কলকাতা: গত ৯ আগস্ট কলকাতায় আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয়েছিল নারী চিকিৎসকের মরদেহ। একমাস পরও সেই ঘটনায় উত্তপ্ত পুরো পশ্চিমবঙ্গ।
এরই মধ্যে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) আরজি কর হাসপাতালের নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার মামলার তৃতীয় শুনানি হলো সুপ্রিম কোর্টে। দেড় ঘণ্টার শুনানি শেষে আগামী ১৭ সেপ্টম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এ দিন শুনানির শুরুতেই আদালতে মুখবন্ধ একটি খামে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই। তা প্রধান বিচারপতির তিন বেঞ্চ সম্পূর্ণটা পড়েন। এরপর একের পর এক প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি এবং সিবিআই। যার উত্তর দিতে গিয়ে যথেষ্ট বিব্রত বোধ করেন রাজ্য সরকারের পক্ষের আইনজীবী কপিল সিব্বল।
সলিসিটর তুষার মেহেতা (সিবিআই-এর আইনজীবী) প্রশ্ন তোলেন, ৯ আগস্ট সকাল ৯টায় মরদেহ দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে, যখন পাওয়া গিয়েছিল তখন তা অর্ধনগ্ন অবস্থায় ছিল। শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। খুন ও ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে সন্ধ্যা ৬টার পর ময়নাতদন্ত করা যায় না। এই ঘটনায় কেন করা হলো?
সিবিআই-এর আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে রাত ১টা ৪৭ মিনিটে। অথচ অস্বাভাবিক মৃত্যুর এফআইআর হয়েছে রাত ২টা ৫৫ মিনিটে। তার আগে সকাল থেকে দেহ দেখে পুলিশ কি বুঝতে পারেনি, এটা অস্বভাবিক মৃত্যু? এমনকি, ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহের সাথে একটি চালান (রশিদ) দেওয়া হয়ে থাকে, যার দ্বারা বোঝা যায় মৃতদেহ কে গ্রহণ করেছিল এবং মৃতদেহ থেকে কী কী তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এ ঘটনায় ময়নাতদন্তের কোনো চালান দেওয়া হয়নি। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বল।
এরপরই বিচারপতি বিরক্তির স্বরে প্রশ্ন করেন, মৃতদেহ সকালে পাওয়া গেলেও সার্চ এবং সিজার কেন রাতে করা হলো? আগে এফআইআর হবে তারপর সার্চ অ্যান্ড সিজার। কিন্তু এফআইআর-এর আগে সার্চ এবং সিজার কীভাবে হলো? মৃতদেহের স্যাম্পল কে কালেক্ট করেছিল?
সিবিআইএ’র আইনজীবী বলেন, এফআইআরের আগেই সার্চ এবং সিজার। গত ২৭ বছরের কর্মজীবনে আমি এমন মামলা দেখিনি।
বিচারপতি আদেশ দেন, পরবর্তী শুনানিতে এই প্রশ্ন আবার রাখা হবে। রাজ্য সরকারের যিনি উত্তর দিতে পারবেন তাকে যেন হাজির করা হয়।
সিবিআই’র তরফে বলা হয়, এফআইআর না হওয়া পর্যন্ত ময়নাতদন্তে পাঠানো যায় না। তাহলে এক্ষেত্রে কেন পাঠানো হলো? ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রথম পাঁচ ঘণ্টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই সময় অসংখ্য লোক ঘটনাস্থলে ঢুকে পড়েন। পুলিশ বাধা দেয়নি কেন? ঘটনার পাঁচদিন পর আমরা যখন তদন্ত শুরু করেছি তখন যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে।
সিবিআই আরও বলে, এ ধরনের ঘটনায় ভ্যাজাইনাল সওয়াব এবং ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেটে রক্ত সংরক্ষিত রাখা উচিত। কিন্তু সেসব নমুনা সংরক্ষণ হয়নি কেন? সমস্ত ঘটনার কে ভিডিওগ্রাফ করেছিল, তার কোনো তথ্য পুলিশের খাতায় উল্লেখ নেই। তার নাম কী, পদ কী? আমাদের জানানো হয়নি।
ময়নাতদন্তের ঘটনায় শাসকদলের উত্তরবঙ্গ লবির তিনজন রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। সিবিআই’র তরফে আরও বলা হয়, কলকাতার ফরেনসিক রিপোর্ট বিশ্বাসযোগ্য নয়। যতটুকু নমুনা সংরক্ষিত আছে, তা দিল্লির এআইএমএস এবং ভারতের পুনেসহ অন্যান্য জায়গায় ফরেনসিক করতে চাই। সম্মতি দেন বিচারপতির তিন সদস্যের বেঞ্চ।
বিচারপতি রাজ্য সরকারকে প্রশ্ন করেন, ঘটনার দিন (৯ আগস্ট) ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সিবিআইকে জমা দেওয়ার কথা। আপনারা কি দিয়েছিলেন? রাজ্য জানায় সম্পূর্ণটা দেওয়া হয়েছে। সিবিআই জানায়, তারা মাত্র ২৭ মিনিটের ফুটেজ হাতে পেয়েছে। তাও ৪টা ক্লিপিং (ফুটেজ)।
এ দিন শীর্ষ আদালত এ ঘটনায় যেভাবে তড়িঘড়ি ময়নাতদন্ত করা হয়েছে, তাতে বিরক্তি প্রকাশ করেন। আগামী মঙ্গলবার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। এরমধ্যে সিবিআইকে পরবর্তী স্ট্যাটাস রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