ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

পিঠা উৎসবে পিঠা ফিউশন!

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
পিঠা উৎসবে পিঠা ফিউশন! ‘রাজডাঙ্গা পিঠা- পুলি উৎসব’/ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: এ সময়কার নারীরা পিঠা-পুলি বানাতে ভুলে গেছেন- এ অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে ‘রাজডাঙ্গা পিঠা- পুলি উৎসব’- এ অংশ নিয়েছেন আধুনিক গৃহবধূরাই।

বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রশংসা প্রমাণ করেছে, তাদের নৈপুণ্যে এতোটুকুও মরচে পড়েনি।

শুধু তাই নয়, কলকাতা ভিআইপি রোড সংলগ্ন এ উৎসবে জন্ম নিয়েছে নতুন ধরনের পিঠা।

যেখানে ‘ড্রাই ফ্রুট’ থেকে ‘মৌরি’ পিঠার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
 
গত ১২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এ উৎসব। মেলার শেষ দিন সোমবার (১৬ জানুয়ারি) গিয়ে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়।

মেলায় সাবেকি ধারার পিঠার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন ধরনের পিঠা। এর ফলে স্বাদ, গন্ধ বদলে নতুন রকমের ‘ফিউশন’ তৈরি হয়েছে।

এছাড়াও মেলায় আছে অনেক চেনা পিঠা অচেনা মোড়কে। অর্থাৎ, যে ঘরোয়া স্বাদ পিঠা-পুলির অন্যতম আকর্ষণ, সেই ঘরোয়া স্বাদ পুরোপুরি ধরা পড়েছে প্রতিটি পদে।

২০১২ সাল থেকে এ উৎসব চলছে। আয়োজকরা জানান, প্রাথমিকভাবে আকারে ছোট করে শুরু হলেও এ বছর বিশাল আকার নিয়েছে। মেলার মূল বৈশিষ্ট্য পিঠা-পুলি।   প্রতিটি স্টলেই যারা পিঠা-পুলি বানিয়েছেন, তারা সকলেই গৃহবধূ বা কর্মরত নারী। কেউ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার তো, কেউ আবার অধ্যাপিকা আবার অনেকেই শুধুমাত্র গৃহবধূ। ‘রাজডাঙ্গা পিঠা- পুলি উৎসব’/ছবি: বাংলানিউজ
 
তবে তাদের মধ্যে একটাই মিল- নতুন নতুন রান্না এক্সপেরিমেন্ট করা। শুধুই কি ফিউশন? না, তারা যেটা চান, যতোক্ষণ না সে মাত্রা বা স্বাদ আনতে পারছেন, ততোক্ষণ চলে এক্সপেরিমন্ট। এমনটাই জানান রাজডাঙার ওয়েন্দ্রিলা চ্যাটার্জি। পেশায় আইটিতে কর্মরত। ওয়েন্দ্রিলার এবারের ফিউশন, বিভিন্ন ডালকে পিঠার পুর হিসেবে ব্যবহার করা।
 
পিঠা বিক্রেতা শেলী সাহা, যিনি নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে ব্যাঙ্কে যান তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে সংসারের হেঁশেলের রোজকার যোগাযোগ নেই। তবে এ মেলার জন্য সারা বছর পরিকল্পনা করতে থাকি, নতুন কি পিঠা আনা যায়। বলতে পারেন,  শখের রাধুনি। এবার আমার ফিউশান ধনে, জিরা ও মৌরী ফ্লেভারের পিঠা’।
 
গৃহবধূ সোহিনী সরকার বলেন, ‘একটাই তো নেশা, রান্না করা! নতুন কিছু করতে গেলে অনেক সময় মুখে দেওয়া যায় না। আবার হঠাৎ কিছু করে ফেললাম, যা আগে কোনেদিন করিনি।   স্টিম মোমো এক ধরনের ভাপা পিঠা। এবার আমার নতুন ফিউশন, ড্রাই ফ্রুটের স্টিম মোমো’।
 
পশ্চিমবঙ্গে সাধারণভাবে নারকেল আর ক্ষীরের পুর দিয়ে পিঠা তৈরি হয়। সেখানে কলকাতার এ পিঠা উৎসবে গৃহবধূ ও কলেজের ছাত্রীরা পিঠার পুরে নারকেলের সঙ্গে ব্যবহার করেছেন সবজি। কোথাও ব্যবহার করা হয়েছে মাংস, আবার কোথাও মাছ।
 
৭৬টি স্টলের সবগুলোই পরিচালনা করেন নারীরাই। তারা জানান, সারা বছর ধরে অপেক্ষা করেন এ সময়টির জন্য।   নানা গবেষণার মাধ্যমে পিঠার স্বাদ আরও ভালো করার চেষ্টা করেন।   বাড়িতে কয়েকবার বানানোর পর মেলায় নিয়ে আসেন।
 
বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা গেছে, শুধু স্বাদ নয়, গন্ধ নিয়েও রীতিমতো গবেষণা করছেন এ নারীরা। পিঠার স্বাদের সঙ্গে গন্ধের জন্য কোথাও ব্যবহার করেছেন কালো জিরে, কোথাও ধনে, আবার কোথাও মেথি।

মেলার উদ্বোধন করেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। পিঠা খেয়ে গেছেন কলকাতার একাধিক অভিনেতা অভিনেত্রী থেকে গায়ক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিকরা। মেলা শেষে সেরা পিঠাশিল্পীর জন্য ছিল আর্কষণীয় পুরস্কার।

উদ্যোক্তারা বলেন, ‘আজ মেলা শেষ হলেও শেষ নয়। কাল থেকে আমরা আবার পরিকল্পনা করবো ২০১৮ সালের নতুন পিঠার।
 
এটি মেলায় অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ জুগিয়েছে। তারা জানিয়েছেন, ঐতিহ্যকে ধরে রাখাই নয়, আগামী প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যকে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও তারা নিজেদের কাঁধে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা,  জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
ভিএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।