রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোটে আট আসনের জন্য ৫৫৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বুথ পাহারার কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে।
এর মধ্যে বহরমপুর আসনে ১০০শতাংশ বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে।
রাজ্যের এই দুটি জেলাকে স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ৮টি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য মোট ৮৮টি কুইক রেসপন্স টিম থাকছে।
চতুর্থদফায় সব মিলিয়ে রাজ্যের ৬৮জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। তার মধ্যে কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, তৃণমূল কংগ্রেসের শতাব্দী রায় ও মুনমুন সেন এবং বিজেপির এসএস আলুওয়ালিয়া ও বাবুল সুপ্রিয়ের মতো স্টার ও হেভিওয়েট প্রার্থীরাও রয়েছেন।
এসব আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা এক কোটি ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৯১। ৯ হাজার ৮০৩টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ১৫ হাজার ২৭৭টি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে। রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সঞ্জয় বসু জানিয়েছেন, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করার জন্য কমিশন যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।
বহরমপুর কেন্দ্রে ১০জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীর সঙ্গে একদা তারই ছায়াসঙ্গী তৃণমূলের অপূর্ব সরকারের জোর লড়াই। এই আসনটি অধীরের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে নন্দীগ্রাম জমিরক্ষা আন্দোলনের কাণ্ডারী রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী প্রচারের শেষদিন পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়েছিলেন।
অধীর-শুভেন্দুর দ্বৈরথ বহরমপুর আসনটির আকর্ষণ এক বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
আসানসোল লোকসভা আসনে ১০জন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়ের সঙ্গে তৃণমূলের মুনমুন সেনের।
তবে সিপিএমের গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ও তার ইমেজের জোরে এই লড়াইয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে ৬জন এবং বর্ধমান পূর্ব আসনে ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই দুটি কেন্দ্র ভোটগ্রহণ পর্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতেই ১৫০কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের মমতাজ সঙ্ঘমিতার সঙ্গে বিজেপির এসএস আলুওয়ালিয়ার মূল লড়াই হলেও সিপিএমের আভাষ রায় চৌধুরী ভালো ভোট টানতে পারেন। এমনকি এই আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে।
নদীয়া জেলায় কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট আসনে ভোট পরিচালনার জন্য ১৩০কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে বিজেপির কল্যাণ চৌবের এবং রানাঘাট কেন্দ্রে তৃণমূলের রূপালী বিশ্বাসের সঙ্গে বিজেপির জগন্নাথ সরকারের জোর লড়াই। এই দুটি কেন্দ্রেই ৯৭শতাংশ বুথে আছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
বীরভূম জেলায় বোলপুর লোকসভা আসনে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বীরভূম লোকসভা আসনে ৯জন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই তৃণমূলের শতাব্দী রায়ের সঙ্গে বিজেপির দুধকুমার মণ্ডলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
অন্যদিকে, বোলপুর আসনে সাবেক সংসদ সদস্য রামচন্দ্র ডোম এবারও সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন। তবে বোলপুর কেন্দ্রে মূল লড়াই তৃণমূলের অসিত মালের সঙ্গে বিজেপির রামপ্রসাদ দাসের।
এখানে ঘাসফুলের প্রার্থী অসিতবাবু হলেও বিরোধীদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী অনুব্রত মণ্ডল। বিরোধী প্রার্থীদের লড়তে হবে অনুব্রত বাবুর সংগঠনের সঙ্গেও। কর্পোরেট ও একপ্রকার ত্রাস মিলিয়ে পার্টি চালানো অনুব্রত বাবু অনেক আগেই বুথ থেকে জেলাস্তর পর্যন্ত কর্মী সভা করে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে তার চাষ করা জমি থেকে তিনি নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলতে পারলেন কি না, সেটা দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছে রাজ্যবাসী।
কারণ সকাল থেকেই নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনী নজরবন্দি করেছে তৃণমুলের অনুব্রত মণ্ডলকে। এমনকি ভোট চলাকালীন যাতে মোবাইল ও ফোন ব্যবহার করতে না পারে, সে কারণে সেসবও জমা দিতে হয়েছে নির্বাচন কমিশণে।
বিগত তিনটি দফায় ভারতে অর্ধেকের বেশি আসনে ইতোমধ্যে নির্বাচন হয়ে গেছে।
এবার চতুর্থ দফায় ৯টি রাজ্যের ৭২টি কেন্দ্রে লোকসভা ভোট হচ্ছে। সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে এ ভোটগ্রহণ।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৯
এমএ/