আগরতলা: ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, হোটেলসহ ছোট বড় ফাস্টফুডের স্টলে এমন কি ফুটপাতের খাবারের দোকানে পাওয়া যায় বিরিয়ানি। তবে শহরের অন্যতম এক জনপ্রিয় বিরিয়ানির দোকান ‘মন্টুর বিরিয়ানি’।
তবে কোনো তারকাখচিত রেস্তোরাঁয় তৈরি হয়না মন্টুর বিরিয়ানি। ফুটপাতের স্টলে পাওয়া যায় এ বিরিয়ানি। আগরতলা শহরে খোঁজ নিলে খুব কম লোকই পাওয়া যাবে যে ‘মন্টুর বিরিয়ানি’র স্বাদ নেননি। এ বিরিয়ানির খ্যাতি আগরতলার গণ্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের অন্যান্য এলাকাতেও।
আগরতলার পোস্ট অফিস চৌমুহনী এলাকার রাজ্যের প্রধান পোস্ট অফিসের সামনের ফুটপাতে মন্টুর বিরিয়ানি’র দোকান। কবে থেকে শুরু ও কিভাবেই বা এতো জনপ্রিয় হলো মন্টুর বিরিয়ানি তার খোঁজ নিতে বাংলানিউজ হাজির হয় দোকানে।
দোকানের মালিকের নাম মন্টু সাহা। কবে থেকে এ বিরিয়ানির দোকানের শুরু এমন প্রশ্নে মন্টু জানান, ১৯৭৮ সালে শুরু করেন এ দোকান। তখন শহরের এতো জৌলুস ছিলোনা। এমনকি পোস্ট অফিসও এখনের মতো পাকা ভবন ছিলোনা। তখন থেকেই চলছে এ দোকান।
বিরিয়ানির দোকানের ভাবনা মাথায় কিভাবে এলো? উত্তরে মন্টু বলেন, প্রথমে তিনি রাস্তায় রাস্তায় আইসক্রিম বিক্রি করতেন। হঠাৎ একদিন তার মনে হলো খাবারের দোকান করলে কেমন হয়, এই ভাবনা থেকে বিরিয়ানির দোকানের শুরু। দোকানের জন্য এ জায়গা বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, পোস্ট অফিস, রাস্তার উল্টো দিকে কংগ্রেস দলের অফিস, পশ্চিমে আগরতলা থানা রয়েছে। চিন্তা করে দেখলাম এ জায়গাতে সারাদিন মানুষের ভিড় থাকে।
শুরুতে বিরিয়ানির সঙ্গে অন্যান্য খাবার বিক্রি করলেও এখন তিনি শুধু বিরিয়ানি বিক্রি করেন।
বিরিয়ানির সঙ্গে হাঁস, দেশি ও ব্রয়লার মুরগি, রোস্টসহ কয়েকটি আইটেম তৈরি করা হয়। প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত বিরিয়ানি রান্না করা হয়। দুপুর ১টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্রেতাদের ভিড় হয় সন্ধ্যার পর।
বিরিয়ানির জনপ্রিয়তার পেছনে রহস্য কি? প্রশ্নে তিনি জানান, তাতো বলতে পারবো না, লোকে পছন্দ করে তাই খায়। তাছাড়া প্রথম থেকে আমার লক্ষ্য ছিলো মানুষকে ভালো খাওয়ানোর। এখনও এ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরও জানান, ক্রেতাদের গরম গরম খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন তিন দফায় তৈরি করা হয় বিরিয়ানি। প্রথমে একবার দোকান খোলার সময় বিরিয়ানি নিয়ে আসা হয়, দ্বিতীয় দফায় বিকেল ও সন্ধ্যা নাগাদ আবার বিরিয়ানি আনা হয় দোকানে।
মন্টু আরও জানান, দোকানের বিক্রির পাশাপাশি বিয়েসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য অর্ডার অনুযায়ী বিরিয়ানি সরবরাহ করে থাকেন। তাকে এ কাজে ছেলেসহ কয়েকজন কর্মচারী সহায়তা করেন।
তার দোকানের বিরিয়ানির চাহিদা যে আগরতলা ছাড়িয়ে রাজ্যের অন্যান্য মহকুমাতেও পৌঁছে গেছে সে প্রমাণ পাওয়া গেলো দোকানে অবস্থানের সময়। সন্ধ্যায় ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে, ফুটপাতে পাতা ছোট ছোট টুলের পাশাপাশি বহু ক্রেতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন বিরিয়ানি আবার কেউবা পার্সেল করে নিয়ে যাচ্ছেন। এমন সময় এক ক্রেতা এসে বলেন তিনি উত্তর জেলার ধর্মনগর থেকে এসেছেন আগরতলায়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আগরতলায় এসে পৌঁছেছেন সন্ধ্যায়। নাম সুদীপ দাস, পেশায় স্কুল শিক্ষক। স্ত্রী ও ছেলেকে হোটেলে রেখে সোজা চলে এসেছেন মন্টুর দোকানে, উদ্দেশ্য বিরিয়ানি খাবেন ও স্ত্রী-ছেলের জন্য নিয়ে যাবেন।
সুদীপ দাস বাংলানিউজকে বলেন, স্কুলে শিক্ষকদের কক্ষে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সঙ্গে মন্টুর বিরিয়ানি নিয়েও আলোচনা হয়। তাই তিনি আগরতলা পৌঁছেই ছুটে এসেছেন এখানে। বিরিয়ানি খেতে খেতে সেলফিও তুলে নিলেন, স্কুলে গিয়ে সহকর্মীদের দেখাবেন এ ছবি।
আগরতলাসহ পুরো ত্রিপুরা রাজ্যে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে ‘মন্টুর বিরিয়ানি’।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
এসসিএন/জেডএস