ভারত সরকারের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ১৯৭২(সেকশন-২)বলা হয়েছে, স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণীসহ পাখি সম্পর্কে বলা হয়েছে, এদের ধরা, বিক্রি করা বা বাড়িতে রাখা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বিনা অনুমতিতে এই প্রাণীগুলিকে রাখলে জরিমানা এমনকি জেলও পর্যন্ত হতে পারে।
কিন্তু সরকারী আইনকে তোয়াক্কা না করে ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকার বাজারে জঙ্গল থেকে ধরে আনা নানা জাতের পাখি, নানা প্রজাতির কচ্ছপসহ বন্যপ্রাণী বিক্রি হচ্ছে। এমন কি খোদ রাজধানী আগরতলার বিভিন্ন বাজারে এমন দৃশ্য হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে। আগরতলার বাইরেও অবস্থা একই। এসব বাজার থেকে প্রতিদিন বাজার করেন রাজ্য সরকারের বন দফতর ও পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা। তারা দেখেও না দেখার ভাণ করে আছেন।
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত ও বড় বাজারের মধ্যে একটি হল লেক চৌমুহনী বাজার। এখানে প্রতিদিনই অবাধে বিক্রি হচ্ছে বন্য ময়না, টিয়া, ডাহুক সহ নানা জাতের বন্য পাখি। আর কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপের মাংস।
বাংলানিউজের তরফে ক্রেতা সেজে ময়না পাখির দাম জিজ্ঞাসা করতে বিক্রেতা জানান ময়না একটি ২হাজার ২শ'রুপি আর এক সঙ্গে এক জোড়া কিনলে ৩হাজার ৫শ'রুপিতে কেনা যাবে। তবে আর দাম দর করা যাবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ ব্যবসায়ী জানান, এগুলি জঙ্গল থেকে ধরে আনা হয়েছে। তাই মানুষের মতো কথা বলতে পারে না। খুব দ্রুত এগুলি মানুষের বুলি শিখে নেবে।
তবে এগুলি কিনলে তিনি কোনো রসিদ দিতে পারবেন না বলে জানান।
‘রাস্তায় যদি কোন সমস্যা হয়?’এই প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন, রাস্তায় বন দফতরের কেউ জিজ্ঞাসাও করবে না। আর যদি কিছু করে তবে কোন দোকান থেকে কেনা হয়েছে তা বললেই চলবে। এতো দিন ধরে নানা জাতের পাখি বিক্রি করছি। সব ব্যবস্থা করা আছে।
‘সব ব্যবস্থা বলতে কি বোঝাচ্ছেন?’—এ প্রশ্নের জবাব অবশ্য এড়িয়ে গেলেন তিনি। এখানে বিক্রেতার দোকানে পাখির ছবি তোলা নিষেধ। তবু তাকে বলি: ‘দাদা পাখি পুষতে ভালবাসেন। তাই তাকে দেখাতে হবে। পাখিগুলি তার পছন্দ হলে কিনব।
এই আশ্বাসের ভিত্তিতে খাঁচায় বন্দী ময়না দুটির ছবি তুলতে দিতে রাজি হলেন বিক্রেতা।
একই ভাবে প্রতিদিন না হলেও মাঝে মাঝেই লেকচৌমুহনী বাজারে বিক্রি হয় নানা জাতের কচ্ছপ। প্রজাতি ভেদে এই কচ্ছপের মাংস প্রতি কেজি দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার রুপি করে বিক্রি হয়। প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে হাতে নিতেই কর্কশ গলায় খেঁকিয়ে উঠলেন বিক্রেতা: ‘ছবি তোলা যাবে না। মাংস কিনতে এসেছেন কিনে নিন। ছবি তোলা আবার কিসের জন্য?’
‘প্রকাশ্যে কচ্ছপের মাংস বিক্রি করতে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না?’ প্রশ্ন করি তাকে।
তার ঝটিতি জবাব: ‘যারা কিছু বলতে যাবে তারাই তো সবচেয়ে বেশি খায় কচ্ছপের মাংস। ’
‘এরা কারা?’—এ্ই প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল না অবশ্য।
একই চিত্র দেখা যায় রাজধানী আগরতলার মহারাজগঞ্জ বাজার সহ অন্যান্য বাজারেও।
এ থেকে সহজে অনুমান করা যায়, রাজধানীর রাজপথে বসে বন্য প্রাণী বিক্রি করে যে অর্থ উপার্জন করেন বিক্রেতারা, তার গোটাটাই তাদের পকেটে থাকে না। এর একটা ভাগ ঘুরপথে আরো কিছু লোকের পকেটেও যায়। এ কারণেই বন্যপ্রাণী রক্ষার আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কর্তৃপক্ষের একদম নাকের ডগায় প্রকাশ্য রাজপথে বসে এসব বিক্রি করতে পারছে।
বাংলাদেশ সময়:১২৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮,২০১৭
এসসিএন/জেএম