ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

বাম-কংগ্রেস জোট না হওয়ায় লাভ হলো মমতার!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৯
বাম-কংগ্রেস জোট না হওয়ায় লাভ হলো মমতার! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা: ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে কিছুটা হলেও চিন্তায় ছিল তৃণমূল সুপ্রিমো। একদিকে যেমন বিজেপি মাথার ওপর নিঃশ্বাস ছাড়ছে। অপর দিকে জোট হলে ভোট কমতে পারতো মমতার। তাই পশ্চিমবঙ্গে বাম ও কংগ্রেসের জোট না হওয়ায় সবথেকে সুবিধা হয়ে গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই।

বিজেপি এবং কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এমনটাই মনে করছে। মূলত পশ্চিমবঙ্গে বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা শেষ পর্যন্ত হয় কিনা তা নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে গত কিছুদিন ধরেই ছিল যথেষ্ট আগ্রহ।

জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক দলগুলিও নজর রাখছিল সেদিকেই।

এর কারণ বাম ও কংগ্রেসের জোট হওয়া এবং না হওয়ার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ভোটব্যাংকের সমীকরণের আদলই যে বদলে যাবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। বিজেপির রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও স্ট্র্যাটেজি নির্মাতারা মনে করছেন, বাম ও কংগ্রেসের জোট হলে তুলনামূলক ভাবে মমতা বিরোধী ভোট যতটা বিভাজিত হতো, এখন তার থেকেও কিছুটা বেশিই হবে। আর এ চতুর্মুখী লড়াইয়ে বেশি লাভ হয়ে যাবে মমতারই।

কারণ কংগ্রেসের কর্মী ও সমর্থকরা যারা মমতাকে অপছন্দ করে এবং সিপিএমকেও পছন্দ করেন না, তারা এবার নিজেদের দলকেই ভোট দিতে পারবেন। আর সিপিএমের কমিটেড ভোটাররা চিরশত্রু কংগ্রেসের সঙ্গে এ জোট না হওয়ায় আরও বেশি করে দলের জন্য কাজ করতে পারবে।

এবারের নির্বাচনে বিজেপির অন্যতম অংক ছিল জোট হলে বাম ও কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কের একটি বড় অংশের ভোট গেরুয়া প্রার্থীরা পাবেন। কারণ সিপিএম ও কংগ্রেসের যারা এ জোট অথবা আসন সমঝোতা মানতে পারছিলেন না তারা বিরক্ত হয়েই বিজেপিকে দিতেন। এবার সেই সম্ভাবনা কমে গেল। ফলে মমতা বিরোধী ভোট তিনভাগে বিভাজিত হয়ে যাওয়ায় তৃণমূল সুবিধাজনক জায়গায় চলে যাবে বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের।

যদিও এ অংকের পাল্টা মতামতও রয়েছে বিজেপির মধ্যে। সেই পাল্টা অংশটিতে বেশি সংখ্যায় সেলেব্রিটি এবং পরিচিত মুখকে প্রার্থী করা হলে কংগ্রেস ও সিপিএমের পরিবর্তে মানুষ বেশি করে বিজেপিকেই ভোট দিতো। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যতটা প্রচার করা হয়েছিল সেই নিরিখে তৃণমূলের বড়সড় কোনো নেতাকেই বিজেপি ভাঙিয়ে আনতে পারেনি। রাজ্যে বিজেপির সবথেকে বড় সমস্যাই হল প্রার্থী। ভোটার আছে কিন্তু প্রার্থী নেই। ভোটব্যাংক আছে কিন্তু স্থানীয় তথা রাজ্যস্তরে জনপ্রিয় নেতা নেই। সেই কারণেই রাজ্যে প্রার্থী তালিকা এখনও সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারেনি বিজেপি।

অপরদিকে বাম ও কংগ্রেসের জোট হলে বিজেপি যেভাবে নির্বাচনে প্রচারের ফরম্যাট স্থির করেছিল, পৃথক ভাবে ওই দুই দল লড়াই করলে সেটার আর দরকার হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। সিপিএম এবং কংগ্রেসের ফলাফল যে এককভাবে ভালো হওয়ার সুযোগ নেই সেটা স্পষ্ট। বিজেপি নিজের ভোটব্যাঙ্ক বাড়িয়ে নেওয়ার আশা করলেও তৃণমূল বিরোধী জোট তিনটি দলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিজেপির ভোটপ্রাপ্তির শতকরা হার যে আদৌ কতটা বাড়বে সেটা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, কংগ্রেসও ধরে নিয়েছে তাদের সঙ্গে বামদের জোট না হওয়া আসলে সুবিধা করে দিয়েছে মমতাকেই। গতবারের জেতা নিজেদের চারটি আসন ধরে রাখাও যে এরপর যথেষ্ট কঠিন সেটাও কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন। তবে বাম-কংগ্রেস-বিজেপি-তৃণমূল, রাজ্যে এ চতুর্মুখী লড়াইয়ে নিয়ে কোনো পক্ষেরই সন্দেহের আবকাশ নেই যে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে লাভ হল তৃণমূলেরই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৯
ভিএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।