তবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় যে এবার প্রার্থী হচ্ছেন না- সেটি নিশ্চিত হয়ে গেছে। ফলে বিদায়ী এই রাষ্ট্রপতিকে ছাড়তে হচ্ছে রাইসিনা হিল।
বিজেপির চিন্তায় ছিল, আগামী ১৭ জুলাইয়ের নির্বাচনে দলিত (আদিবাসী) জনগোষ্ঠী থেকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করা হবে। ফলে দলের প্রার্থী তালিকা থেকে একে একে বাদ পড়েন লালকৃষ্ণ আডবাণী ও সুষমা স্বরাজ। দলিত প্রার্থী হিসেবে প্রথমে দ্রৌপদী মুর্মুর নাম এলেও পরে সর্বসম্মতভাবে মনোনীত হন রামনাথ কোবিন্দ। বিহারের রাজ্যপাল ৭১ বছর বয়সী রামনাথ রাষ্ট্রপতি পদে লড়বেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন শাসক জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চার (এনডিএ) পক্ষেও।
বিরোধীরা বঙ্গসন্তান প্রণব মুখার্জির নাম প্রকাশ্যে আনলেও সূত্রের খবর ছিলো, বিজেপি যদি কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করে, তবেই তিনি এবারের নির্বাচনে প্রকাশ্যে আসবেন। কারণ, প্রণবের সঙ্গে ভারতের শাসক গোষ্ঠীর সম্পর্ক মধুর।
সেটি না হওয়ায় নিয়ম মেনে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ছাড়তে হবে রাইসিনা হিল। তার পরবর্তী গন্তব্য, সাবেক রাষ্ট্রপতির বাসভবন দিল্লির ১০নং রাজাজি মার্গ।
বিশালাকার ৩৪০টি ঘরের রাইসিনা হিলের প্রাসাদ ছেড়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নতুন ঠিকানা হতে চলেছে ৯টি ঘরের এই ১০নং রাজাজি মার্গের বাংলো। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর যেখানে আমৃত্যু কাটিয়ে গিয়েছেন এ পি জে আব্দুল কালাম।
আগামী জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই এই বাংলোটি ভারতের রাজধানীতে প্রণব মুখার্জির স্থায়ী বাসস্থান হতে চলেছে। গত দু’মাস ধরে সযত্নে এটিকে তার বসবাসের উপযোগী করে তোলার কাজ চলছে।
প্রবেশপথের বিশাল সিংহদ্বার পার হয়ে ঢুকতেই নজর কাড়বে দুধ সাদা রংয়ের দোতলা রাজাজি মার্গের বাংলোটি। রাইসিনা হিলের আভিজাত্যের সঙ্গে কোনো তুলনায় না এলেও একেই ঘষে-মেজে আরও ঝকঝকে বানানোর কাজ চলছে পুরোদমে।
মূল গেট থেকে প্রধান দরজার সামনে পৌঁছাতে মিনিট দুয়েকের হাঁটা পথ। তারপর পার হতে হবে একটি সুবিশাল বারান্দা। সেটি আপাতত মাটি-কাদায় ভর্তি। সেখানে নতুন ঘাস বসানো হবে। প্রধান দরজাটির নকশাও অনেকটাই পুরনো বনেদি বাড়ির সিংহদ্বারের মতো।
ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে একটি বড় হলঘর। তারপর বেশ কিছু করিডোর, একটির পর একটি ঘর, বাথরুম, কিচেন। কোনো ঘরের দরজার পাল্লা ঠিক করা হচ্ছে, কোথাও আবার আলমারিতে চলছে বার্নিশের কাজ।
নিচের তলায় সব মিলিয়ে খানপাঁচেক বেডরুম। রয়েছে নির্দিষ্ট বারান্দা। পেছন দিকে রয়েছে আরও একটি বড় বারান্দা। তার পাশেই রয়েছে দোতলায় যাওয়ার সিঁড়ি।
দোতলার প্রধান আকর্ষণ প্রায় ২৮ ফুট লম্বা ও প্রায় ২০ ফুট প্রশস্ত লাইব্রেরি। চারটি বিশাল বইয়ের আলমারি সেখানে। এর মধ্যে কয়েকটির পলিশের কাজ চলছে। দু’টি এসি মেশিনও ইতোমধ্যেই লাগানো হয়েছে। লাইব্রেরির ঠিক সামনেই বড় বারান্দা, যেখানে প্রকৃতির আলো-বাতাস সহজেই খেলা করে।
মূলত লাইব্রেরি রুমটিকে ঘিরেই চারটি প্রমাণ সাইজের বেডরুম, অ্যাটাচ্ড বাথরুম, কিচেন। চারটির মধ্যে দু’টিকে প্রণব মুখার্জির সম্ভাব্য বেডরুম হিসেবে ধরে নিয়ে কাজ চলছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের মৃত্যুর পর বাংলোটি বরাদ্দ করা হয়েছিল বর্তমান কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী মহেশ শর্মার জন্য। কিন্তু একে প্রণবের জন্য নির্ধারণের সিদ্ধান্তের পরই অশোকা রোডের অন্য একটি বাংলোয় উঠে গেছেন তিনি।
আর কিছুদিনের অপেক্ষা। তারপরই ১০নং রাজাজি মার্গের বাংলোটি হতে পারে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্থায়ী ঠিকানা। দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবন রাইসিনা হিল থেকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আরও এক রাষ্ট্রপতির অধ্যায় শেষ হতে চলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
ভিএস/এএসআর