কলকাতা: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পশ্চিমবঙ্গে পেট্রাপোল স্থলবন্দরে যাত্রী পরিষেবায় নতুন টার্মিনাল উদ্বোধন হয়েছে। প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য এই পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে আসা-যাওয়া করেন।
রোববার (২৭ অক্টোবর) পেট্রাপোল সীমান্তে যাত্রী টার্মিনাল ভবন এবং মৈত্রী দ্বার উদ্বোধন করেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এ সময় তিনি বলেন, এর আগে পেট্রাপোল বন্দরকে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক করিডোর বলে মনে করা হতো। কিন্তু ‘ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি’ এই শব্দটির সঙ্গে চিন্তাধারার চরম বদল এসেছে প্রধানমন্ত্রী মোদির সময় থেকে। এখন ব্যবসার পাশাপাশি প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং শান্তির দ্বার হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ভারতের প্রতিটি সীমান্তকে। এর কারণে আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে একতা আরো বেড়েছে। যে কারণে অবৈধ কারবারি কমে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায় সমৃদ্ধি বেড়েছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক এই স্থলবন্দর আরও উন্নত এবং আধুনীকরণ করা হয়েছে। এই টার্মিনাল বানাতে ব্যয় হয়েছে ৫০০ কোটি রুপি। ৭ হাজার বর্গমিটার এই জায়গাজুড়ে তৈরি হয়েছে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট, যাত্রী টার্মিনাল এবং মৈত্রীদার। এই তিনটিকে এক ছাতার তলায় আনা হয়েছে। উন্নত কম্পিউটার এবং সিস্টেমের জন্য এতে প্রতিদিন ২৫ হাজার যাত্রী সুবিধা পাবে। এই নতুন টার্মিনালের কারণে মেডিকেল এবং এডুকেশন ট্যুরিজম এক অন্য মাত্রা পাবে। এতে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সংস্কৃতি,ভাষা, সাহিত্যের আদান প্রদান আরো বাড়বে।
শাহ বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং ব্যস্ততম স্থলবন্দর হল পেট্রাপোল। ভারত বাংলাদেশের মধ্যে যে ব্যবসায়িক আদান-প্রদান হয়ে থাকে, তার ৭০ শতাংশ এই পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়েই হয়ে থাকে। তিনি তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, ২০১৬-১৭ অর্থাৎ মোদি শুরুর সময়কালে, এই বন্দর দিয়ে ১৮ হাজার কোটি রুপির ব্যবসা হত। তবে ২০২৩-২৪ অর্ধবর্ষে তা ৬৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে বর্তমানে ৩০ হাজার ৫০০ কোটি রুপির ব্যবসা হয়ে থাকে। একই সঙ্গে তিনি তথ্য তুলে বলেন, ২০২৩ ২৩ অর্থবর্ষে প্রায় ২৪ লাখ যাত্রী আসা-যাওয়া করেছেন।
মোদীর সময়কালে পূর্ব ভারতের প্রায় প্রতিটা স্থল সীমান্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করেন অশিত শাহ। তিনি বলেছেন, ব্যবসায়িক যোগাযোগের পাশাপাশি প্রতিটি স্থলবন্দর মানুষের সাথে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে আরো গুরুত্ব বেড়েছে। আমরা সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক এবং সীমান্তের বিকাশের সাথে যুক্ত করার কাজ করছি। যে কারণে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস এবং সীমান্ত সুরক্ষা তিনটি বিষয়কেই এক ছাতার তলায় আনা গেছে।
তিনি বলেছেন, ভারতের ১২ স্থলসীমান্ত এই সময়কালে অনেক উন্নতি হয়েছে। পেট্রাপোল, আগরতলা, স্রিমানপুর, সুতারকান্দি, সাবরুম, ডৌকি এসব সীমান্ত বাংলাদেশের সাথে যুক্ত। একইভাবে নেপালের সাথে রেক্সল, যোপানি, রুপাইডিহা ভারতের সঙ্গে যুক্ত। আটারি সীমান্ত পাকিস্তানের সাথে যুক্ত। একই সঙ্গে পাঞ্জাবের সাথে পাকিস্তানের কর্তারপুর করিডোর প্রধানমন্ত্রী মোদি সময়কালে বিকাশ ঘটেছে। মোরে সীমান্ত মিয়ানমারের সঙ্গে। আর যে কারণে ২০২৩-২৪ সালে এসব স্থল সীমান্ত দিয়ে ৭১ হাজার কোটি রুপির ব্যবসা হয়েছে। আগামী দিনে আমাদের লক্ষ্য ব্যবসায়িক আরও উন্নতির পাশাপাশি যাত্রী আদান-প্রদানের বিষয়ে হয়রানি যাতে কম করার।
একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, পেট্রাপোল সীমান্তে সীমাসুরক্ষার জন্যই বাংলায় শান্তিতে আছে। কথা দিচ্ছি, পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়ে যাবে। আর এই অনুপ্রবেশ বন্ধ হলেই বাংলায় আরও শান্তি ফিরে আসবে। যে কারণে বাংলায় বিজেপির ক্ষমতায় আসাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্থলবন্দর পাশাপাশি মমতা সরকার এবং বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটকেও কটাক্ষ করেছেন অমিত শাহ। তিনি বলেছেন, আমি দিদির(মমতা) কাছে জানতে চাই, কারণ মমতা দিদি ওই জোটের সদস্য। গত ১০ বছরে বাংলার জন্য উনি কি করেছেন? এর জবাব তিনি কথনই দেন না।
তিনি বলেছেন, কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারের সময়কালে বাংলা সব মিলিয়ে পেয়েছিল ২ লাখ ৯ হাজার কোটি রুপি। আর মোদি সরকাররে ২০১৪- ২৪ অর্থাৎ ১০ বছরে ৭ লাখ ৭৪ হাজার কোটি রুপি বাংলা এখনো পর্যন্ত পেয়েছে। কিন্তু মোদিজি যা বাংলা উন্নতির জন্য যা পাঠায় তা বাংলার নেতা-মন্ত্রীরা দুর্নীতিতে কাজে লাগায়। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের ভালো সময় বেশি দূরে নয়। ২০২৬ সালে আসন্ন পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের গণনার সাথেই এখানে বিজেপি সরকার গঠন করবে।
শনিবার রাতে কলকাতায় এসেছেন তিনি। এদিন বিএসএফ এর আমন্ত্রণে পোট্রাপোলের পাশাপাশি দুটি কর্মসূচি রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। আজই ফিরে যাবেন দিল্লিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
ভিএস/এমএম