ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬২)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১১ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২০
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬২)

বাবর আলী। পেশায় একজন ডাক্তার। নেশা ভ্রমণ। তবে শুধু ভ্রমণ করেন না, ভ্রমণ মানে তার কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিও। ভালোবাসেন ট্রেকিং, মানুষের সেবা করতে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এই ডাক্তার হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সেটা আবার ৬৪ দিনে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সেটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন বাংলানিউজের ট্রাভেলার্স নোটবুকে। ৬৪ দিনে থাকবে ৬৪ দিনের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা।

দিন ৬২
বান্দরবান-লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)-মিডওয়ে ইন (লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম)= ৪২.০৯ কিমি

সিফাত ভাইয়ের বাসায় কবজি ডুবিয়ে গলা অবধি খেয়ে ঘুমোতে ঘুমোতে বেশ রাত। আজকের পথ খুব বেশি না বলে তাড়াও নেই খুব একটা।

কিন্তু অভ্যাসবশত সাড়ে পাঁচটা বাজতেই ভেঙে গেলো ঘুমটা। খানিকক্ষণ গড়াগড়ি করে রাস্তায় বেরিয়েই পড়ে গেলাম প্রচুর লোকের ভিড়ের মধ্যে। বড়দিনের ছুটিতে বান্দরবানের রাস্তা গিজগিজ করছে অসংখ্য মানুষে।

চাঁদের গাড়ির কাউন্টারে ঈদের আগের টিকিটপ্রত্যাশী লোকেদের মতো বেজায় ভিড়। বাস স্টেশন থেকে কেরাণীহাট অভিমুখে যাত্রা করতেই ছোট্ট একটা আপহিল। পাহাড়ের গায়ে তখনো লেপ্টে আছে কুয়াশা। কিছুটা সামনে এগিয়েই বনপ্রপাত। কানাপাড়া রাস্তার মাথার পর থেকে সাজানো সব আনারস বাগান রাস্তার ধারে। সেসব ছাড়িয়ে লালমোহন।

দেশীয় প্রযুক্তির দুর্ঘটনা প্রতিরোধক ফ্রেম আছে, আয়না নেইমেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের পর থেকে রাস্তার স্থানে স্থানে চলছে সংস্কারকাজ। এই পথে যাদের নিত্য চলাচল, কানা বাঁকগুলোতে লাগানো আয়নাগুলো তাদের চেনা। অন্ধ বাঁকগুলোতে অপরপাশের যানবাহন দেখার সুবিধার্থে লাগানো এই আয়নাগুলো সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশ সহায়ক৷ দুঃখের বিষয় বেশ কয়েকটা জায়গায় ফ্রেম থাকলেও আয়নাগুলো নেই। মেঘলার পর থেকে শুরু রিসোর্ট এরিয়া। বেশ অনেকগুলো রিসোর্ট কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে।  

উঁচু উঁচু পাহাড়গুলোর পাদদেশের নিচু জমিতে প্রচুর শিমের চাষ। এই রাস্তাটা আমার বহুদিনের চেনা। হাঁটার অভিজ্ঞতাও আছে এ রাস্তায়। গতবছর শীতের এমনই কোনো এক সময় কেরাণীহাট থেকে বান্দরবান হেঁটেছিলাম আমরা কজন। সুদীপ্ত, অপরাজিতা আপু, নাদিয়া, মৌ, আফরিন এরা কজন সঙ্গী ছিল সেবার। এবার যদিও হাঁটছি গতবারের উল্টোপথে। এবার বান্দরবান থেকে কেরাণীহাট হয়ে লোহাগাড়ার পানে।
আধুনগরের ময়লার ভাগাড়রেইচা আর্মি ক্যাম্পে সংকেত দিয়ে থামতে বলে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখতে চাইলো। পরিচয়পত্রের ছবি দেখে চেকপোস্টে কর্মরত সেনাবাহিনীর ভদ্রলোক গালভরা হাসি উপহার দিলেন। ফিরতি হাসি দিয়ে আমি আবার পথে। রেইচার পর থেকে রাস্তা মোটানুটি সমতল। সুয়ালক মাঝের পাড়া পার হয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাইনবোর্ডে লেখা -ঘুরে দেখি নিজ দেশ, কি সুন্দর বাংলাদেশ। লেখাটা বেশ মনে ধরলো।  

হলুদিয়া বাজার থেকে আবার প্রবেশ করলাম চট্টগ্রামে। উপজেলার নাম সাতকানিয়া। এই রাস্তার প্রত্যেকটা সেতু নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুগুলোর আশপাশে ধূলার কারণে টেকা দায়। সেসব উপেক্ষা করেই প্রত্যেকটা ব্রিজের পাশেই প্রচুর লোক দাঁড়িয়ে আছে। অখণ্ড মনোযোগের সঙ্গে শ্রমিকদের কাজ দেখছে। ভয়াবহ কৌতূহলী একটা জাতি আমরা। ছোটবেলা থেকেই অবশ্য এই দৃশ্য দেখে দেখে চোখ সওয়া হয়ে গেছে।

