গত ১১ এপ্রিল ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও অঞ্চলে লোকসভার আসনগুলোতে তিন দফার নির্বাচন শেষ হয়েছে। হার বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রথম দুই দফায় গড়ে ৭০ শতাংশের মতো ভোট পড়লেও তৃতীয় দফায় এ হার কমে এসেছে ৬৩ দশমিক ২৪ শতাংশে।
লোকসভা ভোটের অনেক আগে থেকেই ভারতের জাতীয় টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলগুলোতে ধারাবাহিকভাবে ভোট দিতে উৎসাহ দিয়ে আসছে কমিশন। বিনোদন জগতের তারকাসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিচিতমুখদের সেসব প্রচারণায় যুক্ত করে জনগণকে এক্ষেত্রে সচেতন করেছে নির্বাচন। কেবল তাই নয়, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন, ওয়ার্কশপ, রোড শো ইত্যাদিও করা হয়। কিন্তু ফল কোনোভাবেই সন্তোষজনক মনে হচ্ছে না নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে।
তিন দফায় গড় ভোট বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, উদ্বেগজনক অবস্থা উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের। এই দুই রাজ্যেই ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশের নিচে। উত্তরপ্রদেশে ভোট পড়েছে ৫৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং বিহারে ভোট পড়েছে ৫৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। উড়িষ্যা ও মহারাষ্ট্রেও ভোট দেওয়ার হার ৬০ শতাংশের নিচে। উড়িষ্যায় এ তিন ধাপে ভোট পড়েছে ৫৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। মহারাষ্ট্রে পড়েছে ৫৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। কম ভোট পড়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য অর্থাৎ গুজরাটেও। তিনটি দফায় এখানে প্রদত্ত ভোটের হার ৬০ শতাংশের আশেপাশে।
তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা কাশ্মীরে। এখানে ভোটের হার বাকি রাজ্য বা অঞ্চলগুলোর চেয়ে অনেকটাই কম। যেখানে তৃতীয় দফায় বাকি রাজ্যগুলোতে ৬০ শতাংশের আশপাশে ভোট পড়েছে, সেখানে কাশ্মীরে গড় ভোট পড়েছে মাত্র ১২ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা। তৃতীয় দফায় পশ্চিমবঙ্গে ভোট পড়েছে সবচেয়ে বেশি ৭৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর আগে বাকি দুই দফায়ও ভালো ভোট পড়ে পশ্চিমবঙ্গে। এর পরেই আছে ত্রিপুরা। ত্রিপুরায় তৃতীয় দফায় গড় ভোট ৭৮ দশমিক ৫২ শতাংশ আর কেরালায় ৭০ দশমিক ২১ শতাংশ। আগের দু’দফায়ও প্রায় সমান। এছাড়া দাদরা নগর হাভেলি, গোয়ায় তিন দফা মিলিয়ে ৭০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে।
নির্বাচন কমিশন যে এতো কিছুর পরও ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে সফল নয়, তা এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, রাজ্যের বাইরে অন্য রাজ্যে গিয়ে কাজ করার ফলে একাংশের মানুষ ভোট দিতে পারেন না। কাজের সূত্রে অনেকেই প্রবাসী হওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও ভোট দিতে পারেন না।
বিশেষজ্ঞদের চোখে, ভোট দিতে অনীহাও হার পড়ে যাওয়ার অন্যতম বড় কারণ। এই অনীহা গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরাঞ্চলে বেশি। গ্রামাঞ্চলের সমস্যা সচেতনতার অভাব। ভোট দেওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নন। যেজন্য অনেকে ভোট দেওয়ার সাংবিধানিক দায়িত্বটাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। তাছাড়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই বা হারিয়ে গেছে বলেও ভোট দেন না অনেকে।
পর্যবেক্ষকদের ভাষ্যে, অনেক সময় নির্বাচনী গণ্ডগোল বা সংঘাত সাধারণ মানুষের ভোট দেওয়ার ইচ্ছে কমিয়ে দেয়। যদিও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে এই সমস্যাকে সমাধানের চেষ্টা করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতে ‘নোটা’বা না-ভোট চালু হয়েছে বেশ কয়েক বছর। কিন্তু তারপরও একটি অংশ রয়ে গেছে যারা হয়তো চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সমসাময়িক প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপর কিছুটা বিরক্ত। তারাও অনেক সময় তাদের প্রতিবাদ স্বরূপ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৯
এইচএ/