কমিশনার অফ পুলিশের (সিপি) বাড়ির সামনে থেকে সিবিআই-কে সরাতে গিয়ে বাধে সংঘাত। এক প্রকার জোর করে সিবিআই সদস্যদের তোলা হয় পুলিশের গাড়িতে।
অপরদিকে সিবিআইয়ের অভিযোগ, রাজ্যে ঘটে যাওয়া চিটফান্ড কাণ্ডে এর আগে চারবার তলব করা হয়েছিল কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে। সিপির উত্তর সন্তোষজনক ছিল না বলে দাবি সিবিআইয়ের। সারদা চিটফান্ড কান্ডে ধৃত দেবযানি মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে সিবিআই আধিকারিকরা জানতে পারেন ঘটনার পর মিডল্যান্ড পার্কের অফিস থেকে একটি লাল ডায়েরি এবং পেন ড্রাইভ অভিযানের সময় বাজেয়াপ্ত করেন কলকাতা পুলিশের কর্মকর্তারা। সিবিআইয়ের দাবি, তদন্তভার হস্তান্তরের সময় সেই ডায়েরি এবং পেন ড্রাইভ তারা পায়নি।
এবিষয়ে সিপি সঠিক উত্তর দিতে পারবেন বলে মনে করছে সিবিআই। তাই তারা গিয়েছিল সিপির বাড়িতে। কিন্তু নথি থাকা সত্ত্বেও সহযোগিতা করেনি পুলিশ। এমনকি নিয়ম অনুযায়ী সিবিআইকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের। তাও তারা দেয়নি। সমস্ত ঘটনা ক্যামেরা বন্দী করা হয়েছে সিবিআইয়ের তরফে। এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
এরপরই রাজীব কুমারের সঙ্গে দেখা করতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেখান থেকে কলকাতা মেট্রো চ্যানেলে ধরনায় বসেন তিনি। ধরনায় বসার কারণ হিসেবে মমতা জানান, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ এটা৷ ভারতের সংবিধান বাঁচানোর জন্যই মেট্রো চ্যানেলে ধরনায় বসেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলায় 'কুছ তো কারো' বলে ২ ফেব্রুয়ারি সিবিআই কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ তারপরই সিবিআইয়ের এই তৎপরতা৷ বিজেপি চোর পার্টি, তৃণমূল নয়৷ বল প্রয়োগ করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে বিজেপি৷ ক্ষমতা থাকলে ভোটে জিতে আসুক তারা৷
মমতা প্রশ্ন তুলেন সিবিআইয়ের উদ্দেশ্য নিয়েও, 'এর আগে আমার (মমতার) বাড়িতে যিনি চা দেন তাকেও ডেকে পাঠানো হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য৷ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস পালকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল৷ আসামের মুখ্যমন্ত্রী চিটফান্ডের টাকা নিয়েছে৷ তাকে কেন গ্রেফতার করা হল না? অভিনেতা লকেট চট্টোপাধ্যায় ও বাবুল সুপ্রিয়কে তো গ্রেফতার করা হয়নি?'
'কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার চিটফান্ডের সঙ্গে যুক্ত প্রমাণ করুক সিবিআই৷ ওয়ারেন্ট ছাড়া সিবিআই অভিযানে নেমেছে৷ ওরা গ্রেফতার করে দেখাক৷ এটা সংবিধানের উপর আঘাত৷ এটা চলতে পারে না', মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর৷
মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও ধরনা মঞ্চে রয়েছেন ফিরহাদ হাকিমের মত সিনিয়র মন্ত্রী ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা। মমতা আরও জানান, এই মুহুর্তে রাজ্য বিধানসভায় শীতকালীন অধিবেশন চলছে। ধরনার কারণে বিধানসভায় যেতে পারবেন না। ধরনামঞ্চ থেকেই চালাবেন যাবতীয় কাজকর্ম।
এরপরই রাজ্যের রাজ্যপালের কাছে দ্বারস্থ হয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। রাজ্যপালের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনী চান তারা। সকালেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে সিবিআই।
রাজনৈতিক মহলের একটি অংশের মতে, মমতা এখন আর বিরোধী নেত্রী নন। রাজ্যের দায়িত্বশীল পদে আছেন তিনি। ধরনায় কোনো রাজনৈতিক নেত্রী বসতে পারে, কোনো সরকার নয়। ধরনায় না বসে সরাসরি আলাপে বসুক কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে। তিনি নিজেই ধরনায় বসলে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা আরও খারপ হতে পারে।
রোববার এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সাক্ষী রইল রাজ্যবাসী। এরকম সংঘাত ভারতে এর আগে হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারী ০৪, ২০১৯
ভিএস/এমএইচএম