ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

সীমান্তে হত্যা নিয়ে বিএসএফের বিরুদ্ধে সরব মমতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২৪
সীমান্তে হত্যা নিয়ে বিএসএফের বিরুদ্ধে সরব মমতা

কলকাতা: ভারতের জাতীয় নির্বাচনের আগে আবারও দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বিরুদ্ধে সরব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিএসএফ যদি অন্য দেশের নাগরিককে হত্যা করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি হয় না কেন, অ্যাকশন হয় না কেন প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) পদযাত্রার কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন তৃণমূল নেত্রী।

তিনি বলেন, গতকাল আমাদের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ, যা আমাদের রাজ্যের জন্য অত্যন্ত খারাপ উদাহরণ। ইসকনের একজন শিক্ষিত পুরোহিত, যিনি বাংলাদেশি, তাকে বিএসএফ অত্যাচার করে হত্যা করেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে আমাদের কাছে কমপ্লেইন এসেছে যে, আমাদের লোককে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের কোনো কিছু দেখলেই ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) গ্রেপ্তার করছে। তাহলে বিএসএফ যদি অন্য দেশের নাগরিককে হত্যা করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি হয় না কেন? তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন হয় না কেন? তোমার যদি মনে হতো উনি বাংলাদেশি, তুমি মামলা করতে, তোমার আইনে ব্যবস্থা নিতে। কাউকে মেরে দেওয়ার অধিকার তোমার নেই।

শুক্রবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার পদযাত্রা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আগামীকাল নারী দিবস একই সাথে শিবরাত্রি পড়েছে। ফলে অনেক মা-বোনেরা পূজায় ব্যস্ত থাকবেন, উপোস করবেন। সে কারণেই আমরা আজ নারী দিবসে সামিল হয়েছি।

এরপরই কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান নিয়েও সরব হন মমতা। গত ৫ মার্চ কলকাতা হাইকোর্ট থেকে বেরোনোর সময় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, বিজেপিতে যাচ্ছি। বৃহস্পতিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নেন অভিজিৎ। তিনি জানিয়েছেন, তার লক্ষ্য বাংলা থেকে তৃণমূল সরকারের বিদায় সূচনা নিশ্চিত করা। বিজেপি তাকে যে দায়িত্ব দেবে, তা পালন করবেন তিনি।

বিচারপতির সেই বক্তব্যের জবাব দিয়ে মমতা বলেন, বিচারের চেয়ারে বসে বিজেপিবাবু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। এদের থেকে মানুষ বিচার পাবে? এরা কেউকেটা। তবে আমি খুশি, এদের মুখোশটা খুলে পড়ে গেছে। এবার জনগণ তার রায় দেবে।

লোকসভা ভোটে মেদিনিপুরের তমলুক থেকে বিজেপির প্রার্থী হতে পারেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার বিরুদ্ধে তৃণমূল কাকে প্রার্থী করবে তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে। এদিন ওই কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। বিচারপতির উদ্দেশে মমতা বলেছেন, তৈরি থাকুন, আপনি যেখানে দাঁড়াবেন সেখানে আমি স্টুডেন্টদের নিয়ে যাব। ওরাই আপনার বিচার করবে, যাদের চাকরি আপনি খেয়েছেন।

রাজনীতির পাশাপাশি মমতা আইন পড়েছেন উল্লেখ করে মমতা বলেন, আমি বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বলতে পারি না, কিন্তু জাজমেন্ট নিয়ে বলতে পারি। আমিও একজন আইনজীবী, আইনে কোনটা সঠিক, কোনটা বেঠিক আমিও জানি।

অপরদিকে, ভোটের তফসিল ঘোষণার আগেই পশ্চিমবঙ্গে ১৫০ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছে নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে তারা রাজ্যের কয়েকটি স্কুলে থাকছে। যে কারণে কয়েকটি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মমতা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ওদের পাঠিয়ে দিয়েছে আর ওরা ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব স্কুল ছেড়ে দাও, সব কলেজ ছেড়ে দাও, সব স্টেডিয়াম ছেড়ে দাও। বাবুরা এখন ঘুরে ঘুরে বেড়াবে আর বিজেপি করে বেড়াবে।

এরপর বিজেপিকে সরাসরি নিশানা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কীসের জন্য ভোট চাইছে বিজেপি? গত নির্বাচনে ৪২টা আসনের মধ্যে ১৮টা এমপি ওদের। কিন্তু বিজেপি বাংলার জন্য কী করেছে?

বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গঙ্গাবক্ষে কলকাতা মেট্রো উদ্বোধন করেছেন। সে প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কালকে যেটা উদ্বোধন করে গেল সব টাকা আমার দেওয়া। আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, প্রত্যেকটা মেট্রো প্রকল্প আমার সময় করা। যাতে কোনদিন এই প্রকল্প বন্ধ না হয়, তার জন্য ২ লক্ষ কোটি রুপি উপর আমি দিয়ে এসেছিলাম। নতুন স্টেশনগুলো দেখছেন, সেগুলোর সমস্ত আমার সময় করা। কেউ শিলান্যাস করে কেউ উদ্বোধন করেন। নির্বাচন চলে গেলে বিজেপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইলেকশনের আগে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মালদায় চলে গেছে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। সব জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বিজেপির নেতারা। মনে রাখবেন, যারা গাদ্দারি করে তাদের রাজাকার বলা হয়। তাদের ভালো হয় না, মানুষ তাদের ক্ষমা করে না।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, আজ আর কিছু বলব না, বাদবাকি কথাগুলো গর্জনে হবে!

আগামী ১০ মার্চ জনগর্জন নামে কলকাতার ব্রিগেডে প্যারেড গ্রাউন্ডে সমাবেশ রয়েছে তৃণমূলের। মমতা বলেন, সবই যদি আজ হয়ে যায় তাহলে গর্জনে কী হবে? একই সঙ্গে এনআরসি প্রসঙ্গে মমতা বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে আমরা এনআরসি হতে দেব না।

ফলে সব মিলিয়ে সরগরম বাংলা। পর পর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে বঙ্গবাসী ভাবছিল, কেন মুখ খুলছেন না মমতা! এদির তার জবাব দিলেন দলনেত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।