন এই বিলে। তারমতে, দক্ষিণের এই জনপদে আবাসন ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে শাপলার সময়ে প্রচুর পর্যটক এখানে আসবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৫২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৬
এমএস/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।