পশ্চিমবঙ্গে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ইউক্যালিপটাস গাছ থেকে মধু সংগ্রহ করতে মৌমাছি পালকরা চলে যান মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায়।
আবার ডিসেম্বরে যখন সরষের ফুল ফোটে তখন তারা পাড়ি দেন নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগণা ও মুর্শিদাবাদের মতো জেলাগুলোয়৷ ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে লিচুর মরসুমে বাক্স নিয়ে তারা পাড়ি দেন মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলাগুলোতে।
বর্ষার সময়টা তারা সময় কাটান নিজেদের বাড়িতে৷ সে সময় কমতে শুরু করে মৌমাছির সংখ্যা৷ তখন চিনির রস খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয় মৌমাছিগুলোকে৷ প্রায় যাযাবর জীবন কাটাতে হয় মৌমাছি পালকদের৷ বিশেষত উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা, মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলাতেই মৌমাছি পালকদের সংখ্যা বেশি।
দীর্ঘদিন ধরেই মৌমাছি নিয়ে কাজ করছেন দীপক দাঁ৷ বনগাঁ লাইনে গোবরডাঙা এলাকায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের কাজও চলছে তারই উদ্যোগে৷ দীপক জানান, অন্য অনেক কিছুর মতোই বিশ্বে মধুর বাজার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই চিনের দখলে৷ অথচ পশুর, বাইন,খোলসে গাছ থেকে যে উৎকৃষ্ট মানের মধু মেলে। ঠিকমতো প্রচার করা গেলে তা দার্জিলিং চায়ের মতো জনপ্রিয় হতে পারে৷ উপযুক্ত প্রচারের অভাবে এখনও সে সম্পর্কে ততটা জানে না অনেকেই। যদিও গত কয়েক বছর ধরে আমেরিকা, জার্মানিসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে রফতানি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মধু৷
পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে প্রায় ২ লাখ বাক্সে ভ্রাম্যমাণ মৌমাছি পালনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ৷ এক একজন মৌপালকের সঙ্গে যুক্ত থাকেন গড়ে চারজন৷ সেই হিসাবে শুধু এ রাজ্যে মৌমাছি পালনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন লাখখানেক মানুষ৷
ইউক্যালিপটাস, সরষে, লিচু, ধনে, তিল ছাড়াও সুন্দরবনের গরান, কেওড়া, পশুর, খোলসে ও বাইন গাছ থেকে মেলে ভালো মধু৷ নারকেল গাছের ফুল থেকেও মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা৷ সেই মধুর স্বাদও ভালো।
বাংলার আবহাওয়া এবং এ ধরনের গাছ যথেষ্ট পরিমাণে থাকায় মৌমাছি পালন এবং মধু উৎপাদনের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
আর সেই রূপরেখাকে বাস্তবায়িত করতে রাজ্যের পঞ্চায়েত এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতর একযোগে কাজ করবে-এমনটাই জানান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও রেজ্জাক মোল্লা৷
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, ২৬ আগস্ট, ২০১৭
ভিএস/আরআর