ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫২)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২০
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫২)

বাবর আলী। পেশায় একজন ডাক্তার। নেশা ভ্রমণ। তবে শুধু ভ্রমণ করেন না, ভ্রমণ মানে তার কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিও। ভালোবাসেন ট্রেকিং, মানুষের সেবা করতে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এই ডাক্তার হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সেটা আবার ৬৪ দিনে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সেটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন বাংলানিউজের ট্রাভেলার্স নোটবুকে। ৬৪ দিনে থাকবে ৬৪ দিনের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা।

দিন ৫২
মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ-দাউদকান্দি (কুমিল্লা)-গোয়ালমারী (কুমিল্লা)= ৪৬.৭০ কিলোমিটার।
 

সকালটা শুরু হল সুপার মার্কেট মোড়ের মাঠা আর ছানা খেয়ে।

দিগন্ত আর আশিক- এই দুইজন আজ সঙ্গী। মুক্তারপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে অল্প হাঁটতেই মুক্তারপুর সেতু। ধলেশ্বরী নদীর উপরে এই বিশালাকার সেতুটি।  

কাল রাতেও কিছুটা সময় কাটিয়েছিলাম এই সেতুর উপর। এই সকালে ওপাশের বিশাল সব সিমেন্ট কারখানাগুলো দৃশ্যমান। কারখানাগুলো এগোতে এগোতে একেবারে নদীর মধ্যেই ঢুকে পড়েছে। সেতুর বামপাশে অসংখ্য রাইস মিলের চিমনিগুলো ধোঁয়া ছাড়ছে ভকভক করে।  

হাজীগঞ্জ দুর্গ।  ছবি: লেখক কিছুটা এগোতেই ‘রোম ভারা দেওয়া হবে’ শীর্ষক সাইনবোর্ড নজর কাড়ল। ভাড়া-শব্দটা আমরা বাংলাদেশিরা সম্ভব সবভাবেই লিখে ফেলেছি। চর মুক্তারপুরের পরে মুন্সিগঞ্জের সীমানা ছাড়িয়ে নারায়ণগঞ্জে। এখান থেকেই দিগন্ত আর আশিক বিদায় নিল।

চর সৈয়দপুরের ভেতর দিয়ে পথ চলছি। রাস্তার অবস্থা ভয়ংকর। ভাঙা এবড়োথেবড়ো রাস্তা তার উপর ভয়াবহ ধুলাবালি। গুগল ম্যাপে চোখ না বুলানোর মাশুল দিতে হল পথ ভুল করে! কিলোমিটারের মতো অতিরিক্ত হাঁটার পর সঠিক রাস্তা খুঁজে নিয়ে সেদিকপানে এগোতেই বন্ধ পেলাম রাস্তা।  

সেতু নির্মাণের জন্য আবার বিকল্প রাস্তা। পুরান সৈয়দপুর হয়ে আল-আমিননগর যেতেই ডানদিকে পেলাম শীতলক্ষ্যা নদী। শহীদ বাপ্পী সরণি ধরে নিতাইগঞ্জ৷ সারি সারি ট্রাক মাল খালাসের অপেক্ষায় আছে। শ্রমিকেরা ব্যস্তসমস্ত হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেই যাচ্ছে। এই জায়গাটা অবিকল চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মতো। ঠিক ওরকমই ঘিঞ্জি।

টানবাজার হয়ে হাসপাতাল ছাড়িয়ে বরফকল। এখানেই অপেক্ষা করছিলেন মুন্না ভাই। কতদিন পর দেখা উনার সঙ্গে। সেই টেকনাফ-তেঁতুলিয়া ক্রস কান্ট্রি রাইডে দেখা হয়েছিল মদনপুরে। আরেক দফা নাশতা খেতেই হলো ভাইয়ের সঙ্গে। হাঁটার সময় খাওয়ার জন্য কিছু ফলও পুরে দিলেন ব্যাকপ্যাকে।  

