কথা হচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ও অধিকার সচেতন কয়েকজনের সঙ্গে। তারা এনআরসি প্রকাশের বিষয়টিকে কেন্দ্রীয় সরকারের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফল হিসেবেই দেখছেন।
অধ্যাপক অরিন্দম চ্যাটার্জি বলছিলেন, বিষয়টা গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এনআরসি মানে বাঙালি খেদাও এমন নয়। এনআরসির প্রয়োজন আছে। এতে ভারতীয় নাগরিক, বিদেশি বা অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করা যাবে। টাকার লোভে এক সময় অনেক বিদেশিকে ভারতীয় নাগরিক বানানো হয়েছে। এটা চিহ্নিত করা যাবে। বামদের শাসনকালে রাজ্যের বিরোধী কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও একই বিষয়ে সরব হয়েছিলেন যে- বাম আমলে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ’ ঘটছে এবং তাদের বেআইনি নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিধানসভায় কম আন্দোলন করেননি মমতা। আজ কিন্তু চুপ। আমাদের মতে, এনআরসির প্রয়োজন আছে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি সচেতনদের মতে, আসামে ১৯৫০ সাল থেকে বোরো ও বাঙালির মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। সম্প্রতি আসাম গণপরিষদ দাবি করেছে, আসামে ৪০ লাখ বাঙালি আছে, ১৯ লাখ থাকার তথ্য ভুল। পাশাপাশি অসমীয়ারা এও বলছে না ওই ৪০ লাখ বাঙালি বিদেশি। বলছে অসমীয় নয়। আর এটা যদি সরকার কানে নেয়, তাহলে অসমীয়রা যেমনি বোরোল্যান্ড চাইছে, গোর্খারা যেমনি গোর্খাল্যান্ড চাইছে, বাঙালিরাও সবাই মিলে আলাদা বাংলা চাইবে। ফলে এটা নিশ্চয়ই সরকারের মাথায় আছে।
এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’র সম্পাদক ও কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমানুল হক বলেন, আসাম আর পশ্চিমবঙ্গ এক নয়। অবশ্য আসামে বাঙালিদের নিয়ে যা হচ্ছে তা দুঃখজনক। সারা ভারতেই উদ্বাস্তু এসেছে। কিন্তু কোথাও কোনো কিছু হচ্ছে না। যা হচ্ছে আসামে। একসময় অসমীয়দের থেকে দ্বিগুণ বাঙালি আসামে বাস করতো। ১৯০১ সালের আদমশুমারি দেখলে দেখা যাবে ৮ লাখ অসমীয়া ১৭ লাখ বাঙালি। আজকে সেখানে বাঙালিদের বহিরাগত বলা হচ্ছে। তাহলে ১৯০১ কীভাবে বেশি ছিল। সিলেটের একটা অংশ আসামের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়, যেটা সেসময় বাঙালিরা চায়নি। আসামের মানুষদের চাষ শিখিয়েছে বাঙালিরা। আসামে চা শিল্পের বিকাশ ঘটেছে বাঙালি ও আদিবাসীদের যৌথ প্রচেষ্টায়। এটা ভুলে গেলে চলবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৯
ভিএস/এইচএ/