ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

১৩০০০ ফুট উপরে প্লেন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
১৩০০০ ফুট উপরে প্লেন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া খোলা আকাশে প্লেন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া ;ছবি- বাংলানিউজ

পাতায়া, থাইল্যান্ড থেকে ফিরে: পিলাটাস পিসি-৬ পোর্টার প্লেনটি লম্বায় ১১ মিটার। প্লেনের দরজা খুলে আর বেশি সময় নেয় না ম্যাট। বরং আমাকে পা’দুটো দরজার বাইরে ঝুলিয়ে দিতে বলে। নিচে তখন সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। ১৩ হাজার ফুট উপর থেকে পাতায়ার সবুজ ভূমি দেখা যাচ্ছে না। পা ঝোলাতেই মেঘের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে ম্যাট। তার বুকের সঙ্গে বেঁধে আছি আমি। 

৩ থেকে ৪ সেকেন্ডের মতো ফ্রি ফল। এই সময়টা বিভীষিকাময়।

চোখে প্লাস্টিকের চশমা থাকায় মেঘের ওপরে ঘুরতে ঘুরতে মেঘের ভেলায় নিজেকে ডুবতে দেখা যায়। কিন্তু সেটাও বিভীষিকাময় সৌন্দর্য। মেঘের উপরে বাতাসের গতি এমন যে শরীরের মাংসগুলোকে উড়িয়ে নিতে চায়। বিমান থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরপরই হৃদস্পন্দন তড়িৎ গতিতে ওঠানামা করতে থাকে। সেখানে চিৎকার করে সেই উত্তেজনাটাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করি।  

এই কয়েক সেকেন্ডে ফেলে আসা জীবনের সব হিসেব সামনে চলে আসে। কারণ কয়েক মুহূর্তের জন্যে এটাও মনে হয় যে, এখানেই বুঝি জীবনের শেষ। মনে হতে থাকে, এখান থেকে ঠিকমতো নামতে পারলে এক নতুন জীবন লাভ করা যাবে। তবে যদি সত্যি নিচে নামা হয়!প্লেন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া; ছবি- বাংলানিউজ

এরই মধ্যে উল্টে পাল্টে বাতাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে দুজনের শরীরকে স্থির একটি অবস্থায় নিয়ে আসে ম্যাট। ছোট একটি ব্যালেন্স বেলুন ওপেন  করে দেয়া হয়। মেঘের ওপরে ভাসতে থাকি আমরা। আকাশে মাছের মতো ভেসে বেড়াচ্ছি। এ সময় ফটোর দায়িত্বে থাকা ডাইভার রোবার আরো এগিয়ে আসে। আমার হাত ধরার চেষ্টা করে। মুহূর্তের মধ্যেই সবকিছু ঘটতে থাকে। বাতাসের শব্দে কানে তালা লাগার অবস্থা। আধ মিনিটের মধ্যেই নিচের সবুজ কিছুটা দেখা যায়। এই সময়ই বড় প্যারাস্যুট খুলে দেয় ম্যাট। আমার হাতে ধরিয়ে দেয় প্যারাস্যুট কন্ট্রোলের দুটি দড়ি। বলে, শক্ত করে নিচে টানতে। কিন্তু বাতাসের একটি ঝটকা আবোরো কয়েকশ মিটার উপরে আমাদের উঠিয়ে নিয়ে যায়।  প্যারাস্যুট খুলে দেয়ার পর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হলো ম্যাটসের। বরং প্যারাস্যুট নিচে তো আমরা ওপরে, এভাবে ডিগবাজি খেতে লাগলো। ভয়ে তখন হৃৎপিন্ড কুঁচকে যাওয়ার অবস্থা। তবে জোরে জোরে কথা বলে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলাম। তুলোর মতো মেঘকে কাটিয়ে নিচে নেমে যেতে থাকি আমরা।  

কিছুক্ষণের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আসে প্যারাস্যুট। দ্রুত নিচে নেমে যেতে থাকে। মাটি থেকে দুই বা আড়াইশো মিটার উপরে যখন তখনই কিছুটা স্বস্তি আসে। নিরাপদেই ল্যান্ড করছি নিশ্চিত হওয়া যায়। ল্যান্ড করার সময় পা’দুটিকে যতোটা সম্ভব সামনে প্রসারিত করে রাখতে হয়। তা না হলে পা ভেঙ্গে গুড়িয়ে যেতে পারে।  ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে প্লেনের ভেতর ; ছবি- বাংলানিউজ সকালের বৃষ্টিতে ঘাস ছিল ভেজা। সবুজ ঘাসের ওপর নিরাপদেই নামি আমরা। ম্যাটস এবং রোবার দৌড়ে এসে হাত মেলালো। অভিজ্ঞতা জানতে চাইলো আর কয়েক সেকেন্ড চুপ হয়ে বসে থাকতে বললো। এরই মধ্যে ইনসট্রাকটর সহ নেমে এসেছে চায়নিজ তরুণী লিয়ানা। জানতে চাইলাম, 'অভিজ্ঞতা কেমন?' সে বললো, অসাধারণ। তবে তার ইন্সট্রাকটর বললেন, মোটেও অসাধারণ নয়। বরং লিয়ানা এতো ভয় পেয়েছিলো যে তাকে শান্ত করতে বেশ সময় লেগেছে।  

১২ জুলাই সকালেই পাতায়া শহর থেকে শ্রীচরুইতে রওনা দেই। সেদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি ছিল। স্কাই ডাইভিংয়ের জন্যে কয়েকশত একর জমির ওপর এই আয়োজন। সেখানে প্রথমেই ফর্মে স্বাক্ষর দিয়ে জানাতে হয়, 'এখানে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ী থাকবে না। ' এমন একটি ফর্মে স্বাক্ষর দেয়ার সময় বেশ কয়েকবার কলম চলতে চায় না। তবে অসাধারণ এই অভিজ্ঞতা নিতে স্বাক্ষর করে যায় এ্যাডভেঞ্চার প্রিয়রা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৬০১ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
এমএন/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।