ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

ইতিহাস-ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে চান বিশ্ব পর্যটক এলিজা

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৯
ইতিহাস-ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে চান বিশ্ব পর্যটক এলিজা

ভোলা: দেশে প্রত্নতাত্ত্বিক ও ট্যুরিজমকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চান বাংলাদেশি বিশ্ব পর্যটক ও লেখক এলিজা বিনতে এলাহী। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি একাই দেশের ৩৮টি জেলা ভ্রমণ করেছেন। আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সব কয়টি জেলা ভ্রমণ করবেন তিনি।

সরেজমিন ঘুরে তিনি দেশের প্রাচীনতম ইতিহাস ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর তথ্য, ভিডিও ও স্থিরচিত্র সংগ্রহ করছেন। এতে একদিকে যেমন নতুন প্রজন্মের কাছে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে।

অন্যদিকে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর নাম ও পরিচিতি।

বাংলাদেশি বিশ্ব পর্যটক এলিজা বিনতে এলাহী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক বা হেরিটেজের ট্যুরিজমে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। কিন্তু যেগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণের তেমন উদ্যোগ নেই। আমি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জনপদ ঘুরে সেসব স্থানের তথ্য তুলে আনছি। দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে যা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি দেশে পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছি।  

ভ্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এলিজা বলেন, সারাদেশে ছড়িয়ে আছে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা যা হেরিটেজ ট্যুরিজমকে করতে পারে সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময়। এসব ঐতিহ্য স্থাপনাগুলোকে সংরক্ষণ ও সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার ভ্রমণ করছি। এসব ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছি যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাজে লাগবে বলে আমি মনে করি।

বিশ্ব পর্যটক এলিজা বিনতে এলাহী ১৯৯৯ সাল থেকে এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো ভ্রমণ সুরু করেন, যা এখনো অব্যাহত আছে। গত ২০ বছরে এ পর্যন্ত ইউরোপ ও এশিয়ার ৪৬টি দেশের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ভ্রমণ সমাপ্ত করেন।

বিশ্ব পর্যটক ও লেখক এলিজা বিনতে এলাহীদেশের বাইরে ঘুরতে গিয়ে নিজ দেশের স্থাপনাগুলো ঘুরে দেখার তাগিদ থেকে ২০১৬ সাল থেকে হেরিটেজ ট্যুর শুরু করনে তিনি। ঢাকার বলধা গার্ডেন দিয়ে বাংলাদেশ ভ্রমণ শুরু হয় এলিজার। এখন পর্যন্ত ভোলাসহ মোট ৩৮টি জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো প্রাথমিকভাবে ভ্রমণ ও তথ্য সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করেন এলিজা।

ভ্রমণ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ব ট্রাভেলার এলিজা বলেন, সমগ্র বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষ করে সংগৃহীত তথ্য, স্থিরচিত্র ও ভিডিও দেশ ও জাতির উপকারে লাগে সে ব্যাপারে বিস্তৃত পরিকল্পনা রয়েছে। যার মধ্যে প্রতিটি বিভাগ এবং সম্ভব হলে জেলা ভিত্তিক বই ও স্থিরচিত্র দিয়ে তথ্যবহুল ছবির অ্যালবাম প্রকাশ করতে চাই। টেলিভিশন ও ইন্টারনেটে ভিডিও ডকুমেন্টারি ও ট্রাভেল শো করারও ইচ্ছা আছে।

‘বিভাগীয় ও কেন্দ্রীয়ভাবে হেরিটেজ ফেয়ারের মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে হেরিটেজ ট্যুরিজমকে বিস্তৃত করার পাশাপাশি ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো যেন সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয় সে ব্যাপারে দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্ট মহলের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। ’

তিনি বলেন, ভ্রমণ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিকূলতা পড়তে হয়েছে। একজন নারী হিসেবে ভ্রমণ করতে গিয়ে বিভিন্ন জেলায় আবাসন সংকটে পরতে হয়েছে। এক্ষেত্রে সবসময় একজন পুরুষের সাহায্য নিতে হয়েছে যা কাজের কিছুটা হলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে সহযোগিতাও পেয়েছি।

বিশ্ব পর্যটক এলিজা বিনতে এলাহী চলতি মাসের ২২ ও ২৩ মার্চ (শুক্র ও শনিবার) ভ্রমণ করেন দ্বীপজেলা ভোলা। এ জেলার চরফ্যাশন ও ভোলা সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দর্শনীয় স্থানের স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণ করেন তিনি।  

ভোলা সম্পর্কে এলিজা বলেন, ভোলার ভূপৃষ্ঠেই ভোলার হেরিটেজ। কারণ ১২৩৫ সালের দিকে এ অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ গঠিত হয়। আর ১৩০০ সালের দিকে মানুষের বসতি ও চাষাবাদ শুরু হয়। তাই এ অঞ্চলের মানুষ আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আমাদের হেরিটেজের অংশ।

ভ্রমণকন্যা বলেন, নদীবিধৌত ও সমুদ্র উপকূল হওয়ার কারণে এখানকার বেশিরভাগ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মনপুরার মতো ঐতিহাসিক দ্বীপে পর্তুগিজরা যে একসময় ভাগ্যান্বেষণে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস গড়ে তুলেছিল। আজ তা স্মৃতির গর্ভে বিলীন। তারপরেও চরফ্যাশনে জ্যাকব ওয়াচ টাওয়ারের মতো স্থাপনা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছোট ছোট দীপগুলো ভোলা জেলা পর্যটনের সম্ভাবনাময় এক জনপদের নাম।

বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ এশিয়ার সহকারী অধ্যাপক এলিজা কোয়েস্টয়ের আওতায় হেরিটেজ ট্যুরিজমকে নিয়ে কাজ করছেন। ভবিষ্যতে তিনি এটিকে আরও বিস্তৃত করতে চান।

বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ করার সময় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছ থেকে প্রচুর সহযোগিতা ও উৎসাহ পেয়েছেন তিনি। বিশেষ করে স্থানীয় সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক ও তরুণদের বিভিন্ন সংগঠন অপ্রত্যাশিত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

এশিয়ার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে রয়েছে তার দু’টি  প্রকাশনা। যার একটি ‘এলিজা’স  ট্রাভেল ডায়েরি’ ও অপরটি ‘এলিজা’স  ট্রাভেল ডায়েরি-২’।

এ ব্যাপারে এলিজা বিনতে এলাহী বলেন, আমি চাই দেশের মানুষ ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আরও সচেতন হবে। বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্ম নিজেদের সমৃদ্ধ জনপদ সম্পর্কে জানবে এবং তা বিশ্ববাসীর কাছে তা তুলে ধরবে। সেইসঙ্গে প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটন বা হেরিটেজ ট্যুরিজম বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত হলে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে তৈরি হবে নতুন নতুন উদ্যোক্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।