কলকাতা: ভারতের শেষ ধাপে ভোট হচ্ছে ৭টি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। সব মিলিয়ে ৫৭টি লোকসভা আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে সকাল ৭টা থেকে।
এখানেই শেষ নয় এই সময়ের মধ্যে, বিপুল কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারি থাকার পরও ভোট শুরুর আগে থেকেই উত্তেজনা শুরু হয় দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙড়ে। শনিবার সকাল থেকেও সেই এলাকা উত্তপ্ত। ফুরফুর শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির দল, ইন্ডিয়া সেক্যুলার ফ্রন্ট আইএসএফ এবং তৃণমূলের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। বুথে এজেন্ট বসাতে গেলে আইএসএফ-এর উপর হামলা করেছে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা, এমনই অভিযোগ। দু’পক্ষের হাতাহাতিতে রক্তাত্ব হয় বেশ কয়েকজন। আইএসএফ-এর অভিযোগ, তাদের এক কর্মীর পায়ে গুলি লেগেছে। কিন্তু তাকে অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যাওয়ার সময়ও তৃণমূল বাধা দেয় বলে অভিযোগ।
ভাঙর কেন্দ্রটি যাদবপুর আসনের মধ্যে পড়ে। ওই আসনে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী সায়নি ঘোষ। তিনি বলেছেন, আমরা চাই মানুষ আরও বেশি করে বেরিয়ে এসে ভোট দিক। কারণ মানুষ তৃণমূলের সমর্থনে ভোট দেবেন এটা নিশ্চিত। আমি অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনুরোধ করব, আপনারা অশান্তি করবেন না। মানুষকে শান্তিতে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে দিন।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই রাস্তায় বোমা পড়ে থাকতে দেখা যায়। তৃণমূলের অভিযোগ, আইএসএফ তাদের কর্মীদের মারধর করেছে। এক তৃণমূল কর্মীর মাথাও ফেটেছে।
অপরদিকে, মমতার ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডায়মন্ড হারবার লোকসভা আসনে তৃণমূল প্রার্থী। ওই আসনে ২৭১ নম্বর বুথের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তৃণমূলের ভুয়া এজেন্ট, সিপিআইএম এজেন্ট সেজে বুথে বসে ভোট কারচুপি করে। এমন খবর পেয়েই তাকে বুথ থেকে বের করে দেন প্রিসাইডিং অফিসার। এরপরই বুথের বাইরে সেই এজেন্টের সঙ্গে কার্যত হাতাহাতি হয় সিপিএম প্রার্থী প্রতীক উর রহমানের। এলাকায় জমায়েত তৈরি হলে সেই ব্যক্তি মুখ লুকিয়ে পালান। সিপিএম বলছে, ওই ব্যক্তি তৃণমূলের নেতা, ভোট লুট করার ধান্দায় এসেছিল। এছাড়া রাজ্যে ৯ আসন থেকে একাধিক অশান্তির খবর সামনে এসেছে।
অপরদিকে শেষ ধাপের ভোটে ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোয় শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে।
শনিবার (১ জুন) দেশটির ৭টি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে মোট ৫৭টি লোকসভা আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শেষ ধাপেও ভিআইপি প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে অনুরাগ ঠাকুর, চরণজিৎ সিং চান্নি, রবিশঙ্কর প্রসাদ, কঙ্গনা রানাউত সহ ৯০৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করছেন ১০ কোটি ৬ লাখ ভোটর।
ভোট দিয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী কঙ্গনা রানাউত। হিমাচল প্রদেশের মাণ্ডি আসন থেকে প্রার্থী করা হয়েছে তাকে। ভোট দেওয়ার পর মোদি বন্দনায় অভিনেত্রী বলেছেন, আমি নিজের ভোট দিয়েছি। সাধারণ মানুষকেও ভোট দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছি। হিমাচলের ৪টি আসনেই বিজেপি জিতবে। এদিন সকালেই কঙ্গনার বাবা অমরদীপ রানাউত ভোট দেওয়ার পর বলেছেন, খুব ভাল লাগছে। দীপাবলির মতো আজও মানুষ উৎসাহ নিয়ে ভোট দিতে আসছেন।
ভোট দিয়েছেন হিমাচল প্রদেশের হামিরপুর আসনের বিজেপি প্রার্থী অনুরাগ ঠাকুর। বাবা তথা হিমাচল প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রেম কুমার ধুমালকে নিয়ে ভোট দিতে আসেন তিনি।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাও সকাল সকাল ভোট দিয়েছেন। হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুর আসনের একটি কেন্দ্রে সস্ত্রীক ভোট দেন তিনি। ওই বুথের প্রথম ভোটার তিনিই ছিলেন।
পঞ্জাবের সাঙ্গরুর আসনে ভোট দিয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান ও তার স্ত্রী ডঃ গুরপ্রীত কৌর।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশের বারাণসী কেন্দ্র থেকে লড়ছেন কংগ্রেস প্রার্থী অজয় রাই। তিনি বলেছেন, মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিচ্ছে। আমরা সাইলেন্ট ভোট পাচ্ছি। বিএসপি, আপ পার্টির মতো অন্যান্য দলের সমর্থকরাও আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। জনগণ এবার পরিবর্তনের মুডে রয়েছেন। শেষ ধাপের ভোটে ধ্যানেমগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সামাজিক মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে ভোটদানের আর্জি জানান। বিশেষ করে নারী ও যুব সমাজকে ভোট দিতে আর্জি জানান তিনি।
উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুর আসন থেকে এবার বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন ভোজপুরী অভিনেতা রবি কিষাণ। এ দিন সকালেই তিনি গোরক্ষপুরের একটি বুথে ভোট দিতে হাজির হন। উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির গাজিপুরের প্রার্থী আফজল আনসারি ভোট দিলেন। বুথ থেকে বেরিয়ে তিনি বলেছেন, ৪ জুনের অপেক্ষা করুন, ইন্ডিয়া জোট সরকার গড়বে।
ভোট দিয়েছেন বিহারের আরজেডি নেতা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী স্ত্রী রাবড়ি দেবী ও তাদের কন্যা পটনায় ভোট দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা,জুন ০১, ২০২৪
ভিএস/এমএম