কলকাতা: ভারতে বন্দি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারদের মামলার শুনানিতে আসতে চলেছে নতুন মোড়। মামলা যেদিকে চলছে, তাতে পি কে ছাড়া তার সহযোগীরা জামিন পেতেও পারেন।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বিকেলে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের আদালতের সিবিআই-১ কক্ষে তোলা হলে বিচারক প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় আগামী ৪ এপ্রিল জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন।
তবে আগামী দিনে ভারতের আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) পক্ষে কীভাবে জামিনের বিরোধিতা করা হবে, তাই এখন দেখার।
বৃহস্পতিবার প্রথম থেকেই জামিনের পক্ষে সরব হন অভিযুক্তদের আইনজীবী মিলন মুখার্জি। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে, কোনো মামলা ট্রায়াল না করিয়ে জেল কাস্টডিতে বেশি দিন রাখা যাবে না। আজকে মহামান্য আদালতকে এই আইন সম্বন্ধে জানালাম। ২০২২ সালের ১৪ মে প্রশান্ত বাদে অভিযুক্তদের সকলকে গ্রেপ্তার করেছে ইডি। কিন্তু তাদের এখনও ট্রায়াল চলছে। দীর্ঘদিন এভাবে ট্রায়াল চলতে পারে না। হয় মুক্তি, নয় সাজা ঘোষণা করতেই হবে। কিন্তু প্রাণেশকে কোন গ্রাউন্ডে সাজা দেবে? তিনি তো কোনো অর্থ তছরুপ করেননি। তারা দাদা পি কে হালদার ভারতে অবস্থানরত মায়ের দেখভালের জন্য আমার মক্কেলকে (প্রাণেশ) ৫০ হাজার করে রুপি দিতেন। সেই টাকা খরচ করা কীভাবে অপরাধ? প্রাণেশ ১৯৮৮ সালে ভারতে চলে এসেছেন। তার থেকে বাংলাদেশের কোনো নথি পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের অর্থ তছরুপে তিনি জড়িত. এমন কোনো নথিও ইডি সামনে আনতে পারেনি। তাহলে কীভাবে তিনি দোষী?
পরের দিন জামিনের বিষয়টি শেষ করব উল্লেখ করে আইনজীবী মিলন মুখার্জি আরও বলেন, বাংলাদেশে হালদারদের মামলায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, কিন্তু রায়দান হয়নি অর্থাৎ এই রায়ের এখনও কোনো জাজমেন্ট দেওয়া হয়নি। শুধু প্রপোজ অর্ডারটা দেওয়া হয়েছে। সেই কারণে আমিও উচ্চতর আদালতে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করতে পারছি না। আমার মনে হচ্ছে, এটা কোনো রকমভাবে ইচ্ছাকৃত দেরি করা হচ্ছে, যেন অভিযুক্তদের ভারতীয় কাস্টডিতে রাখা যায়।
বহুদিন পর বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে পি কে হালদারকে আইনজীবী মিলন মুখার্জির সঙ্গে প্রকাশ্যে কথা বলতে দেখা যায়। পি কে হালদার বলেছেন, একটু দেখবেন, ভাই যেন জামিনটা পায়। মিলন মুখার্জি বলেছেন, চিন্তা করবেন না, সবাই জামিন পাবে।
তবে এ দিন আদালত চলাকালীন ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী একটি কথাও বলেননি। তিনি বলেছেন, যা বলার আগামী শুনানিতে বলব।
২০২২ সালের ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বৈদিক ভিলেজ থেকে পি কে হালদারে সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এরপর থেকে সেখানেই বইন্দ রয়েছেন তারা। অর্থ পাচার এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের আওতায় তাদের গ্রেপ্তার করেছিল ইডি। বর্তমানে পি কে হালদারসহ তার সহযোগীদের রাখা হয়েছে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে এবং নারী সহযোগী আমিনা সুলতানা আছেন কলকাতার আলিপুর সংশোধনাগারে।
গত বছরের ৮ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত প্রশান্ত কুমার হালদারকে দুই মামলায় ২২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন এবং পি কে হালদার ছাড়া অন্য ১৩ আসামিকে দুই মামলায় তিন ও চার বছর করে মোট সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশান্ত কুমার হালদার ভারতে বন্দি থাকায় সেই রায় কার্যকর হয়নি। এমনকি সেই রায়ের কপি ভারতের আদালতে এসে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন ইডির আইনজীবী অরজিৎ চক্রবর্তী।
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