উনার কলিগ রিফাত ভাই এসে এক ফাঁকে দেখা করতেই আমরা পা বাড়ালাম হাজীগঞ্জ দুর্গপানে। দেখতে অনেকটাই ইদ্রাকপুর দুর্গের মতই। চারপাশে লাল ইটের পাঁচিল দেওয়া দুর্গের ভেতরটা ফাঁকা। সেখানে হৈ-হুল্লোড় করে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে। মাঝে সুন্দর পিচও করা আছে। মুন্না ভাই এলেন গুদারাঘাট পর্যন্ত। এখান থেকেই কালো কুচকুচে পানির শীতলক্ষ্যা ধলেশ্বরী নদী।  ছবি: লেখক পাড়ি দিলাম। উৎকট গন্ধ আসছে পানি থেকে।

গুদারাঘাটের ওপারেই নবীগঞ্জ। বন্দর উপজেলার সীমানা এখান থেকেই শুরু। তিনগাঁও, মিনার বাড়ী হয়ে কাইকারটেকের কাছেই নদী। নদীর একেবারে পাড়ঘেঁষা দারুণ সরিষা ক্ষেত। কাবিলগঞ্জ পার হয়ে সোনারগাঁ সরকারি কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা দেখে কিছুক্ষণ থামলাম। ভিড়ের মধ্যে মাথা গলিয়ে বর্শা নিক্ষেপ ইভেন্টটা পুরোটা দেখেও নিলাম। মোগরাপাড়া থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে৷ 

সরিষা ক্ষেত।  ছবি: লেখক ব্যস্ততম সড়কের অন্যতম এটি৷ পিরোজপুর, আষাঢ়িয়ার চর হয়ে মেঘনা সেতুতে। গজারিয়া উপজেলা শুরু সেতুর ঠিক ওপাড় থেকে। একে একে পার হলাম তেতৈতলা, বালুয়াকান্দি, ভাটের চর। অগণিত গাড়ি পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগই যাত্রীবাহী বাস৷ বিকট হর্ণের শব্দে কান পাতা দায়। চার লেন রাস্তা হবার সুবাদে চলছে ওভারটেকিং এর অসুস্থ এক প্রতিযোগিতা। আনারপুরার পরে এক জায়গায় এই সময়েও প্রচুর কাশফুল।

ভিটিকান্দি, ভবের চর হয়ে দ্বিতীয় গোমতী সেতু। নিচে বয়ে যাচ্ছে গোমতী। বিশাল সেতু অতিক্রম করেই কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দিতে প্রবেশ করলাম। বলদাখাল থেকে ডানে মোড় নিয়েই হাইওয়ে ছাড়লাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ দাউদকান্দিতেই থাকার কথা। হাতে সময় থাকায় কিছুটা পথ এগিয়ে রাখার প্রচেষ্টা। এই রাস্তার অবস্থা বেশ সঙ্গীন। এমনকি রাস্তার পাশে হাঁটার জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই।

গোমতী নদী।  তার উপর ধুলো। এই রাস্তার ধুলাবালির পরিমাণ দেখে মনে হল এর চেয়ে মহাসড়ক ঢের ভালো। বিশাল একটা মাহফিলকে কেন্দ্র করে লাইটিং করা হয়েছে প্রচুর। এর আশপাশে বসে গেছে মেলা। ছেলে-বুড়ো সবাই দলে দলে ওদিকেই ছুটছে।  

গোয়ালমারী বাজারে এসে আজ দিনের মতো হাঁটায় ক্ষ্যান্ত দিলাম। বাকিটুকু পথ সিএনজি অটোরিকশা যোগে দাউদকান্দি এসে সাইফুল ভাইকে ফোন দিয়ে পথের হদিস জেনে নিলাম। সাইফুল ভাইয়ের দোকানটা উপজেলা পরিষদের গেটের ঠিক উল্টোদিকে। কফি-বিস্কুট খেয়ে রওনা দিলাম উনার বাড়ির দিকে।

আরও পড়ুন
** 
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, মার্চ  ২০, ২০২০
এমএ/   

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।