ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

লকডাউনের কারণে ত্রিপুরার চা-শিল্প ব্যাপক ক্ষতির মুখে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২০
লকডাউনের কারণে ত্রিপুরার চা-শিল্প ব্যাপক ক্ষতির মুখে

আগরতলা (ত্রিপুরা): সময় মতো সঠিক পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়া এবং লকডাউনের জেরে বছরের শুরুতেই ত্রিপুরা রাজ্যের চা-শিল্প ব্যাপক ক্ষতির মুখে।

২০১৯ সালে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা পার্শ্ববর্তী দুর্গা বাড়ি এলাকার দুর্গাবাড়ি টি এস্টেট ওয়ার্কার্স কোপারেটিভ প্রাইভেট লিমিটেড’র চা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি রুটিন অনুসারে শাটডাউন করা হয়। এই সময় প্রক্রিয়া কেন্দ্রের মেশিন থেকে শুরু করে কয়লা চালিত ড্রায়ারের বাৎসরিক মেরামত করা হয়।

আবার নতুন বছরের শুরুর দিকে বৃষ্টি হলে মার্চ মাসের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ বাগান থেকে চা পাতা সংগ্রহ এবং কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়।  

প্রথম দিকে চা পাতার উৎপাদন কম হলেও ১ এপ্রিল থেকে পুরো মাত্রায় চা পাতা প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়ে যায়। কারণ এই সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচা পাতা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে আসতে শুরু করে। কিন্তু এ বছর ত্রিপুরা রাজ্যের চা-শিল্প শুরুতেই বড়োসড়ো ক্ষতির সম্মুখীন বলে জানান দুর্গাবাড়ি টি এস্টেট ওয়ার্কার্স কোপারেটিভ প্রাইভেট লিমিটেড’র চা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের ম্যানেজার প্রশান্ত দেব।

এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এ বছর মার্চ মাসে খুব সামান্য পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির পানি মাটি ভেজানো তো দূর গাছও ঠিকভাবে ভেজেনি। এরপরেও যেটুকু কুঁড়ি বেরিয়েছিল, চা গাছ থেকে সেগুলো দিয়ে কারখানা পরীক্ষামূলক চালু করা শুরু হয়। কিন্তু এর মধ্যে লকডাউন হয়ে যাওয়ায় চা পাতা তোলা এবং কারখানা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখতে হয়। এই সময় যেসকল কুঁড়ি বেরিয়েছে চা গাছ থেকে এগুলোকে সঠিক সময়ে না তোলায় অনেক লম্বা হয়ে গেছে।

চা উৎপাদনের ভরা মৌসুমে কারখানা বন্ধ রাখলে ব্যাপক ক্ষতি হবে এই বিষয়টি চিন্তা করে ত্রিপুরা সরকার লকডাউন’র মধ্যে চা বাগানগুলোকে কিছুটা ছাড় দিয়েছে। তবে সরকারি কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র চালানো এবং চা পাতা তোলার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার।

এই নিয়মগুলো হলো- যারা চা পাতা তোলার কাজে যুক্ত রয়েছেন, তাদেরকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং অবশ্যই মুখে মাস্ক ব্যবহার করে চা পাতা তুলতে হবে। একইভাবে কারখানা শ্রমিকদের কেউ এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি কারখানায় প্রবেশের আগে এবং চা পাতা সংগ্রহ করতে যাওয়ার আগে কারখানার বাইরে সাবান ও পানি দিয়ে ভালো করে হাত-পা ধুয়ে কাজে যেতে হবে। দুর্গাবাড়িসহ রাজ্যের অন্যান্য বাগানগুলো ত্রিপুরা সরকারের এই নির্দেশিকা পালন করে চা উৎপাদন করছে বলেও জানান।

এই অবস্থায় চা পাতা কি পরিমাণ প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা থেকে খুবই কম পরিমাণে চা প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কেজি কাঁচা পাতা কারখানায় আসছে। এর কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ায় এবং লকডাউনের কারণে সময় মতো চায়ের কুঁড়িগুলো বাগান থেকে না তুলতে পাড়ায় উৎপাদন অনেক কম হচ্ছে। এছাড়াও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে বাগানগুলোতে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ কম পরিমাণ শ্রমিক যেতে পারছেন পাতা তোলার কাজে।  

যদি অধিক সংখ্যক শ্রমিককে বাগানে পাঠানো হয়, তাহলে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি বিঘ্নিত হবে। এই কারণেও কাঁচা পাতা তুলনামূলক কম আসছে কারখানায়। সবমিলিয়ে এ বছর ত্রিপুরা রাজ্যের চা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রগুলো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তিনি আরও বলেন শুধু দুর্গাবাড়ি নয়, রাজ্যের প্রতিটি চা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে একই অবস্থা।

এদিকে চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, মহিলারা মুখে মাস্ক পরে এবং নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চা পাতা তুলছেন। তারা জানান, মৌসুমের শুরুতে কাজ করতে না পারায় তাদেরকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে সরকার থেকে তাদেরকে চাউল দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে এবং পরবর্তী সময় কিছু নিয়ম-নীতি বেঁধে দিয়ে তাদেরকে বাগানে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তারা সব নিয়ম মেনেই বাগানে কাজ করছেন এবং কাজ করতে পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে পারছেন। তারা আরো জানান, শুধু বাগানেই নয় বাড়িতেও তারা এইসব নিয়ম মেনে চলছেন, যাতে করে করোনা ভাইরাসের মতো কঠিন রোগ কোনোভাবে তাদের ক্ষতি করতে না পারে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২০
এসসিএন/ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।