ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

অধিক রাসায়নিক নষ্ট করছে পশ্চিমবঙ্গের আমের স্বাদ 

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৮
অধিক রাসায়নিক নষ্ট করছে পশ্চিমবঙ্গের আমের স্বাদ  আমের বাগান, ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: কয়েক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ব্যবসায়িক দিক থেকে আম যাতে বেশি করে বাংলাদেশে যায় সেদিকে সরকারের নজর দিতে হবে।’ অথচ অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারে পশ্চিমবঙ্গে আমের গুণমান পড়ে যাচ্ছে। শুধু গুণগত দিক নয়, তার জেরে মালদহে আমের আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান।

বিশেষত ল্যাংড়া, হিমসাগর, লক্ষ্মণভোগ, ফজলির মতো যে আমগুলি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়, সেগুলির ক্ষেত্রে এই প্রবণতা দেখতে পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত দেড় দু’বছর ধরে এই প্রবণতা বেশি করে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

তবে সবচেয়ে বেশি এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায়।

তবে ততটা প্রকট নয় পার্শ্ববর্তী জেলা মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ায়। পশ্চিমবঙ্গের মালদহতেই আমের ফলন সবচেয়ে বেশি হয়৷ প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে এই জেলায় আম বাগান আছে৷ দ্বিতীয় স্থানে আছে মুর্শিদাবাদ এবং তৃতীয় স্থানে নদীয়া। মুর্শিদাবাদে ২১ হাজার ও নদীয়ায় ৫ হাজার হেক্টর এলাকার আশপাশে আম চাষ হয়৷ এছাড়া কমবেশি বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, শিলিগুড়ি ইত্যাদি জেলাগুলিতেও আম চাষ হচ্ছে।  

প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে আমের ফলন এক বছর ভালো তো পরেরবার অতটা ভালো হয় না। এ সমস্যার সমাধানে ‘প্যাক্টোবুট্রাজল’ নামে এক ধরনের রাসায়নিক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা৷ কিন্তু সেটা যে এমন অধিকমাত্রায় ব্যবহার করা হবে তা ছিল ধারণার বাইরে৷

প্রতিবছর একই রকম আমের ফলন নিশ্চিত করতে কেবল মালদহেই বছরে ১৫ থেকে ১৬ কোটি রুপি প্যাক্টোবুট্রাজল বিক্রি হয়৷ বিজ্ঞানীদের মতে, অধিক ফলনের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় ওই রাসায়নিক ব্যবহার করা হলেও গাছের পুষ্টির অন্য দিকগুলি অবহেলিত থেকে যাচ্ছে৷ এটি একটি বড় বিপদের দিক বলে মনে করছেন তারা৷ শুধু তাই নয়, বিশেষত গোপালভোগ ও হিমসাগরের মতো যে আমগুলি প্রথম দিকে বাজারে আসে, সেগুলি ব্যবসায়িক কারণে আগে পেড়ে ফেলার জন্যও খারাপ হচ্ছে ফলটির স্বাদ৷

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, রাজ্যের বাজারে যে গোপালভোগ ও হিমসাগর আম বিক্রি হয়, তার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ অকালেই পেড়ে নেওয়া হয়৷ একটি আম গাছ সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ বছর বাঁচে৷ ২৫ বছরের পুরনো গাছগুলিতে রাসায়নিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন আছে৷

প্যাক্টোবুট্রাজল ব্যবহারে কেবল আমের আকারই ছোট হচ্ছে না, গাছগুলিও শুকিয়ে যায়৷ যদিও এই রাসায়নিকটি মানুষের দেহে কী প্রভাব ফেলছে, সে বিষয় এখনও সঠিকভাবে স্পষ্ট নয়। তবে যে পদ্ধতিতে পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষ করে মালদহে ব্যবসায়িক কারণে আমের চাষ হয়, তার মধ্যেও সমস্যার বীজ লুকিয়ে রয়েছে।  

কলকাতার বাসিন্দা দীপক লাহিড়ী। তার মূল ব্যবসা বাগান লিজ দেওয়া। মালদহে একাধিক বাগানের মালিক তিনি। দীপকবাবু জানান, বাগান লিজ দেওয়ার পরে মুকুল ধরা থেকে আম তোলা পর্যন্ত কয়েক দফায় বাগানগুলির হাত বদল হয়৷ লাভ বাড়ানোর আশায় বেশি মাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার করে ফলন বাড়াতে গিয়েই আমের সর্বনাশ ডেকে আনা হচ্ছে।  

লিজে পাওয়া ব্যবসায়ীদের বেশি মাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার করতে নিষেধ করি আমরা৷ কিন্তু তারপরেও তারা লুকিয়ে চুরিয়ে তা ব্যবহার করে। ফলে গুগগতভাবে আমের মান খারাপ হচ্ছে। সঙ্গে মারা পড়ছে বহু গাছ৷

এর জেরে মার খাচ্ছে বিদেশে রপ্তানিও। অথচ পশ্চিমবঙ্গে অন্য জেলা ছাড়া ভারতের দক্ষিণের রাজ্যে এ সমস্যা নেই। মালদহে স্বাদের দিক থেকে আম অতি সুস্বাদু। তা সত্ত্বেও কলকাতার মানুষ মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, শিলিগুড়ি ইত্যাদি জেলার আমের উপর বেশি নির্ভর করে। ফলে এক প্রকার আমরা যারা বাগানের মালিক, সারা বছর বাগান লিজ দিয়ে ব্যবসা করি আমাদেরও বাজার খারাপ হচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য।

তবে এখনও সময় আছে। এ বিষয়ে প্রশাসন একটু বেশি সজাগ হয়ে আমের গুণমান ও সঠিক রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবসায়ীদের বোঝায়, তাহলে আগামী দিনে এ সমস্যা থেকে অচিরেই মুক্তি পাওয়া যাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৮
ভিএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।