বাজালিয়া পার হয়ে বুড়ির দোকানের ঠিক পরেই বায়তুল ইজ্জত। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ট্রেনিং স্কুল এটা। শেষ মাথায় বিজিবি হাসপাতাল। একই ধাঁচের হাসপাতাল আছে চুয়াডাঙ্গা এবং ঠাকুরগাঁওতেও। কিছুটা এগিয়ে দস্তিদার হাট থেকে বামের রাস্তা ধরায় খানিকক্ষণের জন্য মহাসড়ক থেকে নিষ্কৃতি। এই রাস্তাটা এগিয়েছে গ্রামের ভেতর দিয়ে। বেশ নিরিবিলি রাস্তা। ফকিরহাট হয়ে মিঠা দিঘি থেকে আবার মহাসড়কে। ছদাহার শর্টকাট ধরে এগোনোতে কেরাণীহাটের ব্যস্ত রাস্তাটা এড়ানো গেলো। শিশুতলা পার হয়ে ঠাকুর দিঘি। আমার ফুফাতো বোনের শ্বশুরবাড়ি এখানেই। এলাকার লোকেরা আঞ্চলিক টানে এই জায়গাকে বলে ঠড-ডি। উঁচু পাড় দিয়ে ঘেরা সুবিশাল এই দিঘি। পরের জায়গার নাম সিকদার দিঘি। চিরচেনা এই রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। ভ্রমণ-চাকরির সুবাদে কত শতবার চলাচল করা হয়েছে এই রাস্তায়।

ডলু নদীপদুয়ার পর থেকে রাস্তা হয়ে উঠলো আরো ব্যস্ত। প্রচণ্ড দ্রুতগতিতে ধূলা উড়িয়ে চলছে বাস। বার আউলিয়া হয়ে রাজঘাটা ছাড়িয়ে আমিরাবাদের কাছেই দেখা হয়ে গেলো শাহেদ ভাইয়ের সঙ্গে। দাঁড়িয়েই দু’জনে কিছুক্ষণ গপ্পো-সপ্পো করে বিদায় দিলাম ওনাকে। একটু এগিয়েই পেয়ে গেলাম রিয়াদকে। আজ রাতে থাকবো ওর লোহাগাড়ার বাসাতেই। ও আগেই বলে রেখেছিল দুপুরের খাবার‍টা ওর বাসাতেই সারতে। দুপুরে ভরপেট খেয়ে রিয়াদকে নিয়েই বের হলাম দিনের বাকি পথটুকু হাঁটতে। ছোট একটা শর্টকাট নিয়ে মূল রাস্তায়। প্রথমেই পড়লো টংকাবতী ব্রিজ। ঠিক এই নামের একটা পাড়া আছে লামায়। বারো আউলিয়ার পাশের রাস্তাটা ধরেই সোজা পৌঁছানো যায় সেখানে। মোস্তাফিজুর রহমান কলেজের সামনে বিরাট একটা ময়লার ভাগাড় পেরিয়ে আধুনগর।

ডলু নদী পড়লো এর একটু পরই। রাস্তার দু’পাশে যথারীতি একটাই গাছ, আকাশমণি। সুন্দর সব বাঁকে ভয়াবহ সব টার্ন নিচ্ছে এই পথের রাজা মারছা পরিবহনের বাসগুলো। এই মহাসড়কে এদেরই রাজত্ব। রিয়াদের সঙ্গে পথচলতি গল্প হচ্ছে অনেক। সে কর্মরত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের একটি প্রকল্পে। এই রেললাইন নিয়েই তাই গল্প হচ্ছে বেশি৷ সুযোগ পেলেই রেললাইনের অ্যালাইনমেন্টগুলো দেখাচ্ছে ও।  

চুনতি ডেপুটি বাজারের পরই চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ফটক। এ রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার অনেক প্রাণী। জাদুঘর বা ল্যাবরেটরিতে রাখা স্টাফ করা প্রাণীর মতো এদের দেহ পড়ে আছে রাস্তার ধারে। দেখেই মায়া হয়। বনপুকুর হয়ে হোটেল মিডওয়ে ইনের সামনে শেষ করলাম আজকের দিনের হাঁটা। লেগুনায় আবার ফেরত আসলাম লোহাগড়ায়। রিয়াদের বাসায় ওঠার পর থেকে ও ভয়াবহ খাতির-যত্ন করেই যাচ্ছে। কয়েক ঘণ্টায় রীতিমতো নিখাদ আলসে বানিয়ে ফেলেছে সে আমাকে।

আরও পড়ুন...
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।