ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এমনই কথা বললেন কলকাতা করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ।
করপোরেশনের এ কর্তার কথায়, মশার আয়ু সাতদিন।
দ্বিতীয়টি, ডেঙ্গু রোগীকে মশামুক্ত রাখা। ডেঙ্গুবাহক একটি এডিস মশা রোগীর রক্ত খেয়ে ডিম পাড়লে তার থেকে কমপক্ষে ১০০ মশার জন্ম নেবে। অর্থাৎ নজর রাখা, মশা যাতে রোগীর আশপাশে না আসে। কলকাতা করপোরেশন এই কাজটাকে ওয়ার্ডভিত্তিক দু’টি ভাগে ভাগ করেছে। একটি টিমের কাজ সচেতনতা বৃদ্ধি, অপর টিমের কাজ মশা ধ্বংস করা। এই কাজ করার জন্য করপোরেশন নিয়ন্ত্রিত ১৪৪টি ওয়ার্ডকে ১৬টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মসকুইটো অয়েল বা বিভিন্ন ধরনের ইক্যুপমেন্ট দিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংস করা। অপর টিমের কাজ ওয়ার্ড প্রতি প্যাথলজি ঘুরে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ করা। সেই ডাটাবেজের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কোন অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। সেভাবে আমরা পরিকল্পনা সাজাই। এছাড়া মশার চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটেছে। আগে এডিস মশা বদ্ধ জায়গায় ডিম পারতো, এখন খোলা স্থানেও ডিম পাড়ছে। ফলে বিশাল উন্মুক্ত স্থানে ড্রোনের মাধ্যমে মেডিসিন দিয়ে এডিস মশার লার্ভা মারার কাজ শুরু হয়েছে।
তিন নম্বর কাজ হলো, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে কঠোর হতে হবে। যদিও এ বিষয়ে আমরাও সেভাবে কঠোর হতে পারিনি। বিশ্বের তৃতীয় দেশগুলো এ বিষয় যথেষ্ট দুর্বল। অথচ সৌদি, সিঙ্গাপুর দেখুন শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আইন কতোটা কড়া। আসলে যে দেশ তার জনগণকে সচেতন করতে পারবে সে দেশ তত উন্নত। তবে পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য সাধারণ মানুষের গাফিলতির বিরুদ্ধে কড়া কিছু আইন আনা হয়েছে। যেমন ধরুন বাড়ির সামনে ময়লা জমিয়ে রাখা বা নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া আবর্জনা ফেলা। এজন্য আগে নেওয়া হতো ৫০০ রুপি। এখন অপরাধ বুঝে একলাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানা করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যায় বুঝে বাড়ির ট্যাক্সের বিলের সঙ্গে মোটা অঙ্কের জরিমানা যোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
এই ধরনের কাজ করতে গেলে আগে একটা পরিকল্পনা করতে হবে এবং সবাইকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সরকার, পৌরসভা, স্বাস্থ্যদপ্তর, অর্থদপ্তর সবাই মিলে কাজ করেই খুব তাড়াতাড়ি ডেঙ্গু থেকে প্ররিত্রাণ পাওয়া যায়। যেখানে শতকরা দুই জন রোগী থাকলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রিত এলাকা বলে ধরা হয়, সেখানে বর্তমানে কলকাতায় ডেঙ্গু রোগী শূন্য দশমিক দুই।
ঢাকাকে কিভাবে আপনারা সহযোগিতা করবেন? এমন প্রশ্নে কলকাতা করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, বিভিন্ন রকম প্ল্যানিং। যেভাবে আমরা সাফল্য পেয়েছি সেগুলো শেয়ার করতে পারি। সেটা প্র্যাকটিক্যাল হতে পারে বা থিওরিটিক্যাল হতে পারে। তারা যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ (ঢাকা) করবে।
কাঁটাতার পেরিয়ে ডেঙ্গু আসছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ডেপুটি মেয়র বলেন, দেখুন বিষয়টা আপনাকে বুঝতে হবে। প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ কলকাতায় আসছেন বিভিন্ন কাজে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আপনার বেশি বলে সেই মুহূর্তে ডেঙ্গু আপনাকে কাবু করতে পারলো না। কিন্তু জীবাণু আপনার শরীরে প্রবেশ করে গেছে। রক্ত খাওয়া মশাটি আরেকজনের শরীরে বসলে তার শরীরে জীবাণু ঢুকতে বাধ্য। এছাড়া কলকাতা ডেঙ্গুমুক্ত কোনো সময় বলা হয়নি। বলা হয়, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৯
ভিএস/জেডএস