ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

শীতের সঙ্গে বিদায় নিচ্ছে ভুটিয়ারাও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৯
শীতের সঙ্গে বিদায় নিচ্ছে ভুটিয়ারাও ভুটিয়াদের শীতের কাপড়। ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: কলকাতা থেকে বিদায় নিচ্ছে শীত, সেই সঙ্গে বিদায় নিচ্ছে শীতের পরিযায়ী ভুটিয়ারা। কলকাতায় ওয়েলিংটন স্ট্রিটে প্রতি বছর, মৌসুম শুরু থেকেই বসে শীত পোশাকের মেলা। রঙিন উল আর বাহারি পশমের উজ্জ্বল রঙে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে রামধনু নেমে আসে রাজপথগুলোয়।

জানুয়ারির শেষে শীত যখন কলকাতা ছাড়বে ছাড়বে করছে তখন ওয়েলিংটন স্ট্রিটে গিয়ে দেখা গেল ভাঙা হাটের ছবি। তল্পিতল্পা গোটাচ্ছেন ভুটিয়ারা।

এদের অনেকেই কলকাতায় এসেছিলেন নভেম্বরের দিকে কেউ অাবার ডিসেম্বরের শুরুতে।

এ মৌসুমে ব্যবসা কেমন হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে উদাস তাইচুং জানায়, প্রতি বছর ক্রমশ কমছে ব্যবসা। আগের দিনে গড়ে পাঁচ হাজার রুপি বিক্রি হত। এখন তা হাজার রুপি বা তাও হয় না।

ওয়েলিংটন স্ট্রিটে পশরা সাজানো ভুটিয়াদের সিকিমের উত্তর প্রান্তের প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় বসবাস। শীতের শুরুতে তাদের ঠিকানা হয় কলকাতার এই রাস্তায়। একসময় দরদাম করে কেনাবেচার আওয়াজে গমগম করত এলাকা। কিন্তু এখন মানুষই আসেন কম। আসলেও দেখে চলে যান। এমনই আক্ষেপ বংশ পরম্পরায় ব্যবসা করতে আসা ভুটিয়াদের।

ভুটিয়াদের তৈরি পোশাকের মূল বৈশিষ্ট্য সেগুলো পশম দিয়ে তৈরি। শীতপ্রধান অঞ্চলে ভেড়া, পাহাড়ি ছাগলের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। বসন্তকালে এদের শরীর থেকে চিরুনি দিয়ে পশম সংগ্রহ করা হয়। সেই পশম দিয়ে তৈরি হয় শীতবস্ত্র। গ্রীষ্মকালে খালি চামড়ায় এদের সমস্যা হয় না। শীতে আবার পশম গজিয়ে যায়।  

পোশাক ব্যবসা ছাড়াও ভুটিয়াদের মূল জীবিকা পশুপালন। যদিও অল্প চাষাবাদ হয়। মূলত স্কোয়াশ, পাহাড়ের উপরের অংশে এলাচ প্রভৃতি চাষ করেন এরা। বহু বছর ধরে ভুটিয়ারা কাশ্মীর, নেপাল প্রভৃতি অঞ্চলে পশমিনা ছাগল, চ্যাংথাই  ছাগল, ছায়াঙ্গারা ছাগল থেকে পশমিনা, উল সংগ্রহ করেন। সেজনি সুচ (কাঠের তৈরি সুচ) দিয়ে হস্তচালিত তাঁতে বোনা হয় রকমারি শীত পোশাক। এসব নিয়েই শীত শুরু হলেই কলকাতার বাজারে পসরা সাজান তারা।

ভুটিয়াদের  শীতের কাপড়ের পসরা।  ছবি: বাংলানিউজপ্রতি বছর ভুটিয়াদের ব্যবসা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে  কলকাতার এক পোশাক ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ পাল বলেন, কলকাতাবাসী শীতের পোশাকের ব্যাপারে ক্রমশ ব্রান্ডের দিকে ঝুঁকছে। এছাড়া ফ্যশানেও এসেছে পরিবর্তন। উলের পোশাকের পরিবর্তে কলকাতার প্রজন্ম এখন লেদারের জ্যাকেটে সাবলীল। শপিং মলগুলি হাতের মুঠোয় নিয়ে আসছে বিদেশি পোশাকের সম্ভার। যার সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ব্যবসা হারাচ্ছে ভুটিয়ারা।

অর্থনীতির চাহিদা জোগানের এই তত্ত্ব হয়ত  ভুটিয়ারাও বুঝেছেন। তাই অনেকেই আসা বন্ধ করেছে, বাকিদের মতে ‘এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই।

শীতের পরে শহরের সবুজে উঁকি দেবে পলাশ। লাল পলাশে ভালবাসার উষ্ণতা বাড়াবে শহর কলকাতা। পথের দাবিকে মেনেই ভুটিয়ারাও ফিরে যাবে সিকিমের গ্রামে। কলকাতা থেকে সঙ্গে নিয়ে যাবে আয় করা টাকা আর কনকনে শীত।

যে শীতের জন্য বাঙালিকে অপেক্ষা করতে হবে আবারও একটা বছর। কিন্তু যেভাবে ভুটিয়াদের আয় কমছে কতদিন আর তারা আসতে পারবে এ নগরে তাই এখন দেখার।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৯
ভিএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।