শত নয়, লাখো লাখো মানুষ! কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সমাবেশে এ রকম জনস্রোত দেখে নেতারা শান্তিতে ফিরতে পারলেন নিজ নিজ রাজ্যে। মঞ্চ থেকে মহাজোট নেতারা জানালেন এতো মানুষের সমাগম ভাবতে পারনি।
এমনই বললেন উত্তর প্রদেশের নেতা জয়ন্ত সিংহ। তার সঙ্গে তাল মেলালেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও। এরকম র্যালির রেলা দেখে বিরোধীজোট স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও কপালে ভাঁজ পড়তেই পারে দিল্লির কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠীর।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেবে গৌড়া, পাঁচ রাজ্যের সাবেক এবং এক বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও বিভিন্ন প্রদেশের শক্তিশালী আঞ্চলিক দলগুলোর নেতৃত্ব মিলিয়ে ২৩ দলের নেতার মিলন ঘটলো সমাবেশের মঞ্চে। মঞ্চ পরিচালনা করেন খোদ মমতা। একে একে নেতাকে বলার সুযোগ করে দিলেন তিনি। কেউ ভাষণ দিলেন হিন্দিতে, কেউ তামিল ভাষায়, কেউ আবার ইংরেজিতে। নানা জাতির নানা ভাষা, মিলিত হলো মঞ্চে। সবশেষে বললেন মমতা।
সমাবেশ থেকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, আমি মনে করি ভারতের রাজনীতিতে আজকের দিনটি যথেষ্ট ঐতিহাসিক। গত পাঁচ বছরের মোদী-অমিত শাহের জোট দেশকে খারাপ অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। মোদী বেকারদের ভুল বুঝিয়ে ভোট নিয়েছেন। যুবকরা চাকরি পাচ্ছে না। কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন। দেশে দলিত অত্যাচার হচ্ছে। মুসলমানদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। গত ৭০ বছরে পাকিস্তান চেয়েছে দেশকে টুকরো টুকরো করতে। কিন্তু তা পারেনি। আর পাঁচ বছরে বিজেপি তা-ই করে দেখাচ্ছে। ওরা হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে লড়াই বাঁধিয়ে দিচ্ছে। মোদী ২০১৯ -এ আবার ক্ষমতায় এলে, দেশ টুকরো হয়ে যাবে। যে করেই হোক মোদী-অমিত শাহকে রুখতে হবে। বিক্ষুব্ধ বিজেপি সংসদ সদস্য তথা বলিউড অভিনেতা শত্রুগণ সিনহা বলেন, আমি জানি আজকের সমাবেশে যোগ দেওয়ার পর আমাকে বহিষ্কার করা হবে। তাতে আমি ভয় পাই না। আমি সত্যের সঙ্গে আছি। এর থেকে বড় সমাবেশ আমি দেখিনি। এটা বেঙ্গল আর মমতার ক্রান্তিকারী ক্ষমতার জন্য সম্ভব হয়েছে। মমতার ডাকে দেশের সংবিধান রক্ষা করতে এবং দেশকে আগে বাড়ানোর জন্য আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি।
জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুখ আবদুল্লা বলেন, আজ আমরা সমাবেশ করছি, কালকে ওরা (বিজেপি) বলবে একজনকে সরানোর জন্য আমরা জোট বেঁধেছি। বিষয়টা একজনকে (মোদী) হটানোর নয়। এটা দেশ বাঁচানোর লড়াই। একটা চিন্তার পরিবর্তনের জন্য আমরা একজোট হয়েছি। জম্মু-কাশ্মীরে অবস্থা ভয়ানক। ওরা মনে করে মুসলমানরা ভারতীয় নয়। ওরা ভুলে যায় আমরাও এদেশেরই সন্তান। গোটা দেশে বিজেপিবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। এবার দেশে নতুন সরকার হবে।
সমাবেশে সবশেষে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা ফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে সম্ভবত দেশের ভাবী প্রধানমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, কলকাতার ব্রিগেড সব সময় ইতিহাস তৈরি করেছে। বাংলাদেশ হওয়ার পর প্রথম বিজয় উৎসব হয়েছিল এই ব্রিগেডে। ইন্দিরা-মুজিব মিলে সেই বিজয় উৎসব পালন করেছিলেন। ব্রিগেড সব সময় ইতিহাস তৈরির জন্য বিখ্যাত। দেশের প্রয়োজনে সবাই আমরা এক জায়গায় আসতে বাধ্য হয়েছি। মনে রাখবেন একটা শহর গুরুত্ব পায় না, কিন্তু অনেক শহর নিয়ে একটা দেশ তৈরি হয়। ‘এখানেই গোটা ভারত আছে। ২৩টি পার্টি আজকের সমাবেশে যোগ দিয়েছে। মোদীর এক্সপেয়ার ডেট শেষ। ওষুধ কেনার সময় যে রকম আমরা এক্সপেয়ার ডেট দেখি, সেরকম মোদীর দিন শেষ। মনে রাখবেন বাংলার মাটি পবিত্র ঘাঁটি। এই মাটি স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ দেখিয়েছে, নবজাগরণের পথ দেখিয়েছে। ভারত যখন সমস্যায় পড়েছে, তখন বাংলাই পথ দেখিয়েছে। ’
এই সরকার একে অপরের থেকে ভেঙে দিচ্ছে। একটা বিদ্বেষমূলক পলিটিক্স শুরু করেছে। ভারতে সব কিছুর ধস নামছে, আর বিজেপি বসগিরি দেখাচ্ছে। লুটের টাকায় তারা চলছে। তাদের সরকার পড়লে সব টের পাবে। কতো টাকা ছিল, আর ক্ষমতায় এসে কতো টাকা করেছে। তা আপনারাও জানেন। পার্টি অফিসগুলো এখন শপিংমলের সমান উন্নত। আপনার (মোদী) সঙ্গে থাকলে, সবাই ভালো আর না থাকলে সবাই চোর! ভয় দেখাচ্ছেন আমাদের! এনআরসির নাম করে আসামে মানুষ নিধন চলছে। নর্থ-ইস্ট নাগরিকত্ব বিলের নামে অত্যাচার চলছে- এমন ভাবেই মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মমতা।
মহাজোটের উদ্দেশে মমতা বলেন, এখান থেকে শুরু হলো। আপনারা কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী নিজ নিজ রাজ্যে প্রচার শুরু করুন, আমরা সবাই যাবো সেখানে। মোদীর উদ্দেশে বলেন, আচ্ছে দিনের অনেক সময় পেয়েছেন কিন্তু আনতে পারেননি। জোটের উদ্দেশে বলেন, অনেক হয়েছে আচ্ছে দিন। এবার দিল্লি বদলে দিন। আমার জন্মভূমি সকল দেশের রানি। এই ভূমিতে দাঙ্গা চাই না, বিদ্বেষ চাই না, ভেঙে যেতে দেবো না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারী ১৯, ২০১৯
ভিএস/টিএ