ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

ত্রিপুরার গ্রিন টি’র নমুনা গেলো চীন-জাপানে

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৯
ত্রিপুরার গ্রিন টি’র নমুনা গেলো চীন-জাপানে সংগ্রহ করা কাঁচা পাতা। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরা রাজ্যে তৈরি অর্গানিক চায়ের নমুনা গেলো চীন এবং জাপানে। ওখান থেকে সবুজ সংকেত এলেই খুলবে রপ্তানির দ্বার।

রাজ্যের রাজধানী আগরতলা শহর থেকে প্রায় প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে ত্রিপুরা রাজ্য চা উন্নয়ন নিগমের চা বাগান এবং চা পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র। এ এলাকার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের গোপাল চক্রবর্তী।

কর্মজীবনের শুরুতে তিনি গৃহশিক্ষকতার কাজ ও সবজি চাষের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তিনি এখন সফল ক্ষুদ্র চা চাষি। তিনি এখন সম্পূর্ণ হাতে চা পাতা প্রক্রিয়াজাত করছেন। নিজ হাতে গ্রিন টি এবং ব্ল্যাক টি যা অর্থডকস টি নামে বিশ্বে পরিচিত এ দুই ধরনের চা পাতা তৈরি করতে পারেন।

বর্তমানে তিনি রাজ্যের একজন সফল ক্ষুদ্র অর্গানিক চা পাতা উৎপাদক। তার উৎপাদিত চায়ের গুণগতমান পরীক্ষা করে ভারত সরকারের ‘চা নিগম’ হাতে তৈরি আর্গানিক চা উৎপাদকের সনদ দিয়েছে। দুর্গাবাড়ি এলাকায় তার নিজ বাড়িতে বসে বাংলানিউজকে শোনালেন চা উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার গল্প।

গোপাল চক্রবর্তী জানান, আজ থেকে চার বছর আগে হাতে তৈরি অর্গানিক চা উৎপাদন এবং বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। প্রথম দিকে তার চায়ের বিক্রি তেমন বেশি না হলেও দিন দিন ভারতসহ ত্রিপুরা রাজ্যে তার চায়ের চাহিদা বাড়ছে।

তিনি নিজ হাতে বাগান থেকে কাঁচা পাতা তোলা থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণের পদ্ধতিটি দেখান।

চা চাষি গোপাল চক্রবর্তী।  ছবি: বাংলানিউজ

তিনি জানান, গ্রিন টির জন্য বিশেষ ধরনের ছোট পাতা তোলা হয় এবং এরপর পাতাগুলোকে গরম পানির ভাপে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেদ্ধ করা হয়। পরে এগুলো পাখা চালিয়ে শুকানোর পর ড্রায়ারে ঢুকিয়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে শুকিয়ে নেওয়া হয়। প্রায় ৫কেজি কাঁচা পাতা থেকে মাত্র ৯০০ গ্রাম চা তৈরি হয়। সব মিলিয়ে এক মাসে ২০ কেজির মতো চা পাতা তৈরি করা যায়।

চা প্রক্রিয়াজাতকরণের পদ্ধতি কীভাবে শিখলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারত সরকারের চা নিগমের পক্ষ থেকে আসামের ডিব্রুগড় শহরে চা তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। তাছাড়া আগরতলাস্থ চা নিগমের আঞ্চলিক অধিকর্তা দিগন্ত বর্মন আমাকে অর্গানিক চা তৈরির জন্য নানা সময় সহযোগিতা করেছেন। আমার ইচ্ছা আমার তৈরি চা শুধু ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ছড়িয়ে পড়ুক। তাই আমি চা উন্নয়ন নিগমের দেওয়া প্রতিটি নীতিমালা মেনে চা পাতা তৈরি করি।

‘ইতিমধ্যে কিছুটা সাফল্যও এসেছে। চা নিগম আমার তৈরি চা পাতার নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করেছে। পাস করার পর তা চীন এবং জাপানেও পাঠানো হয়েছে। সেখানে আবার পরীক্ষা হবে। তারা তাদের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে দেখবে। এই চা ১০০ শতাংশ অর্গানিক বলে সনদ দিলে এ দেশগুলোতে আমার হাতে তৈরি চা রপ্তানি করতে পারবো। ’

তিনি আরও জানান, প্রায় ১৫ দিন আগে তার তৈরি চায়ের নমুনা বিদেশে পাঠায় চা নিগম। তার ২ দশমিক ৮১ হেক্টর জমিতে চা বাগান রয়েছে, সম্পূর্ণটাই অর্গানিক।

হাতে তৈরি চা পাতার দাম কত এবং আয় কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম বছর আগরতলার শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের স্টলে বসে হাতে তৈরি চা পাতা বিক্রি শুরু করেছি। তখন মাত্র ৪ হাজার রুপির চা বিক্রি হয়েছিল। প্রতি কেজি বিক্রি করেছি ১৫০০ রুপিতে। পরের বছর চা পাতার বিক্রি সামান্য বেড়েছে। মোট বিক্রি হয়েছে ১২ হাজার রুপির চা। এর পরের বছর বিক্রি হয়ছে ১৫ হাজার রুপির চা। চতুর্থ বছর বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার রুপির চা। বর্তমানে আমার উৎপাদিত গ্রিন টির মূল্য প্রতি কেজি ২৮০০ রুপি।

এগুলো মূলত ত্রিপুরা সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত বিভিন্ন মেলায় বিক্রির হিসাব অনুযায়ী। এছাড়াও ত্রিপুরার চা উন্নয়ন নিগমের যে পাঁচটি স্টল রয়েছে আগরতলার বিভিন্ন এলাকায় এগুলোতেও তার হাতে তৈরি চা পাতা বিক্রি হচ্ছে। স্টলগুলোতে মাসে প্রায় ২০ হাজার রুপির পাতা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৯
এসসিএন/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।